তারুণ্যের ভাবনায় বিজয় দিবস
কাওছার আলী || রাইজিংবিডি.কম
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। এ উপলক্ষে প্রতি বছর বাংলাদেশে ১৬ ডিসেম্বর দিনটি ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়। বিজয় দিবস নিয়ে তরুণদের ভাবনা তুলে ধরেছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সংবাদদাতা কাওছার আলী।
বিজয় আমাদের গর্বের
- হাসনাত নাঈম পিয়াস, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
বিজয় মানে আমাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মরণিকা! বিজয়ের কথা ভাবতে গেলেই শুরুতেই আসে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। যিনি এই বাঙালি জাতির মুক্তির অন্বেষণে নেতৃত্ব ও প্রেষণা দিয়ে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশ ভূখণ্ড গড়ে দিয়েছিলেন এবং সবুজের মাঝে লাল রক্তবৃত্তের পতাকার স্বীকৃতি এনে দিয়েছিলেন। শহিদদের স্মরণে বাঙালি জাতির মুক্তির নিশানা হিসেবে এই লাল সবুজে খচিত পতাকা আমরা মুক্তির নিশানা হিসাবে আজও ব্যবহার করে যাচ্ছি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট হিসেবে অনন্তকাল করে যাবে।
আজ এই আধুনিক সময়ে এসে বাঙালি জাতির ইতিহাস আরো সুপ্রশস্ত হয়েছে, বাঙালি জাতি বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াবার সাহস ও সুযোগ পাচ্ছে। বাঙালি জাতির এক অন্যতম সম্মান বহন করে আমাদের লাল সবুজে অঙ্কিত পতাকা। বিজয় দিবস আমরা উদযাপন করি নাচে, গানে, সংস্কৃতি ও শহিদদের স্মরণে। বিজয়ের উল্লাসের পরেই আমরা মাঝেমাঝে দেখতে পাই আমাদের বিজয়ের পতাকা এখানে সেখানে রাস্তায় বা মাঠে অসম্মানে অবহেলায় পড়ে থাকে। পতাকার প্রতি আমাদের সম্মান বাড়াতে হবে, পতাকাকে অবহেলিত না করে সবাই মিলে চলুন পতাকার সম্মান আরো উচ্চ আসীনে নিয়ে যাই।
বিজয় দিবসে আমার ভাবনা হলো, বিজয়কে আমরা গর্বের সঙ্গে শ্রদ্ধা করি এবং বিজয়োল্লাস করি। আমাদের পতাকাকেও উচ্চ মর্যাদা দান করি।
বিজয়ের নিশানা উড়িয়ে, শুভেচ্ছা জানাই বাংলাদেশ তোমাকে
- ইসরাত জাহান ইভা, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
‘সব দরজা ভেঙে, আমি আসবো ছুটে
সোনার বাংলাদেশ, তোমায় বিজয়ের গান শুনাতে।’
অনেক যুদ্ধ অনেক সংগ্রামের দ্বারা অর্জিত বাঙালি জাতির মুক্তির স্বীকৃতি আমাদের আজকের ‘বিজয় দিবস’। বিজয়ের একেকটি দিন পেরিয়ে ৫২ বছরে পদার্পণ করলো আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অনেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পুরো পৃথিবীর বুকে একখণ্ড স্বাধীন দেশ হিসেবে পরিচিত আমাদের এই বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন শোষণ, নির্যাতন, দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং ৩০ লাখ শহিদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা। প্রতিবছরই এই দিনটি বাঙালিরা শ্রদ্ধাভরে শহিদদের স্মরণ করে নতুন করে বিজয়ের ধ্বনি উচ্চারণ করে। বিজয়ের এই উদযাপনে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত করে তোলে। ৩০ লাখ মানুষ নিজেদের বিসর্জন দিয়ে আমাদের এই স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়ে গিয়েছেন। আদৌ কী আমরা তা রক্ষা করতে পারছি। অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নানা ধরনের অনৈতিক কাজ, রাজনৈতিক সমস্যায় এ দেশের মানুষ জর্জরিত। হাজারো ছেলে-মেয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে নেই কোনো শিক্ষার ব্যবস্থা, ফুটপাতের মানুষগুলো দিনের পর দিন না খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছে, নেই কোনো সাহায্যের ব্যবস্থা, যা কোনোভাবেই একটি স্বাধীন দেশের কাম্য হতে পারে না। সুতরাং সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব দুর্নীতি মুক্ত করে নতুন করে দেশকে স্বাধীনরূপে পরিণত করতে হবে।
আমরা কি বিজয়ী হয়েছি?
- আসাদুল আল গালিফ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা,
তোমাকে পাওয়ার জন্য
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে এক থুত্থুরে বুডো
উদাস দাওয়ায় ব’সে আছেন – তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের দুর্বল আলোর ঝিলিক!
আমরা কী আসলেই স্বাধীন হয়েছি, এমন প্রশ্ন আমার মনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল স্যারের মতো মানুষ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের কারণে রাস্তায় একদল শকুনের দ্বারা আক্রমণের শিকার হচ্ছে। তাহলে স্বাধারণ মানুষের অবস্থা কেমন কোণঠাসা। স্থানীয় পর্যায়ের দিকে চোখ দিলে দেখা যায় সাধারণ মানুষ কেমন মেরুদণ্ডহীন জীবন অতিবাহিত করছে। চারদিকের শকুনদের ছোবলে আজ জাতি কারাবদ্ধ। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ আজও অবৈধভাবে উৎখাত। এক হিংস্র জনগোষ্ঠীর ছোবলে সকলে গুটিয়ে মেরুদণ্ডহীন এর ন্যায় চলছি। নিকষা এই আঁধারে জেগে উঠে হাতিয়ার বর্জ্য কন্ঠ তোলার আর সেই মহাকবি আমাদের মাঝে নেই। তবে কী বাংলার মাটি থেকে এদের উৎখাত হবে না করা যাবে না আর। চারদিকে লোভ লালসা, ভয়ের জোয়ার। মানুষের মাঝে দেশপ্রেম, স্বাধীনতার সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যায় না।
১৬ ডিসেম্বর তুমি আমাদের বাঙালি জাতির জন্য অহংকার ও গৌরব । তুমি লাখ-কোটি জনতার বিজয় উল্লাস। তোমায় ভালোবাসি।
ভালোবাসার সেই মা, ভাই-বোন, যাদের ভালোবাসাই ছিল লাল-সবুজের প্রতি; যারা অন্ধকার দূর করে প্রিয় দেশকে সবুজের মধ্যে এনেছিল।
যারা স্বপ্ন দেখেছিল বিজয়ের, বাঁচার আশ্বাস যুগিয়েছিল। আমি দ্বীপ্ত কন্ঠে তাহাদের সাহসিকতার, তাদের বিজয়ের গান গাই। আবারও সকল বাধা অতিক্রম করে অন্ধকার পেরিয়ে বিজয় আসুক বাংলার বুকে এই আমার প্রত্যাশা। স্বাধীনতার অর্থ বুঝে কাজ করতে সবাইকে আহবান জানাই।
বিজয় দিবস আমাদের আত্মমর্যাদার ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক
- নুসরাত জাহান, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
বিজয় শব্দের অর্থ সম্পূর্ণরূপে জয় অথাৎ পূর্ণ অধিকার। আর বিজয় দিবস মানেই সেই দিবস, যে দিনটিতে আমরা পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তি ছিনিয়ে এনেছি পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে। আর তা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এই জন্য এই দিনটি আমাদের কাছে এতো গুরুত্বপূর্ণ দিন।
এই দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর এই দিনে অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় বিজয়। এই দিনে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। বিজয় দিবস স্বাধীনতাকামী বাঙালির পবিত্র চেতনার ধারক। বাঙালির হাজার বছরের সভ্যতা এবং সংস্কৃতির ইতিহাসে দ্যুতিময় এ মহান বিজয় দিবস চিরদিন সমুজ্জ্বলভাবে টিকে থাকবে। প্রতিবছর এ দিবসে আমরা আত্মসচেতন হই, অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করি- রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এ স্বাধীনতাকে আমরা যেকোনো মূল্যে সমুন্নত রাখব। তাই বিজয় দিবস আমাদের আত্মমর্যাদার ও আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক।
কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের দেশ বাংলাদেশ
মো. জনি শিকদার, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
যেকোনো বিজয় সব সময় আনন্দের হয়। কিন্তু আমাদের বিজয়ের পেছনে ছিল বাঙালি জাতির সর্ববৃহৎ আত্মত্যাগের ইতিহাস। ১৯৭১ সালে যারা আমাদের দেশকে স্বাধীন বা বিজয়ের জন্য আত্মত্যাগ এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করছি। স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। যা থেকে তরুণ প্রজন্ম ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং বিজয়ের জন্য অনুপ্রাণিত হয়। কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। বিজয় দিবসে স্বাধীনতার চেতনায় নতুন প্রজন্মের ভাবনা- বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। ধনী-গরীব ভেদাভেদ এবং শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে স্বাধীনতার গুরুত্ব উপলব্ধি করে দেশের কল্যাণে কাজ করতে তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে বিজয় দিবস। বিজয়ের ৫১ বছরে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উল্লাস ছড়িয়ে পড়ুক প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে।
স্বাধীনতার ৫১টি বছর
- যারিন জাসিয়া ঐশী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
মানুষ জন্ম থেকেই স্বাধীনতা প্রিয়। পরাধীনতার শেকলে সে নিজেকে বদ্ধ রাখতে চায় না। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামও চলেছে দীর্ঘ সময় ধরে। যার অবসান ঘটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিপক্ষে নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে। ৩০ লাখ শহিদের রক্ত ও অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের বুকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
আজ ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের ৫১টি বছর পার করলো এই দেশ, এই জাতি। এই ৫১ বছরে প্রাপ্তির তালিকা যেমন একেবারেই ছোট নয়, তেমনি অপ্রাপ্তি ও অসাফল্যের তালিকাও একদমই কম নয়। বছর ঘুরে ক্যালেন্ডারের পাতায় দিনটি বারবার ফিরে আসুক। বিজয়ের ঝুলিতে আরো সাফল্য এসে ধরা দিক, গৌরবময় করে তুলুক এই দিনটিকে। চিরঞ্জীবী হোক আমাদের সোনার জন্মভূমি।
/ফিরোজ/