ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘আমার ছেলের লাশটা আইন্না দাও, আমি দেখমু’

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৯, ২৯ মার্চ ২০২৩  
‘আমার ছেলের লাশটা আইন্না দাও, আমি দেখমু’

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মামুনের স্বজনদের মাতমে ভাড়ি হয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশ

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো কুমিল্লার মুরাদনগরের মামুন মিয়ার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় গত সোমবার বিকেলে দেশটির আসির অঞ্চলের আবহা জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।

নিহত মামুন মিয়া জেলার মুরাদনগর উপজেলার মোস্তাপুর গ্রামের আবদুল আওয়ালের ছেলে।

বুধবার (২৯ মার্চ) মামুনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিহত মামুনের  বাবা-মা দুইজনই বিলাপ করছেন। ছেলে হারানোর শোক কোনো ভাবেই সহ্য করতে পারছেন না তারা। তাদের কান্নায় চারপাশের পরিবেশ ভাড়ি হয়ে উঠেছে। তাদের সান্তনা দিতে গিয়ে আত্মীয় স্বজনদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।

মামুন মিয়ার বাবা আবদুল আওয়াল বলেন, ৯ মাস আগে মামুন সৌদি আরবের ভিসার জন্য আবেদন করে। বয়স কম হওয়ায় তার সেই আবেদন খারিজ হয়। ৬ মাস আগে আবারও দেশটিতে যেতে আবেদন করে সে। পরে ৫ লাখ টাকা খরচ করে তাকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। পুরো টাকা আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার করা।

তিনি আরও বলেন, “সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় মামুনের ‍মৃত্যুর খবরটি আমরা পাই রাত ১টার দিকে। আমার নাতি জাহিদ ফোন করে বলেন, ‘নানা, মামুন মামা তো নাই।’ কলিজাডা ফাইট্টা গেছে কথাডা হইন্না। আমার ছেলের লাশটা আইন্না দাও; আমি দেখমু।”

সরজমিনে মামুনের বাড়ি মুরাদনগরের মোস্তাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সৌদি আরবে ২২ বছর বয়সী এই যুবকের মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রতিবেশী ও স্বজনরা ভিড় করছেন বাড়িতে। 

মামুনের মা মমতাজ বেগম ছেলে মামুনের জন্য হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। মোবাইলে ছবি দেখে বলছিলেন, ‘ছেলেডারে কত স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ পাঠিয়েছি। আমার ছেলে কেমনে লাশ হল, আল্লাহ আমার ছেলেরে তুমি ফিরিয়ে দাও।‘ 

আবদুল আওয়ালের তিন মেয়ে, দুই ছেলের মধ্যে মামুন মিয়া চতুর্থ। ছয় মাস আগে মামুন তার মামা ইয়ার হোসেনের মাধ্যমে সৌদিতে যান। সেখানে হোটেল বয় হিসেবে কাজ করতেন তিনি।

সোমবারের ওই সড়ক দুর্ঘটনায় মামুনের মামা ইয়ার হোসেন ও ভাগ্নে জাহিদ গুরুতর আহত হন। তারা মক্কার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনি বলেন, আমি নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রশাসনিকভাবে পরিবারটির জন্য যা করার দরকার আমরা তাই করবো।

কুমিল্লা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান দপ্তরের কর্মকর্তা দেব্রবত ঘোষ বলেন, আমরা ঘটনা শুনেছি। লাশ দেশে নিয়ে আসার জন্য যা যা করতে হয়, তার সবই করবো আমরা।

রুবেল/ মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়