বগুড়া উপ-নির্বাচন: আ. লীগের সুবর্ণ সুযোগে বাধা স্বতন্ত্র প্রার্থী
এনাম আহমেদ, বগুড়া || রাইজিংবিডি.কম
বগুড়া-৬ (সদর) আসনে আবারও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। এ নিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনবার ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই আসনটিতে। বগুড়ার এই আসনটি বিএনপির দখলে ছিলো।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির সাত সংসদ সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন। এর ফলে আসনগুলো শূন্য হয়। পরে নির্বাচন কমিশন আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ নির্ধারন করেছে। ধারণা করা হচ্ছে এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় আসনটিতে ভোটের লড়াই হবে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৫ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ৮ জানুয়ারি এবং প্রত্যাহারের শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ জানুয়ারি। তবে কে পাচ্ছেন মহাজোটের মনোনয়ন এনিয়ে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে চলছে কানাঘোষা।
এই আসন থেকে নির্বাচনে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- গত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি টি জামান নিকেতা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, কোষাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান মিলন ও বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের বগুড়া জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট লাইজিন আরা লিনা। তবে ইতোমধ্যে মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আসনটির সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর। এদিকে, স্বতন্ত্রপ্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দ শুরু থেকেই মাঠচষে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আসনটিতে ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসানুল হক মিনুর নামও শোনা যাচ্ছে।
২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার সরকারে থাকলেও এই আসনটি একবারও দখলে নিতে পারেনি আওয়ামী লীগ। তবে ১০ম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ভোট বর্জন করলে অনেকটা ফাঁকা মাঠে সেবার মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমর সংসদ সদস্য বনে যান। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে আসনটির উপ-নির্বাচনে ভোট করতে গিয়ে জামানত হারান জাতীয় পার্টির এই নেতা। বিএনপির দুর্গ হিসেবে খ্যাত এই আসনটি নিয়ে কথা চাউর আছে আসনটিতে বিএনপি থেকে ‘অখ্যাত কোনো নেতাকে মনোয়ন দিলে ‘তিনিও’ জয়লাভ করে বসে থাকবেন’- এমন একটি আসনে বিএনপি নেই। ফলে আসনটিতে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তবে সেই সুযোগে বাধ সাধতে পারেন শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রাথী আব্দুল মান্নান আকন্দ। কারণ, পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা। ৯ম থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এই সময়ের মধ্যে এই আসনে আওয়ামী লীগের ভোট বাড়ার চেয়ে বরঞ্চ ঢের কমেছে।
২০০৮ সালের ৯ম সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মরহুম আলহাজ মমতাজ উদ্দিন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৭৪ হাজার ৬৩৪ ভোট পান। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৪ জুনের উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ ৮৯ হাজার ৭৪২ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক টি জামান নিকেতা পেয়েছিলেন ৩২ হাজার ২৯৭ ভোট। অর্থাৎ ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামী লীগ যা ভোট পেয়েছিলো ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের উপ-নির্বাচনে ওই ভোটের অর্ধেকেরও কম পায় আওয়ামী লীগ।
এদিকে, নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থীর বিপক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে দেখা হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দকে। বিভিন্ন কারণে তিনি নানা কারণে বগুড়ার আলোচিত ব্যক্তি। এর আগে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বগুড়ার পৌরসভার মেয়র পদে দাঁড়িয়ে ৫৬ হাজার ভোট পেয়ে তাক লাগিয়েছিলেন। ওই ভোটে তিনি বিএনপি প্রার্থী রেজাউল করিম বাদশার কাছে পরাজিত হন। সম্প্রতি জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তবে একটি মামলায় পুরো নির্বাচনকালীন সময় তাকে কারাভোগ করতে হয়। কারাগারে থেকেও তিনি আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব সংকট তৈরি করেছিলেন। ওই ভোটের সামান্য ব্যবধানে তিনি পরাজয় বরণ করেন। জেলে না থেকে নির্বাচনের মাঠে থাকলে তিনিই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতেন এমনটাই ভোটার এবং সাধারণ মানুষদের মুখে মুখে শোনা গেছে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে।
বগুড়া সদর আসনটি শূন্য হওয়ার পর থেকেই আব্দুল মান্নান আকন্দ প্রতিদিন শহর এবং শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় করছেন নির্বাচনী সভা। তিনি সাধারণ ভোটারদের একত্রিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই তিনি ঘোষাণা দিয়েছেন যারা দল করে না তারাই তার ভোটার। রাত দিন একাকার করে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তাকে নিয়ে এবারো অন্য প্রার্থীরা সংকটে পড়বেন বলে মানুষমুখে আলোচনা চলছে।
নির্বাচন নিয়ে কথা হয় স্বতন্ত্রপ্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণ মানুষের এমপি হতে চাই। যারা চলমান গণবিরোধী রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তারাই আমার শক্তি, তারাই আমার ভোটার। দুই বড় দলের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে সাধারণ মানুষ প্রায় শেষ হয়েছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই আমি এমপি হতে চাই।’
আসনটির সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর বলেন, ‘দল থেকে নমিনেশন দিয়েছে আমাদের নির্বাচন করতেই হবে।’
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু বলেন, ‘প্রার্থী বিষয়ে কেন্দ্র থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। আমি নিজেও মনোনয়ন প্রত্যাশী।’
৯ম সংসদ নির্বাচনের চেয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে এসে আসনটিতে আওয়ামী লীগের ভোট কমে যাওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘টি জামান নিকেতা তো সদরের প্রার্থী ছিলেন না। তিনি শাহজাহানপুর-গাবতলী আসনে ব্যানার দিয়েছিলেন। ফলে মানুষ সেখানেই তাকে চিনতো। মানুষ তো আর বুঝে নাই সে এখানে দাঁড়াবে। হঠাৎ করে তিনি সদরে নমিনেশন নেওয়ায় এরকমটা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, এক সেশনে তিনবার নির্বাচন হতে যাচ্ছে আসনটিতে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচিত হন। পরে দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি শপথ নেননি। ফলে ২০১৯ সালের ২৪ জনু উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ নির্বাচিত হন। সম্প্রতি তিনিও দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপির অন্যান্য সাংসদদের সঙ্গে গেলো ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মহাসমাবেশে সময় পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবারো আসনটি শুন্য ঘোষণা করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার। ফলে পুনরায় আগামী ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হতে যাচ্ছে সংসদীয় এই আসনে।
মাসুদ