ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

পৃথিবীর যে দেশগুলো এখনও স্বীকৃত নয়

সাদিয়া ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১২, ১৫ নভেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পৃথিবীর যে দেশগুলো এখনও স্বীকৃত নয়

সাদিয়া ইসলাম : কি নিয়ে একটি দেশ গঠিত হয়? বিশ্ব দরবারে একটি জনপদকে দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে ঠিক কি কি শর্ত পূরণ করতে হয়? রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতে রাষ্ট্রের প্রধান উপাদান চারটি। এই চারটি উপাদান হচ্ছে- নির্দিষ্ট ভূমি, জনসংখ্যা, সরকার এবং সার্বভৌমত্ব।

 

পৃথিবীতে এখন মোট স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৩টি। তবে এই সংখ্যার বাইরেও কিছু রাষ্ট্র রয়েছে যারা নিজেদের রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করলেও এখনও তারা বিশ্ব দরবারে স্বীকৃত নয়। আসুন জেনে নিন এমন কিছু দেশ সম্পর্কে।


 

তাইওয়ান

চীনের কাছ থেকে আলাদা হতে চেয়েছে তাইওয়ান, সেটা আজকের কথা নয়। আর সেটা যে চীন তাকে কোনভাবেই দিতে রাজী না- সেটাও বেশ পুরোন কথা। ১৯৭১ সাল অব্দি অবশ্য একটি স্বতন্ত্র দেশ হিসেবেই আলাদা জায়গা পেয়েছিল দেশটি জাতিসংঘে। কিন্তু তারপরেই চীন এসে এ জায়গাটি দখল করে নেয়। জাতিসংঘে আসন পাওয়ার ব্যাপারটাও বেশ গোলমেলে। মন্টেভিডিও কনভেনশন অনুসারে অনেকেই মনে করেন যে আদতে ইংল্যান্ড একা একটি দেশ নয়। এর ভেতরে দেশ হিসেবে আরো রয়েছে স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড- এ চারটিকে চারটি দেশ হিসেবে মনে করা হয়। সত্যিই তো! কি নেই এদের? তবে জাতিসংঘে একটি আসনেই অংশগ্রহন করে এরা। তাও একটি দেশ হিসেবেই। আর এই অংশিদারিত্বের ভিত্তির উপর আসন ব্যবস্থা নতুন নয় আজকের পৃথিবীতে। ফিরে আসি তাইওয়ান প্রসঙ্গে।

 

 

 

তাইওয়ান কখনোই চীনের সঙ্গে এক দেশ হিসেবে থাকতে না চাইলেও চীন খুব বেশি পরিমাণ উৎসাহী একে নিজের মেইনল্ডান্ডের সঙ্গে মানচিত্রে একত্রে দেখানোর। বস্তুত, তাইওয়ানের উপরোক্ত দেশ হবার সবগুলো উপাদান থাকলেও কেবল একটি কারণেই এটিকে দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারছে না কেউ। আর সেটি হচ্ছে চীন। চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতেই এমনটা করছে দেশগুলো। যদিও এখন আব্দি মোট ২৫ টি দেশ তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে বেশিরভাগ দেশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এ ব্যাপারে। বিশেষ করে আমেরিকাও চীনের কাছ থেকে পাওয়া বিরতিহীন রাজনৈতিক চাপের কারণে ১৯৭৯ সালে তাইওয়ানকে আলাদা দেশ হিসেবে অনুমোদন দেওয়া বন্ধ করে দেয়। উঠিয়ে নেওয়া হয় আমেরিকা থেকে তাইওয়ানের দূতাবাস। অবশ্য অনুমোদন না পেলেও এর বাইরে থেকেই নিজের মতন করে সব ধরনের সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে তাইওয়ান পৃথিবীর আর দেশগুলোর সঙ্গে। বর্তমানে প্রায় ১২২ টি দেশের সঙ্গে নানা ধরনের সম্পর্ক চালু আছে এ দেশটির। এইতো কিছুদিন আগেও আরো একবার জোর চেষ্টা করলো তাইওয়ান জাতিসংঘে আলাদাভাবে আসন পাওয়ার। তবে সে চেষ্টা সফল হয়নি বরাবরের মতন। তবে তাতে করে থেমে যায়নি এই দেশ না হওয়া দেশটি। আশা হারিয়ে ফেলেনি তারা। প্রত্যেকবারের মতন আবার চেষ্টা করে চলেছে এটি পুণরায় দেশ হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার জন্য।

 

তিব্বত

ভারত, নেপাল, বার্মা ও ভূটানের সঙ্গে সীমান্ত ভাগাভাগি করে নেওয়া তাইওয়ানের মতনই চীনের ভেতরে থাকা আরেকটি দেশের নাম হচ্ছে তিব্বত। অনেকে তিব্বতকে স্বতন্ত্র দেশ ভেবে থাকেন। আর সেটা ভুল হলেও কিন্তু খুব একটা মিথ্যে নয়। তাইওয়ানের মতনই দেশ হবার সবরকমের প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গিয়েছে তিব্বত।

 

 

তবু আজ অব্দি এটি আসতে পারেনি পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বতন্ত্র দেশ হিসেবে। অনেকে তিব্বদের ওপর চীনের এমন আধিপত্যকে অবৈধ বলে দাবী করলেও চীন সেসব শুনতে নারাজ। বরং সবটা কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে তিব্বতকে নিজের মানচিত্রের ভেতরে রাখতেই ইচ্ছুক চীন।

 

গ্রীনল্যান্ড

ডেনমার্কের অভ্যন্তরে প্রথম কলোনি হিসেবে গ্রীনল্যান্ড আসে ১৭৭৫ সালে। এরপর অনেক সময় পেরিয়ে গিয়েছে। ১৯৫৩ সালে ডেনমার্কের একটি রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় এটি। ১৯৭৯ সালে হোম রুল চালু হয় এখানে আর তার ছয় বছর পর ইউরোপিয়ান ইকনোমিক কমিউনিটি ছেড়ে বেরিয়ে আসে গ্রীনল্যান্ড। দেশটির (!) ইতিহাস যদি বলতে হয় তবে সেটা এতটুকুই। তবে পৃথিবীর অনেকে গ্রীনল্যান্ডকে দেশ ভেবে থাকলেও আদতে এটি কোন স্বার্বভৌম দেশ নয়।

 

 

২০০৮ সালে ডেনমার্কের কাছ থেকে নিজেদের কিছু ব্যাপারকে আলাদা করতে চাইলে একটা ভোটাভুটি হয় এখানে। তবে সেটা মোটেই ডেনমার্ক থেকে নিজেদেরকে আলাদা করার ইচ্ছা থেকে নয়। বাস্তবে, গ্রীনল্যান্ড যেমন ডেনমার্ক থেকে সরে আসতে চায় না, তেমনি ডেনমার্কও সরিয়ে দিতে চায় না গ্রীনল্যান্ডকে নিজের কাছ থেকে।

 

উত্তর সাইপ্রাস

উত্তর সাইপ্রাসের অবস্থান দেশ হিসেবে কতটা সেটা জানান জন্যে এর নামটাই যথেষ্ট। আর সেটি হচ্ছে তুর্কি রিপাবলিক অব নর্দান সাইপ্রাস। শুরুতেই বুঝে নেওয়া যায় যে এটি আদতে তুরস্কের ভেতরের একটি স্থান মাত্র। কোন আলাদা দেশ নয়। চীনের মতন নয়, তুরস্কের সঙ্গে বেশ ভালো একটা সম্পর্ক রয়েছে উত্তর সাইপ্রাসের। সাইপ্রাসের একটি অংশ বলে চিহ্নিত স্থানটি দেশ হয়েও না হওয়া স্থানটি একমাত্র একটি দেশের কাছ থেকেই আজ অব্দি স্বীকৃতি পেয়েছে। আন্দাজ করুন তো কে সেটি? কে আবার! তুরস্ক।

 

 

চেনাজানা নামের বহরটা খুব একটা বেশি না হলেও রাষ্ট্র হওয়ার সমস্ত উপাদাণ থাকা সত্ত্বেও দেশ হতে না পারার তালিকায় রয়েছে আরো অনেকগুলো জনপদের নাম। এর ভেতরে রয়েছে- দ্য রিপাবলিক অব লাকোতাহ, বারোটসল্যান্ড, ওগোনাইল্যান্ড, দ্যা রিপাবলিক অব মুরাওয়ারি, ক্রিশ্চিয়ানিয়া, ফরভিক, আল্টানিটাম, এলগাল্যান্ড-ভারগাল্যান্ডসহ আরো অনেক দেশ। যেগুলোর কোনটা আমেরিকা, কোনটা অষ্ট্রেলিয়া, আবার কোনটা আফ্রিকার কাছ থেকে বছরের পর বছর ধরে চেয়ে আসছে নিজেদের স্বীকৃতি। তবে দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, এতদিন ধরে এদের এতটা দাবী-দাওয়া, আন্দোলন আর আর্জির পরেও আজ অব্দি মন গলেনি কারো। কেউই নাম লেখাতে পারেনি বিশ্বের স্বাধীন সার্বভৌম দেশের তালিকায়।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ নভেম্বর ২০১৫/রাশেদ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়