ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাঙালির বীরত্ব প্রকাশ করে ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ০৯:৫৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত দেশের প্রথম ভাস্কর্য জাগ্রত চৌরঙ্গী। গাজীপুরস্থ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা সড়কদ্বীপের মাঝে এই ভাস্কর্য। উদোম গায়ে ভাজ করে লুঙ্গী পরা টগবগে পেশীবহুল এক যুবক মাথা উঁচু করে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। তার ডান হাতে তাজা গ্রেনেড আর বাম হাতে রাইফেল।

১৯৭৩ সালে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন ভাস্কর আব্দুর রাজ্জাক। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ গাজীপুরে সংঘটিত প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামের চেতনায় নির্মিত এই ভাস্কর্য। বেদিসহ এর উচ্চতা ৪২ ফুট ২ ইঞ্চি। ২৪ ফুট ৫ ইঞ্চি বেদির ওপর মূল ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১৭ ফুট ৯ ইঞ্চি। ভাস্কর্যের বেদিতে ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩ নম্বর সেক্টরের ১০০ জন ও ১১ নম্বর সেক্টরের ১০৭ জন শহীদ সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে।

আরো পড়ুন:

১৫ মার্চ ১৯৭১ সালের মধ্যে সব অস্ত্র বেঙ্গল রেজিমেন্টের রাইফেল সদর দপ্তরে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাক-হানাদার বাহিনী ওই সময় অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিল। ষড়যন্ত্র চলছিল বাঙালি সেনাদের নিরস্ত্র করার। বাঙালি স্পষ্টই ধরতে পেরেছিল পাকিস্তানিদের চতুরতা। আর তাই তারা অস্ত্র জমা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

১৯ মার্চ, ১৯৭১। পাকিস্তানের ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব দলবলসহ চলে আসেন জয়দেবপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ির দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যান্টনমেন্টে। খবর পেয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন জয়দেবপুর ও টঙ্গীর শ্রমিক-জনতা। তখন যার কাছে যা ছিল তাই নিয়েই এগিয়ে আসেন পাক সেনাদের প্রতিহত করতে। তখন চান্দনা-চৌরাস্তা ও মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ইট, গাছের গুঁড়ি, ঠেলাগাড়ি দিয়ে প্রায় ৪০-৫০টি ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। এসময় জয়দেবপুর বাজার বটতলায় বিশাল জমায়েত হয় সাধারণ জনতার। নেতৃত্বে ছিল মুক্তিসংগ্রাম পরিষদ। জনতার হাতে ছিল লাঠি, রামদা, তীর-ধনুক ও বল্লম।

বিপুলসংখ্যক মানুষের এই প্রতিরোধ পাকিস্তানি হানাদারদের বাধ্য করে পিছু হটতে। অস্ত্র না নিয়েই ফিরতে বাধ্য হয় পাক বাহিনী। ফেরার পথে জয়দেবপুর রেললাইনের অবরোধ সরাতে গেলে সংঘর্ষ হয় জনতার সাথে। পাক সেনাদের গুলিতে শহিদ হন নেয়ামত আলী ও মনু খলিফাসহ কয়েকজন। এরপরই ফুঁসে ওঠে জনতা। একে একে জড়ো হতে থাকেন তারা। ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।

অবস্থা বেগতিক দেখে মাইকে কারফিউ ঘোষণা করে পাকিস্তানিরা। কিন্তু ততক্ষণে চান্দনা চৌরাস্তায় আবারও সাধারণ জনতার প্রতিরোধের মুখে পড়ে পাকসেনারা। জনতার ভিড়ে, অসংখ্য সাহসী তরুণের মাঝে একজন ছিলেন গাজীপুরের ফুটবল খেলোয়াড় ভোগরা নিবাসী হুরমত ওরফে হুরমতুল্লাহ। তিনি খালি হাতেই ঝাঁপিয়ে পড়েন একজন পাক সেনার উপর। ছিনিয়ে নেন তার হাতের রাইফেল। সে সময় ঘটনাস্থলে আহত হন কানু মিয়া, পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

১৯ মার্চের সেই প্রতিরোধের স্মরণে নির্মিত হয় ভাস্কর্য ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’। ১০০ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন ভাস্কর্যটি অনেক দূর থেকে চোখে পড়ে। এটি দেখে এই প্রজন্মের বুক ভরে আসে বিজয়ের অহংকারে।

/মাহি/

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়