ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

এখনি হারিয়ে গেছে বাড়িটির ইতিহাস

মামুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৬ অক্টোবর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এখনি হারিয়ে গেছে বাড়িটির ইতিহাস

লামা পইল জমিদারবাড়ির শেষচিহ্ন

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : বাড়ি আছে। জমিদাররা কেউ নেই। তারপরও এ বাড়িটি জমিদারবাড়ি। কিন্তু কেউ বলেন- এটি দালানবাড়ি। আবার অনেকে বলেন লামা পইল জমিদারবাড়ি।

 

কয়েক শ বছর পূর্বের ইতিহাসের কথা। আর এ ইতিহাস বলছে এখানে ছিল জমিদারবাড়ি। এ বাড়ির বয়স তিন থেকে চারশ বছর। এমনই ধারণা করা হচ্ছে। এ বাড়িতে বসবাস করে জমিদারী শুরু করেছিলেন শরৎ পোদ্দার। এখনও এ বাড়ির প্রজারা এলাকায় থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। তারা এখনও জমিদারের স্মৃতি ধরে রেখেছেন।

 

অবশ্য এ বাড়িটিকে তারা লামা পইল শরৎ পোদ্দার জমিদারবাড়ি বলে থাকেন। স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে এসব বের হয়ে এসেছে।

 

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লামা পইল দালানহাটি নামকস্থানে প্রাচীন এই ভবনটির অবস্থান। ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় এ ভবনটি ভেঙ্গে যেতে পারে। এতেই সমাপ্ত হয়ে যেতে পারে এ বাড়ি’র জমিদারী ইতিহাস। যদিও এ ভবনের চারপাশে অন্যান্যরা বসবাস করছেন।

 

ভবনের সামনে লাগানো রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ। এ গাছগুলোর জন্য দূর থেকে ভালভাবে ভবনটি দেখা কঠিন। ভবনটি মাত্র তিন শতক জমির মধ্যে রয়েছে। বাকী জমিতে নানা পেশার লোকেরা বসবাস করছেন। বর্তমানে ওই ভবনেও ছিন্নমূল লোকেরা বাস করছেন।

 

এরই মধ্যে ভবনটিতে ফাঁটল ধরেছে। ঘিরে ফেলেছে বটগাছের শিকড়। যেকোনো সময় এ ভবনটি ভেঙ্গে যেতে পারে। তারপরও এ ভবনের নিচতলায় দুইটি পরিবার বসবাস করছে।

 

ভবনে প্রবেশ করতেই এক নারীকে পাওয়া গেল। ভেতরে দিনের বেলাও অন্ধকার। এ নারীর কাছে জানতে চাওয়া হয় এ বাড়িটি কার? তিনি বললেন, ‘শুনেছি জমিদারবাড়ি ছিল। এখন তারা এখানে কেউই নেই।’ এ নারী আরো বললেন, ‘দিনেও ভবনের ভেতরটা কবরের ন্যায়। মৃত্যুর পূর্বে কবরে বসবাস করছি।’ এ সময় ভবনের পাশে বসে রান্নায় ব্যস্ত ছিলেন আর এক নারী। বললেন, ‘আমরা এ বাড়ির কিছুই বলতে পারব না। বয়স্ক লোকেরা এ ব্যাপারে বলতে পারবে।’

 

২০ বছর বয়সী এক যুবক বললেন- ‘বাবার কাছে শুনেছি এখানে জমিদারবাড়ি ছিল। এ বাড়িটিতে বর্তমানে জমিদারের কেউ থাকেনা। তাদের বংশধররা অন্যত্র বসবাস করছেন।’

 

অবশেষে জমিদারী ইতিহাস অবগত হতে পাওয়া যায় এলাকার বাসিন্দা মোঃ সিদ্দিক আলীকে। তিনি জানান- এ বাড়িতে শরৎ পোদ্দার জমিদারী পরিচালনা করতেন। এরপর প্রেমবালা পোদ্দার জমিদারী পরিচালনা করেন। এরপর জমিদারী প্রথা বাতিল হলে দেশ স্বাধীনের পূর্বে এ বাড়ির বাসিন্দারা অসহায় হয়ে পড়েন। এরপরেও এ বাড়িতে কামিনীকান্ত দেব পোদ্দার বসবাস করে মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় কেউ কেউ এ বাড়ি ছেড়ে ভারতে চলে যান। তবে এখনও জমিদারের কিছু স্বজন  হবিগঞ্জ শহর ও এ এলাকার বণিকপাড়ায় বসবাস করছেন।

 

এ ব্যাপারে বণিকপাড়ার বাসিন্দা নিপেন্দ্র চন্দ্র দেব জানালেন- কামিনী কুমার দেবের নানা বাড়ি ছিল লামা পইল জমিদার বাড়ি। এ বাড়ির জমিজমা দখল হয়ে গেছে। শুধু বাড়ির ভবনটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এটি ভেঙ্গে গেলে জমিদারী ইতিহাস সমাপ্ত হয়ে যাবে।

 

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ৪নং পইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ সাহেব আলী জানান- লামা পইল জমিদার বাড়ি ছিল, এটা সঠিক। এখানে জমিদারী স্মৃতি হিসেবে একটি ভবন রয়েছে। তবে কারা এখানে জমিদারী পরিচালনা করতেন এ বিষয়ে বলতে পারব না।

 

এ এলাকার লোকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এ বাড়ির জমিদার তার নবীগঞ্জের এক আত্মীয়ের বাড়ি নিজভবন থেকে বসে দেখার জন্য তৎকালীন সময়ে প্রচুর টাকা খরচ করে এ দালানবাড়ি নির্মাণ করেন। কিন্তু পুরো দালান সমাপ্ত হয়নি। অসমাপ্ত রেখেই জমিদার মারা যান। তারপর জমিদারী প্রথা বাতিল হয়ে গেলে এ বাড়ির বাসিন্দা অসহায় হয়ে পড়েন। এক সময় বাড়ি মানুষ শূণ্য হয়ে যায়। ভবনটি হয়ে পড়ে পরিত্যক্ত।

 

 

রাইজিংবিডি/ হবিগঞ্জ/৬ অক্টোবর ২০১৬/মামুন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ