ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দর্শক খরায় বন্ধ কক্সবাজারের সব সিনেমা হল

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৯, ২০ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১৬:২৩, ২০ আগস্ট ২০২২
দর্শক খরায় বন্ধ কক্সবাজারের সব সিনেমা হল

কক্সবাজারের বিনোদনের অন্যতম স্থান টকি হাউজ, দিগন্ত সিনেমা হল অনেক আগেই বন্ধ হয়েছে। টকি হাউজের নামটি দেয়ালে লিখা থাকলেও নেই দিগন্তের শেষ চিহ্ন টুকুও। একমাত্র কক্সবাজার সদর ও টেকনাফে বিজিবি অডিটোরিয়াম সিনেমা হল চালু ছিল। কিন্তু দর্শক খরায় সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে ৩ বছর আগে। 

কক্সবাজারে মানুষের বিনোদনের জন্য ১৯৬৮ সালে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে নির্মিত হয় টকি হাউজ সিনেমা হল। পরে ১৯৯৬ সালে আলীর জাঁহালে এবং টেকনাফ সদরে তৎকালীন বিডিআর অডিটোরিয়াম নির্মিত করা হয়। কক্সবাজার সদর বিডিআর অডিটোরিয়াম উদ্বোধন করেন তৎকালীন চট্টগ্রামের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মাহবুবুর রহমান।

কালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন সিনেমা প্রদর্শনের মাধ্যমে হল ভর্তি দর্শক নিয়ে চলে আসছিল সিনেমা হলগুলো। কিন্তু এখন থেকে সাড়ে ৯ বছর আগে বন্ধ হয়ে যায় শহরের টকি হাউজ সিনেমা হল। একইসঙ্গে বন্ধ হয় দিগন্ত সিনেমা হলও। এরপর জেলায় মাত্র দুটি সিনেমা হল সদর ও টেকনাফের বিজিবি অডিটোরিয়ামে দর্শকপূর্ণ ভাবে সিনেমা চলতো।

কিন্তু করোনার মহামারির ধাক্কায় এখন থেকে সাড়ে ৩ বছর আগে দর্শক খরায় বন্ধ হয়ে যায় এ দুটি সিনেমা হলও। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনলাইনে এখন সব ছবি দেখতে পায় দর্শকরা। এ ছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে সিনেমা হলে দর্শক খরা দেখা দিয়েছে।

টকি হাউজ সিনেমা ভবনের নিচে ৬০ বছর ধরে ব্যবসায় করে আসছেন বাদল কান্তি মহাজন। টকি হাউজ সিনেমার শুরু থেকে শেষ তার চোখের সামনে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, 'স্বাধীনতা যুদ্ধের ২ বছর আগে টকি সিনেমা হাউজ শুরু করে চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ী। কক্সবাজারের স্থানীয় হাফিজ মিয়ার ভবন ভাড়া নিয়ে এই সিনেমা হল শুরু করে তারা। এতদিন দর্শক সিনেমা দেখতে আসলেও বিজিবি অডিটোরিয়াম চালু হওয়ায় দর্শক সেদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। এভাবে আস্তে আস্তে এখন থেকে সাড়ে ৯ বছর আগে হলটি বন্ধ হয়ে যায়।'

ভবনের নিচে আবাসিক হোটেল মেমোরীর ম্যানেজার শহীদ হৃদয় বলেন, ‘সাড়ে ৯ বছর আগে আমি এই হোটলে যোগদান করে নায়ক আরেফিন শুভ'র একটা সিনেমা দেখেছিলাম। ওটাই টকি হাউজের শেষ সিনেমা। এরপর আর সিনেমা চলেনি।’ 

আলীর জাঁহাল বিজিবি অডিটোরিয়ামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকে তালা ঝুলানো। হলের লাগোয়া মিম কুলিং কর্ণারের স্বত্বাধিকারী বাবু বলেন, ‘চালু হওয়ার পর থেকে হাউজফুল দর্শক নিয়ে চলে আসছিল বিজিবি অডিটোরিয়াম। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে দর্শকরা আসতো সিনেমা দেখতে। আমার দোকানের বিক্রিও ভালো হতো। কিন্তু করোনা মহামারির পর থেকে হল বন্ধ। আমার আগের সেই ব্যবসাও নেই।’ 

টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার রাইজিংবিডিকে বলেন, করোনা মহামারির সময় বন্ধ হওয়ার পর থেকে বিজিবি অডিটোরিয়াম আর চালু হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার কারণে কিছু যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো ঠিক করা দরকার। পরবর্তী বাজেট সাপেক্ষে এটি চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে। 

কক্সবাজার জেলা নাট্য কেন্দ্রের সম্পাদক দীপক শর্মা দীপু রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবের কারণে সবকিছুই এখন হাতের মুঠোয়। অনলাইন মাধ্যমে বর্তমানে পারা যায় না এমন কোনো কাজ নেই। সিনেমাও ধীরে ধীরে মোবাইলে চলে এসেছে। আগে যেভাবে আনন্দ-উন্মাদনায় নতুন ছবি মুক্তি পেলে সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখা হতো, সেই রীতিটা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। নেটফ্লিক্স, হইচই, চরকি নামক কিছু অনলাইন পরিষেবার মাধ্যমে নতুন নতুন মুভি দেখে নেয় অনেকে। ফলে সিনেমার দর্শক দিন দিন কমে যাচ্ছে। কক্সবাজারে তো একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরও কিছু দর্শক আছে সিনেমা হলে গিয়ে মুভি দেখতে মজা পান। অন্তত বিনোদনের একটি আওতা হিসেবে সেই সমস্ত দর্শকদের জন্য পর্যটন নগরীতে সিনেমা হল থাকা দরকার বলে মনে করি।’ 

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়