৫ শতাধিক শিশুর গ্রামে নেই কোনো স্কুল
মাইনুদ্দীন রুবেল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া || রাইজিংবিডি.কম
সবজি ক্ষেতের ভেতর দিয়ে তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে শিশুদের যেতে হয় বিদ্যালয়ে
আমাদের গ্রামে স্কুল নেই, রাস্তাঘাট নেই। মানুষের চেহারা নিয়ে কেবল বেঁচে আছি। শিক্ষার কারণে আমাদের মধ্যে প্রকৃত মনুষ্যত্ব জাগ্রত হচ্ছে না। জেলার মধ্যে আমাদের গ্রামে সবচেয়ে বেশি নিরক্ষর লোকের বসবাস। এই গ্রামে কোনো শিক্ষিত মানুষ থাকে না। যাদের অবস্থান একটু ভালো তারা চলে যান শহরে। যারা বসবাস করনে তারা সবাই নিরক্ষর। এ ভাবেই নিজের আক্ষেপের কথাগুলো বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র বোরহান উদ্দিন খান।
বিদ্যালয়বিহীন গ্রামটির নাম বেঙ্গাউতা। এই গ্রামটির অবস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাপরতলা ইউনিয়নে। গ্রামে প্রায় এক হাজার পরিবারের পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। প্রায় পাঁচ শতাধিক শিশু রয়েছে এখানে। গ্রামটির তিন কিলোমিটার দূরে রয়েছে কালিউতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
নাসিরনগর উপজেলায় ১৩২টি গ্রাম রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১২৪টি। উপজেলার ১৭টি গ্রামে বিদ্যালয় নেই। উপজেলার সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের বেঙ্গাউতা গ্রামেও নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে পাশের গ্রাম কালিউতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের যেতে হয় তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে।
আঙ্গুলের ইশারায় দূরে নিজের বাড়ি দেখিয়ে দিচ্ছেন এক শিক্ষার্থী
বেঙ্গাউতা গ্রামের বাসিন্দা মো. আমির বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছর কেটে গেলেও আমাদের গ্রামে কোনো স্কুল নির্মাণ করা হয়নি। গ্রামে নেই কোনো রাস্তা-ঘাট। পাশের গ্রামে যেতে হয় ফসলি জমির ওপর দিয়ে। কিন্তু বর্ষায় তাও ডুবে যায়। তাই ছয় মাস আমরা কোথাও যেতে পারি না। নৌকার পথ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিশুরা পাশের গ্রামের স্কুলে যেতে চায় না। ফলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীসহ হাজারো বাসিন্দা।’
চাপরতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মনসুর বলেন, ‘বেঙ্গাউতা গ্রামটি আসলেই যোগাযোগসহ সব নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাস্তা-ঘাট প্রয়োজন।’
কালিউতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘বেঙ্গাউতা গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিশু রয়েছে। কিন্তু রাস্তাঘাট না থাকায় ও নদী পাড়ি দিয়ে আসতে হয় বিধায় বছরের তিন-চার মাস শিশুরা স্কুলে আসতে চাই না। সম্প্রতি উদ্বেগজনক হারে কমে গেছে ওই গ্রামের শিশুদের স্কুলে আসা। শুনেছি তারা স্থানীয় একটি মাদরাসায় ভর্তি হয়েছে।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইকবাল মিয়া বলেন, ‘নাসিরনগর উপজেলার বেঙ্গাউতা গ্রামে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। বিদ্যালয় করতে ৩৩ শতক জায়াগার প্রয়োজন। জায়গা পেলে আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবো।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। ওই গ্রামে বিদ্যালয় নির্মাণ করতে খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
মাসুদ
আরো পড়ুন