ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মোহনের গান-বাঁশির সুরে মুগ্ধ পথিকেরা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৫, ২৯ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৮:৫৩, ২৯ আগস্ট ২০২১

জন্ম থেকে তিনি দুই চোখে দেখতে পান না। পথের ধারে, বাসে, হাট-বাজারে গান গেয়ে সংসার চালান মোহন সরকার (৬৩)। তিনি গান আর বাঁশির জাদুতে মুগ্ধ করেন পথের মানুষকে। 

মোহন সরকারের গ্রামের বাড়ি শেরপুর সদরের নন্দির বাজার এলাকায়। তিন ছেলে- মেয়ের লেখাপড়া আর সংসার চালানোর খরচ জোটান এই সূরের মূর্ছনায়। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশে আয়েস মার্কেট এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। সকালে বাসা থেকে বের হয়ে আশপাশের এলাকায় গান করেন।

আরো পড়ুন:

শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সকালে মৌচাকে কথা হয় তার সঙ্গে। শুনতে চাইলাম গান। তিনি বলেন, ‘কী গান শুনতে চান?’ বললাম, ‘আপনার পছন্দের গান দিয়ে শুরু করেন।’ সঙ্গে সঙ্গে দোতারা হাতে তুলে নিয়ে গাইতে শুরু করলেন, ‘একদিন মাটির ভেতরে হবে ঘর, ও মন আমার কেন বান্দিস দালানঘর…।’ গান আর বাঁশির সুর শুনে আশপাশ থেকে ছুটে এলো শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। 

এরপর গাইলেন নজরুল সংগীত। বললেন সুখ-দুঃখের হাজারও স্মৃতি। পরে দোতারা রেখে হাতে নিলেন বাঁশের বাঁশি। বাঁশিতে যেন জাদুর ছোয়া। চেহারায় বয়সের ছাপ থাকলেও বাঁশি আর কণ্ঠে এখনও যৌবনের ছাপ স্পষ্ট। 

মোহন সরকারের এক মেয়ে দুই ছেলে। মেয়ে দিলরুবা আক্তার চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক্যাল থেকে ইলেকট্রনিকসে ডিপ্লোমা শেষ করেছে। বড় ছেলে রতন সরকার টাইলস মিস্ত্রির কাজ করে। ছোট ছেলে দ্রুব স্থানীয় কলেজে পড়াশোনা করে।

মোহন সরকার অল্প বয়সে হারিয়েছে মাকে। এরপর বাবা বিয়ে করেন আরেকটা। ঘরে সৎমা আসার পর মোহন সরকারের জীবনটাই পাল্টে যায়। একে চোখে দেখেন না, তার ওপর সৎমায়ের অত্যাচার। ভাইযেরা মারধর করতেন। সারা দিন সংসারের কাজ করাতেন সৎমা। গরু-ছাগল চরানো থেকে শুরু করে বাড়ির কাজের লোকদের দেখভাল করতে হতো মোহন সরকারকে। তার গানের নেশা ছিলো ছোটবেলা থেকে। একটু অবসর পেলে গ্রামের চাঁন মিয়ার কাছে গিয়ে বাঁশি বাজাতে শিখতেন। স্কুলের মাঠে বসে গান গাইলে বা বাঁশি বাজালে ছাত্ররা টিফিন খাওয়াতো। মোহন তখন থেকে বুঝতে পারেন- গানের সম্মান আছে। তাই চেষ্টা চালিয়ে যান সুরের সাধনায়।

মোহন সরকার বললেন, ‘গানের প্রতি মায়া রয়েছে। মনের দুঃখগুলো গানের মাধ্যমে ভুলে থাকি। গান যেন আমার আরেকটি প্রাণ। গান আর বাঁশির সুরের জন্য মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, সেটুকুই আমার সম্বল। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পেশার মানুষ আমাকে সহায়তা করে।’ 

শেষপর্যন্ত সুরের সঙ্গেই থাকতে চান বলে জানান মোহন সরকার।

রেজাউল/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়