ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

পাপিয়া ও সুমন নরসিংদীতে টক অব দ্য টাউন (ভিডিও)

গাজী হানিফ মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাপিয়া ও সুমন নরসিংদীতে টক অব দ্য টাউন (ভিডিও)

ঢাকায় গ্রেপ্তারের পর শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন নরসিংদীতে এখন টক অব দ্য টাউন।

রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় তাদের জমজমাট নারী ব্যবসাসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত খবর নরসিংদীর মানুষের মুখে মুখে।

শুধু গত একমাসেই এ নারী রাজধানীর অভিজাত এক পাঁচ তারকা হোটেলে বিশাল অঙ্কের বিল পরিশোধ করেছেন। আর এ অর্থ খরচের কারণেই গোয়েন্দাদের চোখ পড়ে পাপিয়ার ওপর। র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে তাদের সব অপকর্মের তথ্য। এরপর থেকেই পাপিয়া ও সুমনের নেপথ্যের কাহিনী গণমাধ্যমে আসার পর এই দম্পতির কথা এখন ‘টক অব দ্য টাউন’।

গত শনিবার পাপিয়া ও স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন, সাব্বির খন্দকার (২৯), শেখ তায়্যিবা (২২)সহ আরও দুই জন বিদেশে যাওয়ার প্রাক্কালে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব। এই ঘটনার পর থেকে বেরিয়ে আসা তাদের নানান অপকর্মে চাঞ্চল্যকর তথ্য এখানে অনেকের কাছেই বিস্ময়।

র‌্যাবের ভাষ্য, এই পাপিয়া এমন কোন অপকর্ম নেই, যার সঙ্গে জড়িত নন। পাঁচ তারকা হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসাই তার আয়ের মূল উৎস। দেশের অভিজাত কিছু মানুষ ও বিদেশিরাই এর গ্রাহক। ইন্টারনেটে স্কট সার্ভিস খুলে বসে খদ্দেরদের কাছে তাদের চাহিদামতো সুন্দরী তরুণী পাঠাতেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষিত সুন্দরী তরুণীদের সংগ্রহ করতেন। একপর্যায়ে তাদেরকে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের শয্যাসঙ্গী করতেন পাপিয়া। পাপিয়া একাধিক অভিজাত হোটেলের রুম ভাড়া নিতেন নামে-বেনামে।

পাপিয়ার সব কর্মকান্ডের অন্যতম অংশীদার তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন। এক সময় নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের আহবায়ক ছিলেন সুমন। পরে ছিলেন নরসিংদীর প্রয়াত পৌর মেয়র লোকমান হোসেনের বডিগার্ড।

এদিকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর রোববার র‌্যাবের একটি দল তাদের ঢাকা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করে।

অপরদিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে যুব মহিলা লীগের নরসিংদী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়াকে আজীবনের জন্য সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। রোববার সংগঠনের সভাপতি নাজমা আক্তার এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০০ সালের দিকে মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমনের উত্থান শুরু। শৈশব থেকেই চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও ব্ল্যাকমেইল ছিল সুমনের প্রধান হবি। দূরদর্শী এ সুমন রাজনীতিবিদদের সঙ্গেও সখ্য গড়ে তোলেন। ২০০১ সালে পৌরসভার কমিশনার মানিক মিয়াকে শহরের ভেলানগরে যাত্রা প্যান্ডেলে গিয়ে হত্যার পর তিনি আলোচনায় আসেন। ওই হত্যাকান্ডের এজাহারভুক্ত আসামি সুমন ওরফে মতি সুমন। এভাবে হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের উপর ভর করে তার উত্থান।

২০০৯ সালে প্রেমের সম্পর্কে পাপিয়াকে বিয়ে করেন সুমন। সুমনকে বিয়ের পর পাপিয়া রাজনীতিতে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন। লোকমান হত্যাকান্ডের বছর তিনেক পর পাপিয়ার উপর সন্ত্রাসী হামলা হয়। ওই সময় পাপিয়াকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এরপর তারা নরসিংদী ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। এরপর থেকে পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন ওরফে মতি সুমন রাজধানীর সাবেক এক সংরক্ষিত আসনের এমপির আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ওই এমপির সঙ্গে তার গাড়ির ব্যবসা আছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর জেলা যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে তৌহিদা সরকার রুনা সভাপতি ও পাপিয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর পর থেকেই তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় নেত্রী হিসেবেও পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়ের আড়ালে ছিল তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।

নরসিংদীর শহরের ভাগদী এলাকায় কেএমসি কার ওয়াশ নামে একটি গাড়ির সার্ভিস সেন্টার রয়েছে সুমনের। রয়েছে সুমন ও তার স্ত্রী পাপিয়ার বিশাল কর্মীবাহিনী। মাঝেমধ্যেই তারা বিশাল শোডাউন দেন আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে। সুমন ঢাকায় সন্ত্রাসের পাশাপাশি অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেও সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

নরসিংদী জেলা শহরে ভাগদী মারকাজ মসজিদ এলাকায় পাপিয়ার পিতা সাইফুল বারীর বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একটি দোতালা পাকা বাড়ি তার পিতার। তার শ্বশুরবাড়ি ব্রাহ্মন্দীতে চারতলা একটি বাড়ি আছে। রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে ‘রওশন ডমিনো রিলিভো’ বিলাসবহুল ভবনে তার ও তার স্বামীর নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

এছাড়া তার কালো ও সাদা রঙের দুটি হায়েস মাইক্রোবাস, একটি হ্যারিয়ার, একটি নোয়া ও একটি ভিজেল কার আছে। সুমনের মালিকানায় থাইল্যান্ডে একটি বারও আছে বলে জানা গেছে। রাজধানীর এফডিসি গেটের সঙ্গে ‘কার এক্সচেঞ্জ’ নামে তাদের একটি গাড়ির শোরুম আছে বলে জানা গেছে।

নরসিংদীর শহরের ব্রাক্ষন্দীতে পাপিয়ার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে বাড়ির দারোয়ান জানান, বাসার সবাই ঢাকা চলে গেছে।

এদিকে পাপিয়ার বাবার বাড়ি ভাগদীতে গিয়ে জানা যায়, পাপিয়া আর সুমন প্রায়ই রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কারণে নরসিংদী আসতেন। তবে কি কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা জানেন না বলে জানান তার পিতা সাইফুল বারী। রোববার সকালে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে তাদের সম্পর্কে জানতে চান বলে জানান তিনি। তবে এলাকাবাসি তাদের সম্পর্কে ভয়ে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।

এদিকে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি তৌহিদা সরকার রুনা বলেন, পাপিয়া যদিও তার সাথে কমিটির সাধারণ সম্পাদক, ব্যক্তিগতভাবে তার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। তাছাড়া পাপিয়া সাধারণ সম্পাদক হলেও দলীয় কর্মকান্ডের দুই একটা সভা ছাড়া তেমন কোন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেননি।

নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিন ভূইয়ার কাছে তাদের বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা সুমন ও পাপিয়ার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এই জায়গায় রাজনৈতিক কোন বিষয় জড়িত নয়। তারা রাজনৈতিক পরিচয়ে নাম ভাঙ্গিয়ে ঢাকায় কি করছে সেটা দেখার কোন সুযোগ আমাদের নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করেছে তারাই সব বের করবে। আর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।




নরসিংদী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়