টাঙ্গাইলে আ.লীগের সম্মেলনে গণপরিবহন বন্ধ, ভোগান্তি

জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের কারণে টাঙ্গাইলে সোমবার (৭ নভেম্বর) সকাল থেকে বাস, অটোরিকশাসহ সব গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন গন্তব্যের দিকে যেতে চাওয়া যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পরেন।

পরিবহন শ্রমিকরা জানান, জেলা শ্রমিক ফেডারেশন তাদের আওতাভুক্ত রিকশা শ্রমিক সমিতিসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন তাদের সদস্যদের সোমবার কাজ বন্ধ রেখে সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। তাই শহরে কোনো রিকশা, অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ যানবাহন চলাচল করছে না। এছাড়া জেলায় চলাচলকারী ৮৫০টি বাস বিভিন্ন উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সম্মেলনস্থলে আনার কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই টাঙ্গাইল থেকে জেলার সব রোডে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

দুপুরে সরেজমিন শহর ঘুরে দেখা যায়, যানবাহনের অভাবে হেঁটে মানুষ যাতায়াত করছেন। ভারী ব্যাগ নিয়ে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। 

শহরের জেনারেল হাসপাতালের সামনে গিয়ে দেখা যায়, দুই নারী ও এক বৃদ্ধ দুটি ভারী ব্যাগ নিয়ে নতুন বাসটার্মিনালের দিকে যাচ্ছেন। ওই বৃদ্ধের নাম আজগর আলী। বাড়ি কালিহাতী উপজেলায়। আজগর আলী বলেন, ‘তারা সম্মেলন করবো ভালো কথা, গাড়ি বন্ধ রাইখা আমাগো দুর্ভোগে ফালানোর কি দরকার।’

শহরের ঢাকা রোডে শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন মিছিল নিয়ে জড়ো হচ্ছেন। দুপুর পৌনে দুইটার দিকে কয়েক হাজার লোকের মিছিল সেখান থেকে সম্মেলনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

শহরের নতুন বাসটার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, পুরো টার্মিনালে একটি বাস-মিনিবাসও নেই। পরিবহণ শ্রমিকরা জড়ো হচ্ছেন সম্মেলনে যাওয়ার জন্য।

নতুন বাসটার্মিনালের কাউন্টারগুলো থেকে জানা যায়, সকালে ঢাকার দিকে দুই-তিনটি গাড়ি গেছে। তারপর থেকে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেক যাত্রী এসে ঘুরে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই টার্মিনালে অপেক্ষা করছেন। যখন বাস চালু হবে তখন তারা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। 

নতুন বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় ঢাকা থেকে আসা নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পবিার টাঙ্গাইল এসেছিলাম এক আত্মীয়র বাড়িতে। সেখান থেকে আজকে বাসস্ট্যান্ডে এসে কোনো বাস না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েছি।’

অপর যাত্রী গাজীপুরের আব্দুর রহমান বলেন, ‘বিরোধীদল সমাবেশ ডাকলে বাস বন্ধ করে দেওয়া হয় যাতে তারা সমাবেশে যেতে বা করতে না পারে। আবার সরকারি দল সম্মেলনে লোক আনতে সব বাস নিয়ে নেয়। সবদিক দিয়েই সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ।’

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলা শ্রমিক ফেডারেশন দুই সপ্তাহ আগে সব শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করে। সেই সভায় শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সব শ্রমিক সংগঠনের সদস্যদের আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগদান করতে বলা হয়।

টাঙ্গাইল জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির। কাজ বন্ধ রেখে শ্রমিকদের সম্মেলনে যোগদানের বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বালা মিয়া বলেন, ‘আমরা কাউকে সম্মেলনে যোগদান করতে বাধ্য করেনি। যোগদানের আহ্বান জানানো হয়েছিল। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সম্মেলনে যোগদান করেছে।’

প্রসঙ্গত, সাত বছর পর সোমবার টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিকেলে টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।