লিচুর গ্রামে উৎসবের আমেজ
মঈনুদ্দীন তালুকদার হিমেল, ঠাকুরগাঁও || রাইজিংবিডি.কম
গাছ থেকে লিচু নামানোর কাজ করছেন দুই শ্রমিক
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার শহরতলী গ্রাম গোবিন্দনগর বড়বাড়ি বা বাগানবাড়ি। গ্রামটিতে কয়েক’শ একর জায়গাজুড়ে শুধুই লিচুর বাগান। অনেকেই গ্রামটিকে লিচুর গ্রাম নামেই চেনেন। দেশের সবচেয়ে বড় এই বাগানে বিভিন্ন জেলা থেকে লিচু কিনতে আসেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছর এখানে কোটি টাকার বেশি লিচু বিক্রি হয়।
লিচু মৌসুম এলেই এখানে উৎসবের আমেজে মজে ওঠেন গ্রামের বাসিন্দারা। বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার কৃষক পরিবারগুলো যেমন পৌষ ও মাঘ মাসে নবান্ন উৎসব মেতে ওঠেন। তেমনি এখানে বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাসে লিচুর ফলনে নবান্ন উৎসব শুরু হয়।
উত্তরাধিকার সূত্রে একাধিক বাগান মালিকসহ লিচু গাছের পরিচর্যার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন কর্মচারীর পরিবার এই গ্রামের বাসিন্দা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লিচু রপ্তানি করা হয় এ গ্রাম থেকে। গ্রামের ভেতরে ঢুকলে রাস্তার দুপাশে চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য ও লিচুর মহনীয় গন্ধ মুগ্ধ করবে যে কাউকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের মানুষের উপার্জনের প্রধান উৎস হচ্ছে লিচু। লিচু বিক্রির টাকা দিয়ে সারা বছর চলার একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন গ্রামের মানুষরা। এছাড়াও বর্তমানে এইসব বাগানে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষ কাজ করে নিজেদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে গ্রামটিতে গোলাপি জাতের লিচু সংগ্রহের কাজ চলছে। এছাড়াও এই বাগানে বোম্বাই, চায়ানা থ্রি, বেদানা লিচুসহ অন্য জাতের লিচু গাছ রয়েছে। প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয় এই বাগানটি থেকে।
লিচু বাগানের একজন মালিক রফিকুল ইসলামের রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এই গ্রামে সর্বপ্রথম আমার দাদা লিচুর গাছ লাগিয়েছিলেন। এখন তার দেখাদেখি প্রায় সবাই বাগান করেছেন। এ বছর লিচুর বাম্পার ফলন এসেছে। তীব্র তাপদাহে লিচুর গায়ে স্পট না পড়লে কয়েক কোটি টাকার লিচু বিক্রি করতাম আমরা। তবুও আমরা এবারেও কোটি টাকার অধিক লিচুর বিক্রি করার আশা করছি। এবারে লিচুর দাম কিছুটা বাড়তি রয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গায় থেকে আসা লিচু ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি ১ হাজার লিচু ১৬০০ থেকে ২০০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্রয় করে শেরপুর ও জামালপুরে নিয়ে যাচ্ছি। এখানকার মতো এত বড় লিচুর বাগান আর অন্য কোথাও আমি দেখিনি। এবার লিচুর দাম ও ফলনে কৃষকরা খুশি।’
বাগানে গাছ থেকে লিচু সংগ্রহের কাজ করেন কয়েকটি দল। তারা সারাদিন লিচু সংগ্রহ করে দিলে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি পান। তাদের মধ্যে একজন বাবু। বাবু বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা এ কাজ করে বছরের মোটা টাকা জমাতে পারি। যা আমাদের সংসার ও ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার কাজে আসে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আলমগীর কবির বলেন, ‘জেলায় ১ হাজার ৭৪২ একর জমিতে ৬৪১টি লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগান থেকে এ বছর ৫ হাজার ৫৯৮ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু বড়বাড়ি গ্রামের একটি বাগান রয়েছে ৭৭ একর জমিতে। এই বাগানে ২ হাজারেরও বেশি লিচু গাছ আছে। এ রকম কয়েকটি বাগান রয়েছে গ্রামটিতে।’
মাসুদ
আরো পড়ুন