চোখ ভরা সরিষা ফুল
এএম || রাইজিংবিডি.কম
সরিষা ফুল
ডেস্ক রিপোর্ট
ঢাকা, ২০ জানুয়ারি: প্রকৃতিতে যেন বসন্ত লেগেছে। অথচ এখন শীতকাল, মাঘের ভরা শীত। ধুলা আর কুয়াশায় ধূসর প্রান্তর। তাও দূর থেকে হলুদ আভার আহ্বান। চারদিকে হলুদের সমাহার। এ যেন রূপকথার রাজকুমারীর গায়ে হলুদ। সবাই কনেকে হলুদ দিতে এসেছেন। এসেছে প্রজাপতি, মৌমাছি, হলুদিয়া-নীলরঙা পাখি, পোকামাকড় থেকে শুরু করে রাজ্যের প্রজারা।
সবাই যেন হুমড়ে পড়ছে হলুদের ওপর। এখানে একটু রঙ পাওয়া যাচ্ছে। রোদ চড়লে হলদুও যেন জ্বলে উঠছে। তার সেকি ঝাঁজালো ঘ্রাণ। শীতের বাতাসে ঘ্রাণও তেমন পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ ফুলে এ সময় গন্ধ থাকে না সরিষা ব্যতিরেকে। এ ঝাঁজ যেন বুকে ধাক্কা মারে। বিজ্ঞানীরা একে বায়ু বিশুদ্ধকরণ ঘ্রাণ বলে বিবেচনা করেন।
ফুসফুসের উপকার সাধিত হয় সরিষা ফুলের ঘ্রাণে। তাই শীতে বসে না থেকে প্রান্তরের হলুদে মিশে যান একদিন। সেখানে সবাই ব্যস্ত। কেউ কারো দিকে তাকানোর সময় নাই। কৃষকরা ব্যস্ত সরিষা তুলতে, ভ্রমর মধু খুঁজে ফিরছে ফুলে ফুলে।
দেখবেন নানা রঙের প্রজাপতিতে ভরে আছে সরিষা ক্ষেত। রঙ-বেরঙের প্রজাপতি ডানা ঝাপটানো চিত্তে জাগাবে নবতর আনন্দ। কোথাও ঝলক দিয়ে উঠছে কালো ডানায় হলুদ-লালের মিশ্রণ, নীল, সবুজ, লাল-নীলের ডোরাকাটা বিভিন্ন রঙের প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে। প্রজাপতিরা এখানে আসে বিশ্রাম নিতে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সরিষার ঝাঁজে তাদেরও উপকার মেলে। অনেক দূর উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়ানোর পর সরিষার মাদকতা তাদের আকৃষ্ট করে।
এসে জিরিয়ে নেয় খানিকটা কোনো ফুলের অথবা পাতার গোড়ায়। আর সেখানেই ঘটে বিপত্তি। প্রজাপতি খাদকরা এর মধ্যেই হাজির হয়ে গেছে আশপাশে। ঘাপটি মেরে আছে কখন ঠোকর মেরে তুলে নিয়ে যাবে রঙিন ডানার প্রজাপতি। ফিঙে, শালিক- এমন অনেক শিকারি পাখির জন্যও যেন উত্সব। অঢেল প্রজাপতি আজ তাদের খাবার হিসেবে উড়ে বেড়াচ্ছে নাগালের মধ্যেই।
শুধু প্রজাপতি কেন আরো অনেক নাম না জানা পোকার বসত সরিষা ক্ষেতজুড়ে। আশ্চর্য সব পোকামাকড়ের দেখা মিলবে। কোনটা হলুদ, কোনটা লাল। পিঁপড়ারাও দলবেঁধে সরিষা ক্ষেতে ফুল তুলতে এসে হাজির। এ যেন এক ঈশপের গল্প। এ সময় ফুল ও ভ্রমরের রূপকথার সন্ধানে হেঁটে বেড়াতে পারেন সরিষা ক্ষেতের আইল ধরে; প্রকৃতির জীবনের অনেক গোপন মুহূর্তের সন্ধান পেয়ে যাবেন হয়তো।
শীতে শুকিয়ে আসা খাল-বিল, কলমি ফুল, ঘুটে ফুল, সবজি থেকে ঝিঙে, লাউ-কুমড়ার হাসি নজর এড়াবে না এ সময়। পাখিদের উত্পাত, ভাঙা মাটির কলসি দিয়ে বানানো কাকতাড়ুয়া জমিয়ে তুলবে আপনার ভ্রমণ। এক একটি নীলকণ্ঠ, ফিঙে, পানকৌড়ি শীতের সৌন্দর্যের সঙ্গে মিশে আপনাকে করবে উত্ফুল্ল।
সরিষা ক্ষেতের মাঝে দাঁড়ালে তার ঘ্রাণ আপনাকে মুগ্ধ করে দিবে আর দিনের বেলায় সরিষা ক্ষেতে প্রচুর অক্সিজেন থাকে। মিষ্টি গন্ধ ভুলিয়ে দিবে শহুরে জীবনযাপনের বিরক্তি।
রাইজিংবিডি / এএম
রাইজিংবিডি.কম