আবু সাঈদ থেকে ওসমান হাদি
রক্তস্নাত বিপ্লব ও রাষ্ট্রগঠনের প্রশ্ন
শাহেরীন আরাফাত || রাইজিংবিডি.কম
ইতিহাস সবসময় সোজা পথে চলে না; মাঝেমধ্যে সে থমকে দাঁড়ায়, আবার কখনো একই বৃত্তে ফিরে আসে আমাদের পরীক্ষা করার জন্য। আমরা আবারও যেন সেই ১৬ জুলাইয়ে ফিরে গেলাম। ক্যালেন্ডারের পাতায় দিনটি ১৮ ডিসেম্বর হলেও, শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদির শাহাদাত আমাদের সেই রক্তাক্ত জুলাইয়ের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে, যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমাদের প্রথম বাতিঘর—শহীদ আবু সাঈদ।
আবু সাঈদ বুক পেতে দিয়ে এক ঘুমন্ত জনগোষ্ঠীকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। তাঁর সেই আত্মদান বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে, বিশেষ করে ছাত্র-জনতাকে এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক ঐক্যের সুতোয় গেঁথেছিল। সেই ঐক্যই ছিল আমাদের শক্তির উৎস, যা লুটেরা-মাফিয়াশ্রেণী এবং ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রযন্ত্রের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। দীর্ঘ পনের মাস পর, ১৮ ডিসেম্বর শহীদ হওয়ার মধ্য দিয়ে শরিফ ওসমান বিন হাদি আমাদের আবারও ইতিহাসের সেই একই মোড়ে দাঁড় করালেন। তিনি প্রমাণ করলেন, যুদ্ধ শেষ হয়নি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর যে সুবিধাবাদী বিভক্তি আমাদের গ্রাস করেছিল, হাদির তপ্ত রক্ত সেই বিভক্তির দেয়ালে ফাটল ধরিয়েছে। তবে এখন আমাদের সামনে শত্রু-মিত্র চেনার লেন্স পরিষ্কার। গণসার্বভৌমত্ব কায়েমের এই অসমাপ্ত লড়াইয়ে হাদি আমাদের সঙ্গে আছেন এবং থাকবেন।
শরিফ ওসমান বিন হাদির এই শাহাদাত নিছক কোনো মৃত্যু নয়; এটি এক বীরোচিত প্রস্থান, যা আবারও গোটা বাংলাদেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। তরুণদের বুকের ভেতর নিভে যাওয়া আগুনের ফুলকি আবারও দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছে। তাঁর বীরত্ব, অকুতোভয় সাহস এবং গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ করার অবিচল নিষ্ঠা—তা আমাদের অভিভূত করেছে। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তিনি বিপ্লবকে চিরস্মরণীয় করে রেখে গেছেন।
দুই.
হাদির মৃত্যু আমাদের শোকে মুহ্যমান করেছে সত্য, কিন্তু বিপ্লবীরা শোকে পাথর হয় না; বরং বারুদে পরিণত হয়। এখন আমাদের অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায়, আবেগের লাগাম টেনে ধরে ভাবতে হবে—আমরা আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে আছি? যে যুদ্ধ আমরা চব্বিশের জুলাইয়ে শুরু করেছিলাম, সেই যুদ্ধকে আমরা ২০২৫-এর শেষে এসে কীভাবে বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাব? এটি এখন আর কেবল আবেগের স্লোগান বা মিছিলের বিষয় নয়; এটি এখন পুরোপুরি রণনীতি এবং রণকৌশল নির্ধারণের প্রশ্ন। হাদি তাঁর জীবন দিয়ে আমাদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়ে গেছেন—‘ঐক্যবদ্ধ থাকো’।
জুলাই পরবর্তী সময়ে আমাদের মধ্যে কেন এত বিভক্তি তৈরি হলো? কারা এই বিভক্তির বিষবৃক্ষ রোপণ করল? আমাদের কোন ভুল চিন্তার কারণে লুটেরা-মাফিয়াশ্রেণী আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠল? এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের বোঝাপড়া পরিষ্কার থাকা জরুরি। ৫ আগস্টের পর আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগেছি। ভেবেছি, যুদ্ধ বুঝি শেষ! কিন্তু ফ্যাসিবাদ কেবল ব্যক্তিবিশেষ নয়, এটি একটি ব্যবস্থা। ব্যক্তি হাসিনার পতন হলেও ‘হাসিনা-ব্যবস্থা’ বা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাটি অক্ষত রয়ে গেছে। এই যুদ্ধটা বাঁচা-মরার। মনে রাখতে হবে, চূড়ান্ত বিজয় না এলে আমাদের প্রত্যেকের মাথার ওপর মৃত্যু পরোয়ানা ঝুলছে।
আমাদের প্রথম এবং প্রধান ভুল ছিল ৫ আগস্টের অব্যবহিত পরেই নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু না করা। গণঅভ্যুত্থানের মূল ম্যান্ডেট বা অভিপ্রায় ছিল গণসার্বভৌমত্ব কায়েম। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের মালিকানা হবে জনগণের, কোনো পরিবার বা দলের নয়; সংসদ বা ব্যক্তিরও নয়। এই অভিপ্রায় বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ছিল একটি সত্যিকার অর্থে ‘বিপ্লবী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’। কিন্তু আমরা তা করতে ব্যর্থ হয়েছি।
আমরা বর্তমানে যে সরকার দেখছি, তাকে আমরা ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ বলছি বটে; কিন্তু রাজনৈতিক ও আইনি সংজ্ঞায় এটি তা নয়। অন্তর্বর্তী সরকার তাকেই বলা হয়, যা একটি পুরোনো ব্যবস্থাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে, একটি নতুন ব্যবস্থার প্রবর্তন করে। যারা একটি নতুন গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করে। পুরোনো ব্যবস্থা মৃত, আর নতুন ব্যবস্থা জন্ম নিচ্ছে—এই দুইয়ের মধ্যবর্তী সময়ের সরকারই হলো অন্তর্বর্তী সরকার।
কিন্তু আমরা একটি ‘সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার’ কায়েম করলাম। এই সরকার শেখ হাসিনার তৈরি করা সেই ফ্যাসিস্ট সংবিধানকেই বহাল রেখেছে। তারা সেই সংবিধানের অধীনেই শপথ নিয়েছে, যেই সংবিধান মানুষকে প্রজা আর শাসককে রাজায় পরিণত করে। ফলস্বরূপ, আমরা যা পেয়েছি তা হলো—‘হাসিনাবিহীন হাসিনা-ব্যবস্থা’।
মানুষ বদলেছে; বন্দুকের নল এখনো বিপ্লবীদের দিকে, আর ট্রিগারও সেই পুরোনো ব্যবস্থার হাতে। গুলিটা সেখান থেকেই এসেছে। হাদির মাথায় যে গুলি বিঁধেছে, তা সেই পুরোনো সংবিধান ও কাঠামোরই ধারাবাহিকতা।
এই মুহূর্তে যে দুর্বল উপদেষ্টা সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা বা শক্তি—কোনোটিই আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট নয়। এই সরকারের আমলেই হাদিকে শতাধিক হত্যার হুমকি দেওয়া হয়, আর আজ তিনি নেই। হাদি ও তাঁর সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বহুবার বলার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে থাকা ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলো আবারও মাথাচড়া দিয়ে উঠছে, তারা প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো কোনো রাজনৈতিক, আইনি বা নির্বাহী ক্ষমতা বর্তমান উপদেষ্টা সরকারের মধ্যে দেখিনি।
তাই আমাদের অবিলম্বে ‘একটি পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’-এর দাবি তুলতে হবে। সেনা তোষণ বা আমলা তোষণ নয়, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যে সরকার বিপ্লবকে ধারণ করবে, আমাদের তেমন সরকার চাই। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে যুক্ত করতে হবে; আর অবশ্যই সেই সৈনিকদের, যারা গণঅভ্যুত্থানের সময় জনতার বুকে গুলি চালাতে অস্বীকার করেছিল। সৈনিকরাও এ দেশের নাগরিক, দেশ গঠনে তাদেরও ভূমিকা রাখার অধিকার রয়েছে। অথচ গণঅভ্যুত্থানের পর তাদের এ প্রক্রিয়া থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে।
তিন.
আজকের তরুণ সমাজ এবং রাজনৈতিক কর্মীরা ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এটি অত্যন্ত জরুরি এবং বাস্তবসম্মত। কিন্তু আমাদের সাবধান হতে হবে—আমরা যেন গাছের পাতা দেখে বনকে ভুলে না যাই। বর্তমান পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বায়নের যুগে কোনো একটি দেশের আধিপত্য বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমরা যখন কেবল ভারতীয় আগ্রাসনের কথা বলি এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ভূমিকাকে আড়াল করি, তখন আমরা ভুল রাজনীতি করি। আমাদের লড়াই কেবল দিল্লির সাউথ ব্লকের বিরুদ্ধে নয়; আমাদের লড়াই ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউস এবং ব্রাসেলসের নীতি-নির্ধারকদের বিরুদ্ধেও। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা আমাদের চোখের সামনে গাজাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। ইসরায়েলি জায়নবাদ একটি জনপদকে কবরস্থানে পরিণত করেছে, আর তথাকথিত ‘সভ্য বিশ্ব’ তা চেয়ে চেয়ে দেখেছে। বাংলাদেশও এই গ্লোবাল জিও-পলিটিক্সের বাইরে নয়।
ভারত আমাদের প্রতিবেশী, তাদের সাথে আমাদের বিশাল সীমান্ত। ভারতীয় জনগণের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো যুদ্ধ নেই। ভারতেও বহু মানুষ আছেন যারা নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরোধী। তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান করেন। আমাদের লড়াই তাই ভারতীয় জনগণের বিরুদ্ধে নয়; আমাদের লড়াই দিল্লির সম্প্রসারণবাদী নীতির বিরুদ্ধে, হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার বিরুদ্ধে।
দিল্লির নীতি শুধু আধিপত্য বিস্তার নয়; বরং বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা। ১৬ ডিসেম্বরে তারা যখন বিজয় দিবস পালন করে, তারা একে ‘পাক-ভারত যুদ্ধ’ হিসেবে দেখে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের লাখো শহীদের রক্ত, আমাদের রাজনৈতিক সত্তা—এগুলোর স্বীকৃতি তাদের বয়ানে নেই। তারা মনে করে, বাংলাদেশ তাদের দয়ায় পাওয়া একটি ভূখণ্ড মাত্র। এই মনস্তত্ত্বই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।
ভারতীয় মিডিয়া এবং আন্তর্জাতিক লবিস্টরা প্রতিনিয়ত প্রচার চালাচ্ছে, বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান হয়েছে এবং সংখ্যালঘুরা বিপদে আছে। এটি একটি ভয়ানক ফাঁদ। ‘আত্মরক্ষা’র দোহাই দিয়ে ভারত যে কোনো সময় বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করার বৈধতা তৈরির চেষ্টা করছে। ১৯৭১ সালেও তারা শরণার্থী সমস্যা ও মানবিক বিপর্যয়ের যুক্তি দেখিয়েই যুদ্ধে জড়িয়েছিল। আজ তারা একই ধরনের আন্তর্জাতিক আইনি ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। তাই আবেগের বশবর্তী হয়ে এমন কোনো হঠকারী কাজ করা যাবে না, যা তাদের আগ্রাসনের বৈধতা বা অজুহাত এনে দেয়। আমাদের লড়াই হতে হবে কৌশলগতভাবে দিল্লি, ওয়াশিংটন বা রুশ—সব প্রকার আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে।
চার.
জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ছিল কেবল ক্ষমতার পালাবদল নয়, বরং রাষ্ট্রের খোল নলচে বদলে ফেলা। কিন্তু আমরা কী দেখছি? বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র এবং পুলিশ প্রশাসন—সবই বহাল তবিয়তে আছে। আমরা দেখেছি, অতীতে হাজারো মিথ্যা মামলায় বিরোধী মতের মানুষকে জামিন দেওয়া হয়েছে, অথচ হাদির মতো বিপ্লবীদের খুনিদের জামিন হচ্ছে। অস্ত্রসহ হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও খুনিরা জামিন পাচ্ছে। এই অন্যায় প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। বিচার বিভাগ যদি ন্যায়বিচার বা ইনসাফ কায়েম করতে ব্যর্থ হয়, তবে সেই বিচার ব্যবস্থা আমাদের ভেঙে ফেলতে হবে। বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজাতে হবে।
নির্বাচনবাদী রাজনীতির যে আফিম আমাদের খাওয়ানো হচ্ছে, তা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। ‘নির্বাচন হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে’—এই মিথ্যা তত্ত্ব ফেরি করছে লুটেরা-মাফিয়াশ্রেণী। রাষ্ট্র পুনর্গঠন না করে, গঠনতন্ত্র পরিবর্তন না করে নির্বাচন দিলে তা হবে পুরোনো বোতলে নতুন মদ। লুটেরা-মাফিয়াশ্রেণী আবারও ক্ষমতায় আসবে, শুধু তাদের দলের নামটা ভিন্ন হবে।
পাঁচ.
এমন এক বাস্তবতায় আমাদের করণীয় নির্ধারণ করাটা জরুরি। আমাদের প্রথম এবং প্রধান কাজ হলো—ঐক্যবদ্ধ হওয়া। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট নিয়ে আমাদের আবার এক কাতারে দাঁড়াতে হবে। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে, বিতর্কের ভিন্নতা থাকবে, কিন্তু ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের প্রশ্নে কোনো আপস চলবে না।
তবে ক্ষোভের আগুনে যারা রুটি সেঁকতে চাইছে, তাদের থেকে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ভবন ভাঙার বিরুদ্ধে ছিলেন হাদি। তাঁর নামে যারা ভবন ভাঙছে, অগ্নিসংযোগ করছে বা মানুষ পুড়িয়ে মারছে; তারাও ওই একই ফ্যাসিস্ট মতাদর্শেরই ধারক। তারা হাদির নামে, ধর্মের নামে, অথবা অন্য কোনো নামে ভাঙচুর, হত্যা, লুটপাট করতে বরাবরই সক্রিয় থাকে। তবে এতে মূলত পতিত ফ্যাসিস্টের প্রেতাত্মাই প্রকাশিত হয় ভিন্ন নামে। এর মূলে রয়েছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের প্রকৃত দাবি থেকে জনগণকে বিভ্রান্ত করে ভিন্ন দিকে সরিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা। এসব হামলা, লুটপাট তারাই চালাচ্ছে, যারা বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শক্তির সেবাদাস।
বাংলাদেশের জনগণের এ মুহূর্তের প্রাণের দাবি—শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান ছুড়ে ফেলে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হবে। বর্তমান দুর্বল সরকারের বদলে বিপ্লবীদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও অর্থনীতিকে লুটেরা-মুক্ত করে গণমানুষের মালিকানায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
সরকার কে চালাচ্ছে বা কে ক্ষমতায় বসল, তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে, রাষ্ট্র কীভাবে গঠিত হবে তা নিয়ে সোচ্চার হওয়া বেশি জরুরি। ৫ আগস্ট আমরা যে ‘গাঠনিক ক্ষমতা’ অর্জন করেছিলাম, তা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। সেই ক্ষমতা আবার পুনরুদ্ধার করতে হবে। আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে রাষ্ট্র গঠনের দিকে, সরকার পরিবর্তনের দিকে নয়।
শরিফ ওসমান হাদির রক্ত আমাদের ঋণী করে গেছে। এই ঋণ শোধ করার একমাত্র উপায় হলো তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা। অতীতের গ্লানি মুছে, বিভেদ ভুলে আবারও হাতে হাত রাখতে শেখা। আমাদের সংগ্রাম কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, আমাদের সংগ্রাম একটি অন্যায্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। এই লড়াইয়ে আমরা জিতবই। কারণ, শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না। লাখো হাদি তৈরি হচ্ছে বাংলার ঘরে ঘরে; যারা দেশপ্রেমকে মাথায় ধারণ করে লুটেরা-মাফিয়াশ্রেণীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হবেন। গণসার্বভৌমত্ব কায়েমের দাবিতে আন্দোলন চলছে; যেখানে শরিফ ওসমান বিন হাদি আমাদের সঙ্গে আছেন ও থাকবেন।
ঢাকা/তারা//