ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকেএসপির সুমন হয়ে ওঠার গল্প

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫১, ২৫ অক্টোবর ২০২০  
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকেএসপির সুমন হয়ে ওঠার গল্প

ওস্তাদের মার শেষ রাতে! সুমন খান বুঝি তেমন ধারণাই দিলেন বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ ফাইনালে! আগের চার ম্যাচে দুটিতে সুযোগ পেয়েছিলেন। উইকেট পেয়েছেন মোটে পাঁচটি। 

ফাইনালে হাতে উঠলো নতুন বল। তাতেই জ্বলে উঠলেন। প্রথম দুই স্পেলে ৬ ওভারে ৩ উইকেট। পরবর্তীতে ফিরে পকেটে আরও ২টি। সব মিলিয়ে ৩৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ফাইনালের সব আলো নিজের ওপর কেড়ে নিলেন মাহমুদউল্লাহ একাদশের পেসার। 

অথচ তার টুর্নামেন্টে খেলা ছিল অনিশ্চয়তার মধ্যে। ৪৫ জনের প্রাথমিক দলে তার জায়গা হয়নি। ছিলেন নাজমুল একাদশের রিজার্ভ বেঞ্চে। মাহমুদউল্লাহ একাদশের দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ইনজুরিতে পড়ায় তাকে মাহমুদউল্লাহ একাদশে সুযোগ দেন নির্বাচকরা। তাতেই বাজিমাত। 

২১ এ পা দেওয়ার অপেক্ষায় থাকা সুমন দুই বছর ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ডেভেলপমেন্টের অধীনে রয়েছেন। ভবিষ্যতের জন্য তাকে করা হচ্ছে পরিচর্যা। তবে তার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে বিরল এক গল্প। রাইজিংবিডি জানাচ্ছে সেই গল্প- 

যেভাবে শুরু ক্রিকেটে পথচলা

পাড়া-মহল্লায় ক্রিকেট খেলা হয়নি সুমনের। ভালো ছাত্র ছিলেন, সেজন্য বাবা-মা সব সময় স্বপ্ন দেখতেন ‘ছেলে বড় হয়ে বড় চাকরি করবে’। ক্রিকেট খেলার সুপ্ত বাসনা সুমনের শেষ হয়ে যায় শৈশবেই। কিন্তু ২০১৬ সালে হঠাৎ টনক নড়ে মানিকগঞ্জের তরুণের। পেসার হান্টের বিজ্ঞাপন দেখে প্রতিযোগিতায় নাম লেখান। দ্রুত গতিতে বল ছুঁড়ে নজর কেড়েছিলেন। টিকে যান সেরা ২০ জনে। কিন্তু বিপ টেস্টে মাত্র ৮ তুলে বাদ পড়ে যান। সেখানে শেষ হয় প্রথম লড়াই। 

নর্থ সাউথ থেকে বিকেএসপি

বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করতে ২০১৬ সালে দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন সুমন। চার সেমিস্টার কাটিয়ে দেন খুব সহজেই। কিন্তু এ সময়ে টুকটাক ক্রিকেট খেলা ও অনুশীলন শুরু করেন। পরিচিত একজনের থেকে বুদ্ধি পান, ‘বিকেএসপিতে খেলাধুলার পাশাপাশি ডিগ্রিতে পড়া যাবে।’ শুরু হলো পরিবারকে মানানো। বাবা সুলতান আলী খান চ্যালেঞ্জ দেন তিন বছরের। সুমন মাথা পেতে নেন সেই চ্যালেঞ্জ। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে সুমন ভর্তি হন বিকেএসপির ডিগ্রিতে। এরপর শুরু তার পথচলা। 

বিকেএসপিতে প্রথম সুযোগেই বাজিমাত

নতুন মিশন, জীবনের নতুন মোড়। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেট। ডিগ্রিতে প্রথম বর্ষ চলাকালে সুমন সুযোগ পেয়ে যান প্রথম বিভাগে খেলার। প্রথম সুযোগেই বাজিমাত। দলকে রানার্সআপ করে ৮ বছর পর তুলে নেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। সেখানে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন ডানহাতি পেসার। পরবর্তীতে ঢাকা লিগেও সুমন দ্যুতি ছড়ান। বড়দের ক্রিকেটে ১০ ম্যাচে তুলে নেন ১৫ ক্রিকেট। ব্যস, বড় মঞ্চে জাতীয় নির্বাচকদের সামনে পারফর্ম করে সুমন বিসিবির রাডারে। 

কিন্তু গল্প আছে আরও একটি 

২০১৮ সালে বিকেএসপির হয়ে প্রথম বিভাগে খেলা অবস্থায় তাকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সুযোগ করে দেন শহরের বড় ভাই নাদিফ চৌধুরী। জাতীয় দলের হয়ে ৩টি-টোয়েন্টি খেলা নাদীফ তখন ঢাকা বিভাগের অধিনায়ক। একই জেলার ছোট ভাইকে ডেকে নেন মিরপুরের একাডেমিতে। সুযোগ করে দেন নেটে বোলিংয়ের। সেখানে সুমন বিসিবির ডেভেলাপমেন্ট কোচ ওয়াহিদুল গণির নজর কাড়েন। তার ও নাদিফের সুপারিশে জাতীয় নির্বাচকরা সুমনকে প্রাথমিক ২০ জনের স্কোয়াডে সুযোগ করে দেন। অভিষেক ইনিংসে শামসুর রহমান, মোহাম্মদ আশরাফুল ও আরাফাত সানির উইকেট। সেই ধারাবাহিকতা চলছে এখনও। ৮ ম্যাচে ২৬.৮৮ গড়ে ২৫ উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট ১৯ ম্যাচে তার শিকার ৩২ উইকেট। 

এরপর....

প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ভালো করে বিসিবির রাডারে দ্রুত চলে আসেন সুমন। তাকে যুক্ত করা হয় হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) স্কোয়াডে। সেখানে নিয়মিত অনুশীলন, পরিচর্যা করা হয় প্রতিশ্রুতিশীল পেসারকে। বিসিবির অধীনে ইমার্জিং দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে। যেখানে লাল-সবুজকে নেতৃত্ব দিয়ে সুমনের গলায় ওঠে স্বর্ণপদক। ধারাবাহিক সাফল্যে খেলার সুযোগ পান বঙ্গবন্ধু বিপিএলে। সেখানে বড় কোনও চমক দেখাতে না পারলেও নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন। 

‘প্রথম’ অধিনায়কের বার্তা

সুমনকে নিয়ে নাদীফ বলেছেন- ‘শুরু থেকে মনে হচ্ছিল ওর মধ্যে কিছু একটা কাছে। নেটে দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম ওকে আমরা ঢাকা বিভাগে নেবো। প্রথম ম্যাচে সুযোগ দিয়েছিলাম। উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু ভেতরে ভালো করার তাড়না ছিল। এরপর থেকে আমাদের দলেই আছে।’

‘আমার কাছে মনে হচ্ছে সুমন দীর্ঘদিনের ঘোড়া। অনেক দূর যেতে পারবে। হ্যাঁ, এখনই বড় প্রত্যাশা করা ভুল হবে। ওকে তৈরি করতে হবে। নিয়মানুবর্তিতা, স্বচ্ছতা যদি ঠিক থাকে তাহলে লম্বা সময়ের জন্য খেলতে পারবে। এখন বয়স কম। আরেকটু গতি বাড়াতে পারলে আরও ভালো হবে। লাইন ও লেন্থ ঠিক আছে। কঠোর পরিশ্রমীও। শতভাগ নিবেদন নিয়ে এগিয়ে গেলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য সম্পদ হতে পারবে।’- আশাবাদী নাদীফ।

ঢাকা/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়