ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কবিকুলগুরু কালিদাস

হাবিবুর রহমান স্বপন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ৫ মে ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কবিকুলগুরু কালিদাস

শিল্পীর তুলিতে আঁকা শকুন্তলা ও রাজা দুষ্মন্ত

হাবিবুর রহমান স্বপন : ধ্রুপদী সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের যে বীণাযন্ত্রে সূক্ষ্মতম ও স্বর্গীয়তম ঝংকার প্রাচীন ভারতে অনুরণিত হয়েছিল সেই স্বর্ণবীণা হলেন মহাকবি কালিদাস। উপমা প্রয়োগে কালিদাসের সমকক্ষ কবি নেই। একদিকে মানুষের পুঁথিশালা, অন্যদিকে প্রকৃতির চিত্রশালা- দুইয়ের ওপরই তার সমান দখল ছিল। তাইতো তিনি ‘কবিকুলগুরু’।

সমগ্র প্রাচ্যদেশ তথা পৃথিবী সংস্কৃত সাহিত্যের কাছে ঋণী। সেই সংস্কৃত সাহিত্য মহাকবি কালিদাস অমরাবতীর অমৃত দ্বারা প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। যে কারণে সাহিত্য বা ভাষা ধ্বনি আর আক্ষরিক পর্যায়ে সীমিত রইল না। সুললিত সুর ঝংকারে কাব্যবীণা অনুপ্রাণিত করল। সেই সুরধ্বনি, সেই সুললিত কাব্য দ্বারা সে যুগের সংস্কৃত সাহিত্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল।

তাত্ত্বিকদের ধারণা কালিদাসের কাল দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বা বিক্রমাদিত্যের রাজত্ব কালে (৩৫০-৩৭৫ খ্রিস্টাব্দ)। এ সময়ে ভারতে যে সমৃদ্ধ বিচিত্রমুখী সংস্কৃতি দেখা দিয়েছিল, তারই মহত্তম প্রতিনিধি এই কবি। কবি ও নাট্যকার উভয় রূপেই তিনি স্থায়ী আসন অধিকার করে আছেন। কালিদাসের সময়কাল বা তার জন্মকাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এ কারণেই  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন :
‘হায় রে কবে কেটে গেছে
কালিদাসের কাল
পণ্ডিতেরা বিবাদ করে
লয়ে তারিখ-সাল।’

‘ঋতুসংহার’ কবির প্রস্তুতি পর্বের কাব্য। প্রথম দিকের অপরিণত বয়সের রচনা হলেও রচনাভঙ্গির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের অঙ্কুর তাতে সুস্পষ্ট। আবেগের ফল্গুধারায় সেখানে ষড়ঋতুর বর্ণনা সরস হয়ে উঠেছে। ‘কুমার সম্ভব’ ও ‘রঘুবংশ’এই দুই মহাকাব্যের মধ্যে ‘রঘুবংশ’ পরিণততর। প্রখ্যাত রঘুকুল প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত নিয়ে এই কাব্যের সূচনা। এই কাব্যে নায়ক নেই। রঘুর রাজবংশই মহাকবি কালিদাস কল্পিত ‘রঘুবংশ’ কাব্যের নায়ক। এক বিমূর্ত ভাবনাকে নায়ক রূপে রূপায়িত করে কালিদাস অসাধারণ শিল্পদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। কাব্যটি যেন বিভিন্ন রসের বিবিধ তীর্থ পরিক্রমা করে সমস্ত আবেগের পরিসমাপ্তিতে শান্তরসের সঙ্গমে উপনীত হয়েছে।

‘রঘুবংশ’ কাব্যের পটভূমি ব্যাপক ও বিস্তৃততম। বীর থেকে কামাচারী, দায়িত্ববোধহীন, স্বার্থপর, গৌণ নানা চরিত্রের সমাহার এই কাব্যে। ঘটনা বৈচিত্র্যও লক্ষ করার মতো। তপস্যা, বিবাহ, প্রণয়, বিচ্ছেদ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ঘটনা, মানব প্রকৃতির বিচিত্র অভিব্যক্তি, নিসর্গ বর্ণনা, সমাজের জটিল ভূমিকা সবকিছুর শিল্পনিপুণ সমাবেশে ‘রঘুবংশ’ অনুপম কাব্য হয়ে উঠেছে। কালিদাসের পূর্বে বা পরবর্তীকালে এই ধরনের কাব্য সংস্কৃত সাহিত্যে দেখা যায় না। এটি কালিদাসের পরিণত শিল্পী মনের অপরূপ সৃষ্টি।

তবে কালিদাসের কবি-প্রতিভার চূড়ান্ত নিদর্শন ‘মেঘদূত’। রামগিরি থেকে হিমালয় পর্যন্ত প্রাচীন ভারতের এক খণ্ড কিন্তু অনন্য চিত্রে সমুজ্জল এই ক্ষুদ্র গীতিকাব্য। কেতকীবেষ্টিত উপবন, পাখিদের নীড়, গ্রামচৈত্য, উজ্জয়িনী, অবন্তী, বিদিশা প্রভৃতি নগর, বিন্ধ্যা, কৈলাস, দেবগিরি প্রভৃতি পর্বত এবং রেবা, শিপ্রা, বেত্রবতী ইত্যাদি নদী, সুপ্ত নগরসৌধ, পরিত্যক্ত রাজপথ, হর্ম্যবাতায়ন থেকে ভেসে আসা পুরবধূদের কেশ সংস্কার ধূপের ঘ্রাণ- সব মিলিয়ে অতীত, অবলুপ্ত ভারতের এক সজীব চিত্র মেঘদূত কাব্যে চিরবিধৃত। বহিরঙ্গ পরিচয় এই কাব্যের শেষ কথা নয়। এই কাব্যে ধ্বনিত হয়েছে সর্বকালের মানুষের অতলস্পর্শ বিরহ। এক অর্থে প্রতিটি মানুষই নির্বাসিত, বিরহী যক্ষ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কাব্যের মূল্যায়ন করতে গিয়ে লিখেছেন : ‘উৎসবে যে মাটির প্রদীপের সুন্দর দীপমালা রচনা হয় পরদিন তাহা কেহ তুলিয়া রাখে না। ভারতবর্ষে আনন্দ-উৎসবে নিশ্চয়ই এমন অনেক মাটির প্রদীপ, অনেক ক্ষণিক সাহিত্য নিশীথে আপন কর্ম সমাপন করিয়া প্রত্যুষে বিস্মৃতিলোক লাভ করিয়াছে। কিন্তু প্রথম তৈজস প্রদীপ এখনো আমাদের ঘরে রহিয়া গেছে। আমাদের উজ্জয়িনীবাসী পিতামহের প্রসাদশিখরে তাহা প্রথম জ্বলিয়া ছিল, এখনো তাহাতে কলঙ্ক পড়ে নাই।’

‘মেঘদূত’স্বরবৈচিত্র্য, ধ্বনি গাম্ভীর্য, অতুলনীয় চিত্রকল্পের সমাবেশে এক অনন্য বর্ষাকাব্য। মন্দাক্রান্তা ছন্দে রচিত এর প্রত্যেকটি শ্লোক আপনাতে আপনি সমাপ্ত। প্রতিটি শ্লোক স্বতন্ত্র হীরক

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়