ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শ্যামল ছায়ার খোঁজে

মুম রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১২, ১৩ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ২১:১৫, ১৩ নভেম্বর ২০২০
শ্যামল ছায়ার খোঁজে

আজ যদি আমাকে একটিমাত্র চলচ্চিত্রের কথা বলতে বলা হয়, এমন এক বাংলা চলচ্চিত্র, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, যা দেখা সবার জন্য এই মুহূর্তে জরুরি, আমি অবশ্যই, অতি অবশ্যই হ‌ুমায়ূন আহমেদের ‘শ্যামল ছায়া’র কথা বলবো।

মুক্তিযুদ্ধের এই চলচ্ছবি দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে এগিয়েছে। একদিকে কিছু মানুষ হানাদার পাকবাহিনীর অত্যাচার, নৃশংসতা থেকে নিরন্তর নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছে অন্যদিকে কিছু মানুষ অসীম সাহসিকতায় পাল্টা হামলা করছে পাকিস্তানিদের। নিরাপদ আশ্রয় খোঁজা আর প্রতিরোধ তৈরি করা এই দুই শ্রেণীর মানুষই আদতে ১৯৭১-এর তাবত বাঙালি মানুষ। হ‌ুমায়ূন আহমেদ তার যাদুকরি গল্প বলার ক্ষমতা এই চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের মানুষের চরিত্রই এঁকেছেন।

গল্পের শুরুতেই আমরা বর্ণনা শুনতে পাই, ‘এটি একটি নৌকা যাত্রার গল্প। ১৯৭১, আষাঢ় মাস। একদল অসহায় মানুষ যাত্রা শুরু করলো মুক্তাঞ্চলের দিকে। দেশে তখন ভয়াবহ অবস্থা! দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী গণহত্যার উৎসবে মেতেছে। দেশ মাতৃকার বীর সন্তানেরা শুরু করেছে স্বাধীনতা যুদ্ধ। নৌকার অসহায় যাত্রীদের মনে তীব্র আতঙ্ক। কিন্তু চোখে শ্যামল ছায়ার স্বপ্ন। তারা কি পারবে শ্যামল ছায়ায় যেতে?’

এই শ্যামল ছায়াই আসলে সোনার বাংলার কাঙ্খিত প্রতিরূপ। এই শ্যামল ছায়া আসলে মমতা, সম্প্রীতি, সহানুভূতির সবুজ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র তুলে ধরাই শুধু নয়, বাংলাদেশকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন হ‌ুমায়ূন তার এই চলচ্ছবিতে। অতিসংক্ষেপে চলচ্ছবির কাহিনি বয়ান করে আমরা চলে যাব মূল প্রসঙ্গে, অর্থাৎ কেন আজকের বাংলাদেশে ‘শ্যামল ছায়া’ বারবার দেখা উচিত; প্রত্যেকের দেখা উচিত?

‘শ্যামল ছায়া’র কাহিনি আমাদের জন্য অভিনব কিছু নয়, বড় পরিচিত প্রেক্ষাপট। একজন বয়স্ক ব্যক্তি তার পুত্রবধূকে নিয়ে নৌকায় করে মুক্তাঞ্চলের দিকে যাচ্ছেন। তার পুত্র এবং নাতি দু’জনকেই মেরে ফেলেছে পাকিস্তানিরা। অর্থাৎ পরবর্তী দুই প্রজন্ম হারানোর ব্যথা বুকে নিয়ে তিনি যাচ্ছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। পুত্রবধূ রাত্রী ব্যথায় পাথর। কিন্তু শ্বশুড় আর পুত্রবধূ নয়, তারা বাবা ও কন্যা হয়ে উঠেছেন ক্রমশ। তাদের এই নৌকায় ঠাঁই নিয়েছে আরো কিছু চরিত্র। জার্মানি থেকে আসা তরুণ ইঞ্জিনিয়ার নৌকায় বসে কেবল রেডিও শোনে। সেও হারিয়েছে পরিবারের সবাইকে। তরুণ পীতাম্বর এ নৌকায় আসে তার অন্ধ বাবা ও আর বৃদ্ধা পিসিমাকে নিয়ে। আসেন মওলানা মুসলেম উদ্দিন তার অন্তসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে। সদ্য বিবাহিতা তরুণী আশালতাও নৌকায় ঠাঁই নেয় তার স্বামী, শ্বাশুড়িসহ। দুই নারী, তাদের শিশুও নৌকায় ঠাঁই নেয়।

বৃদ্ধ, শিশু, তরুণ, তরুণী, অন্ধ, এমনকি গবাদি পশুও ঠাঁই পায় এই নৌকায়। এ যেন নুহের নৌকা। সবাইকে নিয়ে বিপদ পারের তরণী। এই নৌকা যাত্রাটি বেশ প্রতীকী। কখনো নৌকা চরে আটকে যায়, কখনো নৌকার ইঞ্জিন নষ্ট হয়, কখনো নৌকার পাখা নষ্ট হয়, তবু নৌকা এগিয়ে চলে, কখনো রাজাকারদের পাল্লায় পড়ে নৌকা, তবু শেষ পর্যন্ত এই নৌকা চলতে থাকে মুক্তাঞ্চলের দিকে।

এই নৌকাতেই একসময় গানের দল এসে আশ্রয় নেয়। পরে জানা যায়, গানের দল সেজে থাকা এই মানুষগুলো মুক্তিযোদ্ধা। তারা একটি অপারেশনের কাজে এই নৌকা ব্যবহার করে। শুধু তাই নয়, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যাওয়া পলাতক মানুষগুলোও এক সময় মুক্তিযুদ্ধের অংশ হয়ে ওঠে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানি লঞ্চ উড়িয়ে দেওয়ায় অংশগ্রহণ করে। এই লড়াইয়ে আশালতার মৃত্যু হয়, কিন্তু মৃত্যুকালে সে দেখে যায় অদূরেই উড়ছে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

এই গল্পটি নৌকা চলার গতিতেই এগিয়ে নিয়েছেন হ‌ুমায়ূন আহমেদ। নদীমাতৃক বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সাহসী ও ভিতু মানুষ, এ দেশের মানুষের ধর্মীয় সংকট, সংশয় এবং সম্প্রীতির মতো বিষয়গুলো ওঠে এসেছে ‘শ্যামল ছায়া’য়। নৌকা ভাড়া করেছেন যে বয়স্ক ব্যক্তি তিনি এই নৌকা থেকে হিন্দুদের নেমে যেতে বলেন। তারা অনুনয় করে যে এই বিপদে যেন আশ্রয় পায়। তাদের পক্ষে কথা বলেন মওলানা। তিনি বলেন, ‘জনাব আমরা সবাই গজবের মধ্যে আছি। বিপদে একজন যদি আরেকজনকে সাহায্য না করি আল্লাপাক নারাজ হবেন। আমাদের উপরে আরো বড় বিপদ নাজেল হবে।’

ঠিক এইখানে মওলানা চরিত্রে রিয়াজের এই সংলাপ প্রক্ষেপণে ‘শ্যামল ছায়া’ আমাদের সহাবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। প্রসঙ্গত মনে পড়ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্পষ্টতই বলেছিলেন, ‘এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি-ননবাঙালি যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপরে, আমাদের যেন বদনাম না হয়, মনে রাখবেন।’ আজ যখন একজন পাহাড়ির উপর অন্যায় হয়, একজন হিন্দুর উপর আক্রমণ হয়, তখন আদতে আমাদের বদনামই হয়। কেননা, যুগ যুগ ধরে প্রীতি ও সম্মীলনের সহাবস্থানের ঐতিহ্য আমাদের ছিল। আমি নিজে মহরমের হালুয়া রুটি হিন্দু বন্ধুদের খাইয়েছি, তাদের পূজায় নাড়ু, মোয়া খেয়েছি। আমাদের গেছে যে দিন তা কি একেবারেই গেছে? কিন্তু রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে। অন্তত শ্যামল ছায়া চলচ্ছবিতে আমরা দেখি, একজন মওলানা ‘মানুষ মানুষের ভাই’ সেই দায়িত্বই পালন করেন। কিন্তু আমরা কি এই দায়িত্ব পালন করছি আজ?

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় অবলোকন করা যাক। সবগুলো ঘটনাই সম্প্রতি আলোচিত। লালমনিরহাটে কোরআন অবমাননার অভিযোগে শহীদুন্নবী জুয়েল নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে এবং তারপর আগুনে পোড়ানো হয়েছে তাকে। পার্বতীপুরে রেলওয়ে থানা পুশিল দিপ্তী রাণী দাস নামের এক কলেজ ছাত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে ধর্ম অবমানার অভিযোগে। এমন আরো অসংখ্য ঘটনার উদাহরণ দেওয়া যায়। যেসব উদাহরণ থেকে বলা যায়, ভালো নেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সোনার বাংলা হয়নি, বাংলাদেশের মানুষ শ্যামল ছায়া পায়নি। আর এই না-পাওয়া, না-হওয়ার বড় কারণটি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা।

শ্যামল ছায়া চলচ্চিত্রে আমরা দেখতে পাই নৌকা বয়ে চলছে, নদী তীরের মসজিদ থেকে আজান ভেসে আসছে। আবার আশালতাকে দেখি শাঁখ বাজিয়ে পূজার আয়োজন করছে। বয়স্ক সেই ব্যক্তি তখন চেচিয়ে ওঠেন, ‘এরা তো দেখি নৌকাটারে একটা মন্দির বানাই ফেলছে। এদের কি কোনো বুদ্ধি নাই! এই তোমরা সব পানিতে ফেলো। ফেলো, ফেলো, সব ফেলো!’ তখন আবার মওলানা একজন সহনশীল ও বিচক্ষণ মুসলমানের মতোই বলে ওঠেন, ‘জনাব আল্লাপাক বলেছেন, লাকুম দ্বিনুকুম ওয়াল ইয়াদ্বীন।’

প্রবীণ ব্যক্তি মওলানাকে চুপ করতে বলেন। আশালতার আলতার শিশির মতো, তার শাঁখও নদী গর্ভে চলে যায়। আমরা হাস্যকরভাবে দেখি আশালতার স্বামী ধুতির সঙ্গে টুপি পরে আছে। এই ধুতি-টুপির আপাত হাস্যকর মেলবন্ধনের আড়ালে হুমায়ূন আহমেদ আমাদেরকে সহাবস্থানের শিক্ষা দেন।

আমার বিবেচনায় ‘শ্যামল ছায়া’র এই মওলানা চরিত্রটি বাংলাদেশের চলচ্ছবিতে এক অভিনব সংযোজন। শুধু এই চরিত্রের কারণেই এই চলচ্ছবিটি প্রত্যেক মুসলমানের দেখা উচিত। রাজাকারকে যখন নৌকার মাঝিরা বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেয় তখন মওলানা ঝাপ দিয়ে তাকে প্রাণে বাঁচায়। পরবর্তীতে এই রাজাকারই নৌকার যাত্রীদের বাঁচিয়ে দেয় পাকিস্তানি আর্মিদের হাত থেকে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পুরো চলচ্ছবিতেই আমরা দেখতে পাই সহাবস্থান ও সম্প্রীতির শ্যামল ছায়া। আদতে আমাদের এখন আবার বুঝে নেবার সময় এসেছে যে, কোনো ধর্মই বিদ্বেষ আর ঘৃণার ধর্ম নয়, শান্তি আর সম্প্রীতির সঙ্গে সব ধর্মই একত্রে থাকতে পারে। অন্তত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল সুরটি তো এমনই ছিলো।  ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্লোগান ছিলো:

‘বাংলার হিন্দু
বাংলার খ্রীস্টান
বাংলার বৌদ্ধ
বাংলার মুসলমান
আমরা সবাই
বাঙালি।’

 

এই বাঙালি চেতনার সম্মীলন দেখতে পাই ‘শ্যামল ছায়া’য়। এই বাঙালি চেতনার বিকাশ দেখতে চেয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার স্বপ্নের সোনার বাংলায়। ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তার আরেক ভাষণে বলেন, ‘বাংলার মাটিতে সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃস্টান বাংলাদেশে যাঁরা বসবাস করেন, তাঁরা সকলেই এ দেশের নাগরিক। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁরা সম-অধিকার ভোগ করবেন।’

সম-অধিকার, সম্প্রীতি তখনই তৈরি হয়, প্রতিষ্ঠা পায়, যখন আমরা মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াই। হ‌ুমায়ূন আহমেদের শ্যামল ছায়া চলচ্চিত্রে বারবার আমরা এটাই দেখি যে, মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। যে মওলানাকে শুরুতে আমরা অপছন্দ করি, এ দেশের অনেক ধর্মান্ধের মতো যে মওলানা পাকিস্তান এক থাকুক চায় এই যুক্তিতে যে ‘মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই’; সেই মওলানার ভ্রান্তি অবশেষে কাটে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আর রাজাকারদের নৃশংসতা সে দেখে। সে উপলব্ধি করে এই বর্বরতার ঠাঁই ইসলাম ধর্মে নেই।

মওলানা যখন নিঁখোজ হয় নদীতীরে আপাদমস্তক বোরখায় ঢাকায় মওলানার স্ত্রী কোরআন পাঠ করতে বসেন। তখন আমরা দেখি একজন হিন্দু পীতাম্বর তার মাথায় ছাতি ধরে। আশালতাকে যখন রাজাকার নৌকা থেকে নামিয়ে নিয়ে যেতে চায় তখন আমরা দেখি রাত্রি আর অন্যান্য নারীরা রাজাকারকে আক্রমণ করে। আশালতা যখন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর মুখে তখন আমরা দেখি মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার তার দলবলসহ মোনাজাত করতে বসে। তারও আগে আমরা দেখি নৌকা যাত্রার সূচনায় মওলানা যখন দোয়া করতে শুরু করে আশালতাও মোনাজাতের জন্যে হাত তোলে। এই আশালতা মৃত্যুর সময় বোরখার মুখ খুলতে বলেন মওলানার স্ত্রীকে। তার মুখ দেখে বলেন, কী সুন্দর! কী সুন্দর! মানুষের মুখের মধ্যে, মানুষের বুকের মধ্যে, মানুষের মিলনের মধ্যে যে সুন্দর, দিন শেষে আমাদের নৌকা সেই শ্যামল ছায়ার দিকে এগোয়। আশালতার মৃত্যুকালে আমরা এটা আর মনে রাখি না, রাখতে চাই না যে একজন হিন্দুর মৃত্যু হচ্ছে। হিন্দু নয়, মুসলিম নয়, যে জন্মায় সে মানুষ, যে মরে সে-ও মানুষ। মাঝখানে ধর্মের বিভাজনে আমরা কেবলই সহিংসতা বাড়াই। হিন্দু-মুসলিম, জাতি-উপজাতি- এইসব বিভাজন দূর হয়ে আমরা একদিন শ্যামল ছায়ায় পৌঁছাতে চাই। সেই যাত্রার দিক নির্দেশনা হ‌ুমায়ূন আমাদের চলচ্ছবিতে দেখতে পাই। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন বাংলাদেশের তরুণ মওলানারা এ ছবি নিজে দেখবেন এবং অন্যদের দেখতে উৎসাহীত করবেন। আর আমরা সবাই মানুষের বিপদে, মৃত্যুতে, আনন্দে, বিষাদে মানুষের পাশে দাঁড়াবো। সোনার বাংলায় শান্তি হয়ে আসবে ‘শ্যামল ছায়া’। 

চলচ্চিত্র : শ্যামল ছায়া
মুক্তি : ২০০৪ সাল
দৈর্ঘ : ১১০ মিনিট
কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও পরিচালনা: হ‌ুমায়ূন আহমেদ
সংগীত : মকসুদ জামিল মিন্টু
সম্পাদনা : আতিকুর রহমান মল্লিক
চিত্রগ্রহণ : আনোয়ার হোসেন
অভিনয় : হুমায়ুন ফরিদী, চ্যালেঞ্জার, রিয়াজ, তানিয়া আহমেদ, ফারুক আহমেদ, এজাজুল ইসলাম, আহমেদ রুবেল, স্বাধীন, শিমুল

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়