মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ, অভাবে কানের দুল বেচে দিয়েছেন সায়রা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
একাত্তরের রণাঙ্গনের বীরকন্যা সায়রা বেগমের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ হয়ে আছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে। ফলে মানবেতর দিন কাটছে তার।
গত ৭ মাস ধরেই ভাতাহীন এই বীরকন্যা। এরমধ্যে অনেক ছোটাছুটি করেও ফল পাননি তিনি। অভাবের কারণে কয়েকদিন আগে শেষ সম্বল কানের সোনার দুলও বিক্রি করে দিয়েছেন। এরপর কী হবে, তা ভেবে শঙ্কায় রয়েছেন সায়রা বেগম।
রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) আলাপকালে সায়রা বেগম বলেন, ৭ মাস ভাতা বন্ধ, বৃদ্ধ মা, স্বামী পরিত্যক্তা কন্যা ও নাতনিকে নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। দীর্ঘদিন ভাতা বন্ধ হওয়ায় বাড়ির পাশের দোকান থেকে বাকি নিয়ে সংসার চালাচ্ছি। কয়েকদিন আগে দোকানদার টাকার জন্য চাপ দিলে লজ্জায় শরীরের শেষ সম্বল স্বর্ণের কানের দুল বিক্রি করে দোকানের বাকি শোধ করেছি।
কিন্তু তারপর কী হবে? এই চিন্তায় রাতে ঘুম হয়না বলে জানান সায়েরা বেগম।
সরেজমিনে দেখা যায়, সায়েরা বেগমের বসবাসের ঘরটিও জরাজীর্ণ। টিনের চালায় অসংখ্য ফুটো। তিনি দুঃখ করে বলেন, বাড়িতে পল্লী বিদ্যুতের মিটারের জায়গাটি কয়েকদিন পরপর খুলে যায়। পরে অনেক টাকা দিয়ে কাজ করানো লাগে। অনেকবার স্থানীয় পল্লী বিদ্যুত অফিসে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে অভিযোগটি দিলেও তারা এসে আমার বিদ্যুতের কাজটি করে দিয়ে যায়নি। এখন ভাতা না পাইলে আমি কি খামু বৃষ্টি বাদলার দিনে এ ঘরে কেমনে থাকমু। বলে কান্না শুরু করে দেন সায়েরা বেগম।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় সায়রা বেগম ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান। কিন্তু চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহের নিগার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীর টেলিফোনিক নির্দেশের উদ্ধৃতি দিয়ে সায়রা বেগমসহ বিজয়নগর উপজেলার ৬১ জন মুক্তিযোদ্ধার ভাতা স্থগিত করেন এবং একই চিঠিতে তাদেরকে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে গৃহীত ভাতা ফেরৎ দেওয়ারও নির্দেশ দেন। সেই থেকেই ভাতা বন্ধ হয়ে যায় তার।
বিজয়নগর উপজেলার সাবেক কমান্ডার হাবিলদার তারা মিয়া বলেন, সায়েরা বেগম একজন সাহসী নারী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের ৩নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সাঈদকে যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর কাছ থেকে তথ্য এনে মুক্তিবাহিনীদের কাছে এনে দেওয়াসহ অনেক সাহায্য সহযোগীতা করেন সায়েরা বেগম। ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সায়েরা বেগমসহ সবারই সমস্যা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন মন্ত্রণালয় দ্রুতই ভাতা চালু করে দিবেন।
বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে.এম. ইয়াসির আরাফাত বলেন, উপজেলায় আমি নতুন এসেছি, সায়েরা বেগম এসেছিলো আমার কাছে। ভাতার ব্যাপারটা মন্ত্রণালয়ের কাছে। শুনেছি মুক্তিযোদ্ধারা আপিলও করেছে। সায়েরা বেগমের ব্যাপারে আমার সুদৃষ্টি থাকবে।
রুবেল/টিপু
আরো পড়ুন