মুখ খুললেন আইন উপদেষ্টা
‘বিচারিক বিবেচনার বাইরে জামিন দেবেন না, তাহলে পরকালেও দায় নিতে হবে’
বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
ছাত্রলীগ কর্মী ফয়সাল করিম মাসুদ জামিনে মুক্ত হয়ে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করে পালিয়ে গেছে। মুমূর্ষ অবস্থায় দেশে চিকিৎসার পর বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেও হাদির শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার পর থেকে দাগি সন্ত্রাসীদের জামিনে মুক্তির বিষয়ে ব্যাপক সমালেচনার ঝড় চলছে। জামিন বিতর্কের দায় দেওয়া হচ্ছে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের ওপরে। বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হওয়ায় এই জামিন বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি।
বিচারিক বিবেচনার বাইরে গিয়ে জামিন দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করে আইন উপদেষ্টা বলেছেন, “জামিন বাণিজ্যে যারা লিপ্ত আছেন, তাদেরকে বলছি এবার থামুন। আমাদের ছেলেদের জীবন বিপন্ন করার মতো সিদ্ধান্ত দিবেন না।”
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ভেরিফয়েড পেজে এই আহ্বান জানান আসিফ নজরুল।
তিনি পোস্টে লিখেছেন, “আমাদের প্রিয় ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করেছে ফয়সাল করিম মাসুদ নামের এক ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী। তাকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছিল গত বছর। তার জামিন হয়েছে হাইকোর্ট থেকে। এরপর থেকে জামিন দেওয়ার ন্যয্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আবারো আলোচনা-বিতর্ক উঠছে।”
“প্রথমেই বলে রাখি, হাইকোর্ট বিচারিক কাজে স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। হাইকোর্টের ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো নিয়ন্ত্রণ পৃথিবীর কোনো দেশে থাকে না, বাংলাদেশেও নেই। কাজেই সেখানে ফয়সাল করিম মাসুদের জামিন হওয়ার সাথে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক ছিল না,” বলেন তিনি।
আসিফ নজরুল লিখেছেন, “ফয়সাল করিম মাসুদ গত বছর জামিন পেয়েছিল অস্ত্র মামলায়। হাইকোর্টে অস্ত্র মামলার জামিন সহজে হওয়ার কথা নয়। এটি তখনই হতে পারে যখন প্রভাবশালী আইনজীবীরা এসব মামলায় জামিন দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। এই আইনজীবীরা অধিকাংশই বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা। অভিযোগ রয়েছে, তাদের প্রভাবে এসব জামিন হওয়া সহজতর হয়।”
হাইকোর্টের প্রদত্ত জামিনে বিচারিক বিবেচনা কতটা থাকে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে বলে মন্তব্য করে তিনি লিখেছেন, “যেমন: হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে কীভাবে ৪ ঘণ্টায় ৮০০ মামলায় জামিন হয়েছিল, তা নিয়ে আমি কয়েকমাস আগে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছিলাম।
২৩ অক্টোবর ২০২৫ তারিখের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে পোস্টের নিচে কমেন্টে লিংক দিয়ে আসিফ নজরুল লিখেছেন, “এজন্য এক শ্রেণির আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আমার পদত্যাগ পর্যন্ত দাবি করা হয়েছিল।”
এই বক্তব্যের পক্ষে ২৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখের আরেকটি লিংক কমেন্টে দিয়েছেন তিনি।
দ্বিতীয় ধাপে আইন উপদেষ্টা লিখেছেন, “জামিন পাওয়ার সুযোগ আমাদের আইনে রয়েছে। কিন্তু গুরুতর অপরাধের সঙ্গে যে অপরাধীর সংযোগ অত্যন্ত স্পষ্ট, যে অপরাধী চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং যে ব্যক্তি জামিন পেলে পুনরায় অপরাধ করতে পারে বা অন্যকারো জীবন বিপন্ন করতে পারে, তাকে জামিন দেওয়া অস্বাভাবিক ও অসংগত। এ নিয়ে আমি প্রকাশ্যে বলেছি। মাননীয় প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা হওয়ার সময় উনার কাছে উচ্চ আদালতে অস্বাভাবিক জামিন বিষয়ে আমার উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলাম।”
তিনি বলেন, “কিছু জামিন নিম্ন আদালত থেকেও হয়েছে গত ১৬ মাসে। আমরা সেসব মামলার কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব মামলায় আসামি কীভাবে অপরাধটিতে জড়িত, পুলিশ তার কোনো তথ্য অভিযোগপত্রে দেয়নি, এমনকি আসামির দলীয় পরিচয় পর্যন্তও মামলার কোনো কাগজে উল্লেখ করেনি। এরপরও আমি যথাযথ বিচারিক বিবেচনা না করে যেনতেনভাবে জামিন না প্রদান করার কথা বলেছি।”
এই বক্তব্যের পক্ষে কমেন্টে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখর একটি লিংক দিয়ে তিনি বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
ফেসবুক পোস্টের তৃতীয় ধাপে অধ্যাপক আসিফ নজরুল লিখেছেন, “জামিন বাণিজ্যে যারা লিপ্ত আছেন, তাদেরকে বলছি এবার থামুন। আমাদের ছেলেদের জীবন বিপন্ন করার মতো সিদ্ধান্ত দিবেন না। এক গণহত্যাকারী পাশের দেশে বসে আমাদের জুলাই বীরদের হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে। বিচারিক বিবেচনার বাইরে গিয়ে জামিন দিয়ে সেই গণহত্যাকারীর অনুসারীদের এই সুযোগ করে দিবেন না। না হলে, পরকালেও এর দায় আপনাদের নিতে হবে।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল