ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি বন্দি চট্টগ্রাম কারাগারে

রেজাউল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি বন্দি চট্টগ্রাম কারাগারে

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার (ছবি : রেজাউল করিম)

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে প্রতিদিন গ্রেফতার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। আর এসব মানুষ আদালত হয়ে প্রবেশ করছে চট্টগ্রাম কারগারে। যে হারে প্রতিদিন কারাগারে বন্দি বাড়ছে সেই হারে জামিন মিলছে না। ফলে কারাগারে প্রতিদিন বাড়ছে বন্দির সংখ্যা।


জেল কর্তৃপক্ষের হিসেবে চট্টগ্রামের লালদিঘীর পাড়ে অবস্থিত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দির সংখ্যা ধারন ক্ষমতার প্রায় তিনগুন বেশি। জেল কর্তৃপক্ষ স্বীকার না করলেও সদ্য জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে আসা অনেক হাজতি আসামি বলেছেন জেলখানায় বন্দিদের মানবেতর জীবনের কথা। জেল খানায় উপচে পড়ছে বন্দি আসামিতে। ইলিশ ফাইলে ১০ জন বন্দির কক্ষে ঘুমাতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ জন বন্দিকে।


১ হাজার ৮৫৩ জন বন্দি ধারন ক্ষমতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে বন্দির সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার বলে কারাগার সূত্র জানিয়েছে।

 

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, কারাগারে ছয়টি পাঁচতলা ভবনের ১২০ ওয়ার্ডে বর্তমানে বন্দির সংখ্যা ৫ হাজার ৮৪০ জন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ৮৮২ জন হাজতি ও প্রায় এক হাজারের মতো সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি রয়েছে। কারাগারে বন্দি পুরুষদের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত আসামি রয়েছে ৯০০ জন। এর মধ্যে সশ্রম কারাভোগ করছেন ৬০১ জন এবং বিনাশ্রম কারাভোগ করছেন ২৯৯ জন। আর নারী বন্দিদের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত রয়েছেন ৪৩ জন।


যার মধ্যে সশ্রম কারাভোগে আছেন ১৭ জন এবং বিনাশ্রম কারাভোগ করছেন ২৬ জন। বন্দিদের মধ্যে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামি রয়েছে ৪৫ জন। এর মধ্যে ৪৩ জন পুরুষ ও ২ জন নারী । এ ছাড়া কারাগারে মহিলা বন্দি রয়েছে ২৬২ জন। মায়ের সঙ্গে হাজতবাস করছে ৪৩ জন শিশু। যার মধ্যে ২৯ জন ছেলে এবং ৩২ জন মেয়ে। আর কিশোর অপরাধী ২০ জন। বন্দিদের মধ্যে প্রায় ৮ শতাধিক ছাত্রও রয়েছে। যাদের অধিকাংশই মাদক আইনে আটক রয়েছে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।


চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিপুটি জেলার আবদুস সেলিম জানান, কারগারে বন্দির স্বাভাবিক ধারন ক্ষমতা ১ হাজার ৮৫৩ জন। গত এক ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে মোট বন্দির সংখ্যা ছিল প্রায় ৬ হাজার। আর এসব বন্দি ব্যবস্থাপনার জন্য কারাগারে লোকবল রয়েছে ৩৪৩ জন। ধারন ক্ষমতার তিনগুন বেশি বন্দি থাকার কথা স্বীকার করলেও জেল কর্তৃপক্ষ বলেছে এতে বন্দিদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।


ডিপুটি জেলার আবদুস সেলিম বলেন, জেলকোড অনুযায়ী প্রতিজন বন্দির জন্য দৈর্ঘ্য আর প্রস্থে ছয় ফুট করে জায়গা বরাদ্দ রয়েছে। আর একজন কারাবন্দির জন্য এত বিশাল জায়গার সত্যিই প্রয়োজন পড়ে না। তাছাড়া কারাগারের ভবনগুলোতে পর্যাপ্ত করিডোর ও কক্ষগুলো বড় পরিসরের হওয়ায় ১০ জনের জায়গায় পনের জন করে বন্দি থাকতে বন্দিদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না।

 

এদিকে জেল থেকে জামিনে বের হয়ে আসা কয়েকজন হাজতি আসামি নাম প্রকাশ না করে রাইজিংবিডিকে বলেছেন জেল খানার ভেতরে বন্দিরা অত্যন্ত মানবেতর অবস্থায় রয়েছে। ১০ জনের কক্ষে ৫০ জনের বেশি বন্দি রাখা হয়েছে। টাকা দিলে মিলছে ঘুমানোর জায়গা। আর টাকা না দিলে রাতে ঘুমাতেও পারে না বন্দিরা।


জেলখানায় ইলিশ ফাইল খ্যাত (এক পাশ হয়ে একজনের শরীরের সঙ্গে অপরজনের শরীর লাগিয়ে ঘুমানো) বিশেষ পন্থা প্রতিরাতে ঘুমাতে হচ্ছে শত শত বন্দিকে। মিলছে না পর্যাপ্ত গোসলের পানি। মিলছে না পর্যাপ্ত খাবার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা আর সহিংসতার ফলে পুলিশের চলমান বিশেষ অভিযানে চট্টগ্রাম মহানগর ও ১৪ টি উপজেলা থেকে অসংখ্য মানুষ গ্রেফতার হচ্ছে। প্রতিদিন কারাগারে বন্দির সংখ্যা বাড়তে থাকায় বন্দিদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধাও কমছে ক্রমাগত।

লোকবল সঙ্কটের কারণে বন্দি ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খেতে হয় কারা কর্তৃপক্ষকে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে বন্দির সংখ্যা ক্রমাগত বাড়লে এখন পর্যন্ত কারা ব্যবস্থাপনায় কোন অসুবিধা হচ্ছে না। কারাগারে বন্দিরা জেল কোড অনুযায়ী প্রাপ্য সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।

 

 


রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫/রেজাউল/রণজিৎ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়