ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

দ্বিতীয় পর্ব 

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে সরকার কী করছে

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ১৮ অক্টোবর ২০২৫   আপডেট: ০৯:১৯, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে সরকার কী করছে

দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা রংপুরে অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় জনগণের মধ্যে। তবে স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে-আতঙ্ক নয়, চাই সচেতনতা এবং সতর্কতা। 

এখন পর্যন্ত ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স জীবাণু শনাক্ত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই আক্রান্ত গবাদিপশুর সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কার্যক্রম 
 
অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রাদুর্ভাব বিস্তার রোধ ও নিয়ন্ত্রণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জরুরি ও সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অ্যানথ্রাক্স একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত জুনোটিক রোগ, যা গবাদিপশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে গবাদিপশুর টিকাদান, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, উঠান বৈঠক, পথসভা, লিফলেট বিতরণ এবং মাইকিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গবাদিপশুর এ রোগ প্রতিরোধে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রকাশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করেছে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে আক্রান্ত এলাকা পর্যবেক্ষণ, অসুস্থ পশু জবাই প্রতিরোধ এবং প্রতিটি খামারের পশুকে টিকার আওতায় আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

‘ওয়ান হেলথ’ কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত উঠান বৈঠক ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করছেন অসুস্থ পশু জবাই না করা, মৃত পশুকে খোলা স্থানে বা পানিতে না ফেলা, বরং গভীরভাবে মাটিচাপা দেওয়া এবং যেকোনো পশুজনিত অসুস্থতার ক্ষেত্রে দ্রুত নিকটস্থ ভেটেরিনারি হাসপাতাল বা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাকে অ্যানথ্রাক্সে বেশি আক্রান্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

দ্রুতই প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এলআরআই) রংপুর বিভাগে প্রায় ৩০ লাখ অ্যানথ্রাক্স টিকা সরবরাহ করবে বলে জানা গেছে। যার মধ্যে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাতেই ২০ লাখ টিকা দেওয়া হবে।

রংপুর জেলার নয়টি উপজেলার পীরগাছা (৫৩ হাজার ৪০০), কাউনিয়া (৩৪ হাজার), রংপুর সদর (২৬ হাজার ৫০০), মিঠাপুকুর (৩৪ হাজার ৫০০), গঙ্গাচড়া (৪ হাজার ৮০০), তারাগঞ্জ (৪ হাজার ৩০০), বদরগঞ্জ (৫ হাজার), পীরগঞ্জে (৫ হাজার) এখন পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৬৭ হাজার গরুর টিকা প্রয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়া, উঠান বৈঠক, পথসভা এবং প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার ৩৬টি কসাইখানায় গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৩৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। টিকাদানের জন্য গঠিত ৩২টি মেডিক্যাল টিমের মধ্যে মিঠাপুকুরে ১৭টি, পীরগাছায় আটটি এবং কাউনিয়ায় সাতটি কাজ করছে।

গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৬ হাজার ৪০০ গরুতে টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। আক্রান্ত এলাকায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গরু পুঁতে ফেলা, টিকাদান, মাইকিং, উঠান বৈঠক এবং লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং পাঁচটি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

রক্তের ১১টি নমুনার সবগুলোই নেগেটিভ হলেও মাংসের ১১টি নমুনার মধ্যে ১০টি পজিটিভ পাওয়া গেছে।

এছাড়া, মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের উৎস ও পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে। টিমটি আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে শিগগিরই প্রতিবেদন দাখিল করবে।

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জনপ্রতিনিধি এবং জনগণের সম্মিলিতভাবে কাজ করছে বলে সরকার জানায়।

আক্রান্ত পশু জবাই নয়, মাটিচাপা দিতে হবে

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “অ্যানথ্রাক্স ভয়ঙ্কর নয়, তবে অবহেলা করলে বড় বিপদ হতে পারে। আক্রান্ত পশুকে কোনোভাবেই জবাই করা যাবে না। মাংস খাওয়াও যাবে না। আক্রান্ত পশু মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “অনেকে সস্তায় মাংস বিক্রি করেন, সাধারণ মানুষও সস্তায় কিনে ফ্রিজে রাখেন। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রবণতা।”

অ্যানথ্রাক্স নিয়ে সতর্ক সরকার

এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, “দেশে অ্যানথ্রাক্স পরিস্থিতি নিয়ে সরকার সতর্ক রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসক, প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। জনসচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে এবং গবাদিপশুকে ভ্যাকসিনও দেওয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিজে বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারকি করছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দলও আক্রান্ত এলাকায় পাঠানো হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।”

ঢাকা/ এএএম/ইভা 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়