ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুহারে দ্বিতীয় ঢেউয়ে রেকর্ড

ছাবেদ সাথী, নিজস্ব প্রতিবেদক, যুক্তরাষ্ট্র || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ৪ ডিসেম্বর ২০২০  
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুহারে দ্বিতীয় ঢেউয়ে রেকর্ড

যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ে সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা দ্বিতীয় ঢেউয়ের কাছে হার মেনেছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে ৫ শত। প্রথমে ঢেউয়ের সময়  দৈনিক সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল (১৫ এপ্রিল) ২ হাজার ৬০৭ জন। আর দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত বুধবার (২ ডিসেম্বর) করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ১৫৭ জন। হাসপাতালগুলোতেও সংক্রমিত রোগীদের উপচে পড়া ভিড়ও বেড়েছে আগের মতই।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এদিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ১৫৭ জন। এর আগে দৈনিক সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল প্রাদুর্ভাবের শুরুতে গত ১৫ এপ্রিল ২ হাজার ৬০৭ জন। এছাড়া বুধবার করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশটিতে দুই লক্ষাধিক মানুষের দেহে করোনার অস্তিত্ব শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে দুই লাখের বেশি মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলেন।

এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১ কোটি ৩৯ লাখ ১১ হাজার ৭২৮ আমেরিকানের দেহে সংক্রমণ ছড়িয়েছে মহামারি করোনা। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে মোট সংক্রমণ ১ কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে প্রতিদিন করোনার দ্রুত সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বরেণ্য কয়েকজন চিকিৎসকের মতো জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের অধ্যাপক ড. যোনাথান রীনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে ৮ ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন ৪ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি বিন্দুমাত্র অস্বাভাবিক নয়। আর ইমার্জেন্সি মেডিসিনের চিকিৎসক এবং জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর ড. লীনা ওয়েন বলেন, করোনার ব্যাপারে হেলফলা করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। সহসাই আমরা চরম দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি। সম্ভবত ৯ বা ১০ ডিসেম্বর থেকে আমেরিকায় প্রতিদিন ২ হাজারের বেশি, এমনকি ৩ থেকে ৪ হাজার লোকের করোনায় প্রাণহানির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে গত ২৭ নভেম্বর আমেরিকায় ২ লাখ ৫ হাজার আক্রান্ত, প্রায় দেড় হাজার মারা গেছেন। ২৮, ২৯ এবং ৩০ নভেম্বর প্রত্যহ গড়ে ১ লাখ ৬৩ হাজার আক্রান্ত, প্রায় দেড় হাজার করে মারা গেছেন এবং হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হয়েছে ৯৪ হাজার। একই সূত্রানুসার শুধুমাত্র নভেম্বরে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতার পরিপ্রেক্ষিতে লস এঞ্জেলেস কাউন্টি ৩০ নভেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্টে অ্যাট হোম (ঘরে থাকুন) আদেশ কার্যকর করেছে। এ ছাড়াও কাউন্টির স্বাস্থ্য বিভাগ ৩০ নভেম্বর থেকে পরিবারের সদস্য ভিন্ন বহিরাগতদের নিয়ে সকল পাবলিক এবং প্রাইভেট সমাবেশ ৩ সপ্তাহের জন্য নিষিদ্ধ করেছে।

রোড আইল্যান্ডের প্রেস সেক্রেটারি অড্রি লুকাস জানান, যে হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতা অতিক্রম করায় নতুনভাবে করোনা আক্রান্তদের ২ টি ফিল্ড হাসপাতালে রাখা হচ্ছে। নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ৫ টি নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছেন। এখন থেকে সারা স্টেটে টেস্টিং জোরদার করা হবে। ভ্যাক্সিন ডিস্ট্রিবিউশনের উপর কাজ করা হবে। নিরাপদে বিদ্যালয় খোলা অব্যাহত রাখা হবে। তবে অরেঞ্জ এবং রেড জোনের আওতাধীন সাপ্তাহিক টেস্টিং কার্যকর করা হবে। প্রাইভেট সমাবেশে ১০ জনের বেশি অংশ নিতে পারবে না। কুমো বলেন, আমাদের বিশ্বাস আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভ্যাকসিন বিতরণের কাজ শুরু হবে। ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিবিউশন পরিকল্পনা নিয়ে সহগামী গভর্নরদের সাথে আলোচনার কথাও উল্লেখ করেন। তবে ক্যমো জানান, শুরুতে বড় ধরনের ডিস্ট্রিবিউশনের আশা করা দুরাশার শামিল।

কুমো বলেন, ব্লাক ও ব্রাউন কমিউনিটি এবং নিম্ন আয়ের কমিউনিটিগুলোতেও টেস্টিং জোরদার করা হবে। নিউইয়র্কে এখন করোনা পজিটিভের হার ৪.৫%।

অন্যদিকে থ্যাঙ্কসগিভিং পরবর্তী টেস্টিং জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিও। পেনসিলভেনিয়ার হেলথ সেক্রেটারি ড. রাচেল লেভিন জানান, গত ৩০ নভেম্বর সাড়ে ৪ হাজার নতুন করোনা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ছাবেদ সাথী/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়