ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘দোহাই লাগে, আপনারা আমাক বাঁচান’

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ১ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৩:৪৬, ১ জুলাই ২০২১
‘দোহাই লাগে, আপনারা আমাক বাঁচান’

রিতা খাতুন (ছবি: রাইজিংবিডি)

‘উইঠে দাঁড়াবের পারি ন্যা। হাত-পা কাঁপে, অবশ হয়া আসে। শক্তি পাই ন্যা। মাথার মধ্যি এত যন্ত্রণা করে, যেন মইরে যাই। আমি বাঁইচপের চাই, এত অল্প বয়সে মরবের চাই ন্যা। দোহাই লাগে আপনারা আমাক বাঁচান।’

এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাঁচার আকুতি জানান ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত গৃহবধূ রিতা খাতুন (২৩)। তার বাড়ি পাবনার চাটমোহরের মথুরাপুর ইউনিয়নের আনকুটিয়া গ্রামে। তার স্বামীর নাম মো. শামীম হোসেন।

শামীম হোসেন জানান, তিনি একজন রিকশাচালক। দুই বছর আগে স্ত্রী রিতার ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। এরপর সহায় সম্বল বিক্রি করে চিকিৎসা করানো হয়। এখন তার অপারেশন করতে প্রয়োজন প্রায় ৩ লাখ টাকা। যা সংগ্রহ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই স্ত্রীর চিকিৎসার জন‌্য তিনি দেশবাসীর সাহায‌্য চান। 

শামীম হোসেন বলেন, ‘বছর পাঁচেক আগে বৃষ্টির মধ্যে বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে কপালের উপরিভাগে আঘাত পান রিতা। আঘাতের জায়গা ফুলে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসায় কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেন। এর ৩-৪ মাস পর রান্না ঘরে ঢোকার সময় পাশেই থাকা গাছের সঙ্গে একই জায়গায় আবারও আঘাত পান রিতা। তারপর থেকে যন্ত্রণা শুরু। এখন কপালের উপরিভাগ ফুলে উঠেছে।’ 

তিনি জানান, ২০১৯ সাল থেকে তাকে পাবনা, রাজশাহী ও ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সে হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানো হয়েছে। সিটি স্ক্যান, এমআরআইসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয়।  চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রিতার ব্রেইন টিউমার হয়েছে। এটা শুধু আঘাত থেকে হয়নি, অনেকদিন ধরেই তিনি আক্রান্ত, কিন্তু কম থাকায় বুঝতে পারেনি। চিকিৎসকরা এখন দ্রুত অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছেন।

রিতা খাতুন ও তার স্বামী শামীম 

রিতার চিকিৎসার খরচের বিষয়ে শামীম বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে রিতার চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। জমিজমা কিছু নেই। চিকিৎসা করাতে গিয়ে ৪০ হাজার টাকার একটি ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান মাত্র ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। তারপর ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যাটারিচালিত বোরাক গাড়ি কিনেছিলাম তাও ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। এছাড়া, এনজিও থেকে ৩০ হাজার ঋণ নিয়েছিলাম। এখন দিন এনে দিন খাই। এটাও কোনো সমস‌্যা না। আমি শুধু চাই, আমার স্ত্রী সুস্থ হোক।’ 

রিতা খাতুন বলেন, ‘কোনো কিছুতেই এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি পাই ন্যা। আমি এত অল্প বয়সে এত কঠিন রোগে ভুগতেছি। আমার তো পুরো জীবনডা সামনে পইড়ে আছে। আমারও তো মন চাই, সুন্দর স্বাভাবিক জীবন নিয়ে বাঁইচে থাকতে। আমাক আপনারা বাঁচান।’

এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সৈকত ইসলাম বলেন, ‘এ খবর আপানার মাধ‌্যমে শুনলাম। বিষয়টি কষ্টদায়ক। পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে উপজেলা প্রশাসন।’ তিনি শামীম হোসেনকে একটি আবেদন করতে বলেন।

সমাজের বিত্তবান, দয়ালুদের একটু সহানুভূতি, ভালোবাসা ও সহযোগিতা পেলে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে রিতা খাতুন। তিন লাখ টাকার যোগাড় হলেই পূরণ হবে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন। সহযোগিতার হাত বাড়াতে যোগাযোগ করতে পারেন শামীম হোসেনের সঙ্গে ০১৭৫৯-৪১২৬৩৮ (বিকাশ, পার্সোনাল) এই নম্বরে।

পাবনা/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ