ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘ফিল্ড ওয়ার্কে শেখার অনুভূতি ছিল অন্যরকম’ 

রুবাইয়াদ ইসলাম, হাবিপ্রবি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ৫ এপ্রিল ২০২২  
‘ফিল্ড ওয়ার্কে শেখার অনুভূতি ছিল অন্যরকম’ 

ফিল্ড ওয়ার্কের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে লেখাপড়া করার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। গত ২৫ মার্চ তেমনই এক ফিল্ড ওয়ার্কে অংশ নেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। 

ফিল্ড ওয়ার্কে যাওয়ার জন্য বাসের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল সকাল ৮টা ৩০মিনিটে। নির্ধারিত সময়সহ ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ (সিআর) আগের দিনই রিমাইন্ডার হিসেবে জানিয়ে দিলেন, ফিল্ড ওয়ার্কে আমাদের যাওয়ার জন্য নির্ধারিত স্থান, ড্রেসকোড কেমন হবে, সঙ্গে খাতা, কলম, পানির বোতল, বমির ওষুধসহ প্রাসঙ্গিক বেশ কিছু বিষয়। সবাই বেশ আগ্রহ উদ্দীপনা নিয়ে সকালবেলায় চলে আসছিল ফিল্ড ওয়ার্কে যাওয়ার জন্য। তারপর সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করে বাস ছাড়ে প্রায় ৩০ মিনিট দেরিতে। করোনার দীর্ঘ সময় বন্ধের কারণে আমাদের সশরীরে ক্লাস, কোথাও ট্যুর বা বনভোজনে একসাথে যাওয়া হয়নি। তাই দীর্ঘসময় পর বিভাগের তিনটি ব্যাচ একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ফিল্ড ওয়ার্কে যাওয়ার অনুভূতিটাই ছিল অন্যরকম। 

আরো পড়ুন:

প্রথমবারের মতো সবাই ফিল্ড ওয়ার্কে যাচ্ছি ‌‘রুরাল সোসাইটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও মাইনোরিটিজ অ্যান্ড ইন্ডিজেনাস সোসাইটি’ কোর্সের অংশ হিসেবে। আমাদের সঙ্গে ছিলেন কোর্স টিচার বিভাগের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদ পলাশ স্যার এবং তামান্না ম্যাম। প্রিয় শিক্ষকদের পেয়ে আমরা সবাই ছিলাম বেশ উচ্ছ্বসিত এবং আনন্দিত।

আমাদের ফিল্ড ওয়ার্কের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছিল ঠাকুরগাঁওয়ের ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এবং গ্রামীণ সমাজের পরিবারের প্রকৃত চিত্র দেখা। সেখানে গিয়ে পৌঁছলাম সকাল ১০টার দিকে। উপস্থিত ইএসডিওর সদস্যরা আমাদের স্বাগত জানালেন এবং তাদের প্রতিনিধিরা আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। স্যার আমাদের তিনটি ব্যাচকে ছয়টি গ্রুপে ভাগ করে দিলেন এবং আমরা সে অনুযায়ী ইএসডিও প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এবং জায়গা ঘুরে দেখলাম।

গ্রুপ-১ থেকে আমাদের সদস্যরা গিয়েছিল পরিষদ পাড়া, ঠাকুরগাঁও। সেখানে গিয়ে তারা মুসোহ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে কথা বলেন। মুসোহ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং ঋষি সম্প্রদায়ের। তারা অধিকাংশ মানুষ তাদের সম্প্রদায়ের ধনিক গোষ্ঠীর জমিতে বসবাস করেন। তাদের নিজস্ব কোনো জমি নেই। বর্তমানে তাদের জীবন ব্যবস্থা আগের থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

গ্রুপ-২ এর সদস্যরা গিয়েছিলেন ওরাও উপজাতিদের গ্রামে। সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান খ্রিস্টান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করছেন। মোট ২৯টি পরিবারের মধ্যে ২০টি পরিবার হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং ৯টি পরিবার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। মোট জনসংখ্যা প্রায় ১২৭ থেকে ১২৮ জন। তারা ওরাও ভাষায় কথা বলেন এবং একক ও যৌথ পরিবার দুটিই রয়েছে তাদের মধ্যে। তাদের একই গোত্রে বিয়ে হয় না, যৌতুক দেয় না এবং নিজেরা পণ দিয়ে বউ নিয়ে আসেন। বাৎসরিক উৎসবের মধ্যে রয়েছে কারাম উৎসব, কারাম পূজা ও আসারী পূজা। তাদের নিজস্ব কোনো জমিজমা নেই। তারা অন্যের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

গ্রুপ-৩ এর সদস্যরা গিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণপূর সাওতাল পট্টিতে। সেখানে তাদের সাথে ইএসডিও'র প্রতিনিধির পাশাপাশি ছিলেন তামান্না ম্যাম। তারা সাওতালদের সাথে কথা বলেন, তাদের পূর্ববর্তী অবস্থা, সংস্কৃতি, জীবনচর্চা, খাদ্যাভাস, সামজিক অবস্থান ও রীতিনীতি সম্পর্কে শোনেন।

গ্রুপ-৪ এর সদস্যরা গিয়েছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলার ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মিলপাড়া গ্রামের সমৃদ্ধি কর্মসূচির শিক্ষা সহয়তা কেন্দ্রে। এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে দরিদ্র পরিবারের সম্পদ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি।

গ্রুপ-৫ এর সদস্যরা গিয়েছিলেন রহিমানপুর, কালিতলা ঠাকুরগাঁও। তারা সেখানে গিয়ে দেখে ঋষি সম্প্রদায়ের একটি পিছিয়ে পড়া নৃগোষ্ঠী, যারা বর্তমানে হতদরিদ্র অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। তাদের প্রায় ৪২টি পরিবারে ১৩০ জন লোক বসবাস করেন।

গ্রুপ-৬ এর সদস্যরা গিয়েছিলেন ১০নং জামালপুর ইউনিয়র, শিবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও। তারা সেখানে গিয়ে সেই এলাকায় যে সমস্ত কাঠামোগত উন্নয়ন ঘটেছে, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। এ ছাড়াও, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, সেখানকার সমস্যা এবং এর উন্নতি বা সমাধানের জন্য আমরা কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে।

ফিল্ডওয়ার্ক শেষে আমরা সবাই দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের মধ্যে ইএসডিও'র ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ে চলে আসি। সেখানে এসে আমরা তাদের কার্যালয় ভালোভাবে ঘুরে দেখার পর দুপুরের খাবার খেয়ে নেই। এরপর দশ-পনেরো মিনিট বিশ্রাম নিয়ে আমাদের শিক্ষকরা ফিল্ড ওয়ার্কের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং ইএসডিও'র কিছু কর্মকর্তা তাদের প্রেমদ্বীপ প্রজেক্টের অধীন বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেন।

/মাহি/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়