ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

লক্ষ্মীপুরে অনাবাদি পড়ে আছে হাজার একর জমি

জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৭, ২৯ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ১১:০৮, ২৯ মার্চ ২০২৩
লক্ষ্মীপুরে অনাবাদি পড়ে আছে হাজার একর জমি

খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়াতে দেশের সকল আবাদযোগ্য জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু লক্ষ্মীপুর জেলার একটি এলাকার আবাদযোগ্য প্রায় এক হাজার একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করতে পারছেন না কৃষকরা। শুধুমাত্র পানির কারণে কৃষকরা জমিতে শস্য আবাদ করতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন। 

এদিকে, কৃষি বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশাল এলাকাজুড়ে পড়ে থাকা জমির দিকে নজর দিচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন চাষিরা। ফলে ওই এলাকায় বাড়ানো যাচ্ছে না খাদ্যশস্যের উৎপাদন।

আরো পড়ুন:

আবাদযোগ্য এসব জমির অবস্থান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কাঠালী এবং উত্তর চিলাদী গ্রামে। 

স্থানীয় কৃষকরা জানান, এই দুই গ্রামের ৪ থেকে ৫টি ক্ষেতে (ডগী) অন্তত এক হাজার একরের বেশি আবাদযোগ্য জমি অনাবাদি পড়ে আছে। ওইসব জমিতে শুধুমাত্র আমন ধানের আবাদ হয়। বাকি দুই মৌসুমে কোনো ফসল আবাদ করা যাচ্ছে না। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুশাখালীর পশ্চিম কাঠালী গ্রামের ‘পশ্চিম ডগী’তে প্রায় ৫০০ একর জমি রয়েছে। এরমধ্যে সামান্য কিছু জমিতে সয়াবিন বা ডাল জাতীয় শস্যের আবাদ করা হয়েছে। তবে সিংহভাগ জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আবাদ না হওয়ায় জমির মাটি চলে যাচ্ছে ইট ভাটাতে। 

সয়াবিন চাষি আনোয়ার উল্যা বলেন, ‘জমিগুলোতে পানি সেচ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার বৃষ্টি হলে পানি নামারও ব্যবস্থা থাকে না। তাই বেশিরভাগ জমি আবাদ করা যায় না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমার তিন একর জমি রয়েছে। কিছু জমিতে সয়াবিনের চাষা করেছি। তবে ভয়ে আছি, অসময়ে বৃষ্টি হলে ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমার ক্ষেতের পূর্ব পাশ দিয়ে একটি খাল আছে, সেখানে পর্যাপ্ত পানি নেই। তবে কোনো কোনো কৃষক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সেচ দিয়ে খালপাড়ের কিছু জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন।’ 

একই এলাকার স্কুল শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাদের এলাকার বিস্তৃর্ণ জমি চলতি মৌসুমে অনাবাদি পড়ে আছে। জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি, এসব জমিতে এক মৌসুমে ফসল হয়। বাকি মৌসুমে আবাদ হয় না। একদিকে জমিগুলোতে পানি সেচ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার বৃষ্টি হলে পানি আটকা থাকে। শুষ্ক মৌসুমে অনেক ক্ষেত মালিক জমির উপরিভাগের মাটি ইট ভাটায় বিক্রি করে দেয়। এতে কিছু জমি উঁচু থাকে, আবার কিছু জমি নীচু হয়ে যায়।‘ 

ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ৭৫ শতাংশ কৃষি জমি আছে। গেল মৌসুমে আমি সয়াবিনের আবাদ করেছি, অসমের বৃষ্টিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এবার সয়াবিনের আবাদ করিনি। সামান্য কিছু জমিতে ডালের আবাদ করেছি। তবে ফলন ঘরে তোলা নিয়ে ভয় আছি। আমার মতো সব কৃষক ফসলহানির আশঙ্কায় থাকেন।’  

তিনি আরও বলেন, ‘দিঘলী থেকে কাঠালী পোলের গোড়া পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম পাশ দিয়ে ‘গবি উল্যা’ খাল রয়েছে। এটি ওয়াপদা খালের সংযোগ খাল। খালটি দীর্ঘ সময় ধরে খনন না করার কারণে বড়খাল থেকে পানি আসতে পারে না। আবার বর্ষা মৌসুমে খাল দিয়ে সহজে পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। এ খালটি সংস্কার করা হলে আমাদের এলাকার ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।’ 

সেচ প্রকল্প স্থাপনের দাবি জানিয়ে কৃষকরা বলেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কটের কারণে আমাদের সরকার শস্য উৎপাদনে জন্য সব জমি আবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও আমরা জমিতে ধান বা রবিশস্য চাষাবাদ করতে পারছি না। তিন থেকে চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটি খনন করে সরকারিভাবে এখানে সেচ প্রকল্প স্থাপন করলে এক থেকে দেড় হাজার একর জমি বোরো আবাদের আওতায় আসবে। সরকার যাতে এ জমিগুলোর দিকে নজর দেয়, আমরা সেই দাবি জানাচ্ছি। 

স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক বলেন, ‘আমাদের পরিবারের প্রায় ১০০ একর কৃষি জমি আছে। এই জমিতে আমন ধানের চাষ হয়। কিন্তু জেলার প্রায় সবখানে আমন ধানের পর সবজি, সয়াবিন, ডাল বা বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এলাকার জমিগুলোতে পানির অভাবে বোরো ধানের আবাদ করা যাচ্ছে না। আবার বৃষ্টি হলে পানি না নামার কারণে অসময়ে ক্ষেতে পানি জমে থাকে। এ কারণে সয়াবিন বা রবিশস্যের আবাদও করা যাচ্ছে না। বিএডিসি এবং কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিস্তৃর্ণ এ জমিগুলোর দিকে নজরদারি দিলে এ এলাকার কৃষকেরা সোনালী ফসল উৎপাদন করতে পারবে।’ 

কৃষক নুর আলম বলেন, ‘বেশিভাগ জমি অনাবাদি পড়ে আছে। মোট জমির ১০ থেকে ২০ ভাগ জমিতে সয়াবিন বা ডালের আবাদ করলেও বিস্তৃর্ণ জমি খালি থাকায় গরু ছাগলে ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে ফেলে। তাই রবি মৌসুমে কৃষকরা শস্য আবাদে অনাগ্রহ হয়ে পড়েছে।’ 

অনাবাদি জমির বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) লক্ষ্মীপুর জেলার সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ছায়েদুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি লক্ষ্মীপুরে নতুন এসেছি। অনেক এলাকা সম্পর্কে আমি পুরোপুরি অবগত নই। কুশাখালীর ওই অঞ্চল থেকে কোনো কৃষক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর এ তিন জেলার জন্য আমাদের একটি প্রকল্প ছিল। যার নাম ছিল ‘সেচ এলাকার উন্নয়ন প্রকল্প।’ এ প্রকল্পটি গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। আগামীতে এ ধরনের কোনো প্রকল্প আসলে সরেজমিন পরিদর্শন করে আগামী বোরো মৌসুমে অগ্রধিকার ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলোতে সেচ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ 

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আবাদযোগ্য সব জমি চাষের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়