ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চুরির অভিযোগে ২ শিশুর পায়ে শিকল বেঁধে নির্যাতন

ফরিদপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৪, ৮ জুন ২০২৩   আপডেট: ২২:৩৬, ৮ জুন ২০২৩
চুরির অভিযোগে ২ শিশুর পায়ে শিকল বেঁধে নির্যাতন

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় ১১ বছর বয়সী দুই শিশুকে চুরির অভিযোগে নির্যাতন করা হয়েছে। চালকলের উত্তপ্ত চাতালে ওই দুই শিশুকে শুইয়ে পায়ে লোহার শিকল বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি মেম্বারের ভাইয়ের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু শিশুদের অভিভাবকদের অভিযোগ না থাকায় মামলা হয়নি।

উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের চাপলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার নাজমুল শেখের বড় ভাই নজরুল শেখের নলকূপের হাতল সম্প্রতি চুরি হয়। হাতলটি ওই গ্রামের মিন্টু শেখের ছেলে সুমন (১১) এবং মোক্তারপুর গ্রামের কৃষক আলীবার শেখের ছেলে সৌরভ (১১) চুরি করে বিক্রি করে বলে অভিযোগ উঠে।

হাতল চুরির ওই ঘটনায় নজরুল শেখ (৪০) এবং তার সহযোগী একই গ্রামের আইউব খন্দকারের ছেলে হাসান (৩৫) মঙ্গলবার দুপুরে সুমন ও সৌরভকে নির্যাতন করে। তারা ওয়ার্ড মেম্বার নাজমুল শেখের চাপলডাঙ্গাস্থ চালকলের চাতালে তীব্র রোদের মধ্যে শিশু দুটিকে কয়েক ঘণ্টা শুইয়ে পায়ে লোহার শিকল বেঁধে কাঠের বাটাম ও বাঁশ দিয়ে পেটায়। পায়ে লোহার শিকল বেঁধে পেটানোর এ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

নির্যাতনের বিষয়টি বোয়ালমারী থানা পুলিশ জানতে পেরে নির্যাতনের নজরুল শেখ ও হাসানকে আটক করে ওই দিনই থানায় নিয়ে আসে। দুই দিন থানায় আটক রাখার পর নির্যাতনকারী শিশুর অভিভাবকদের অভিযোগ না থাকায় দুই জনকে ফরিদপুর বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সৌরভের বাবা আলীবার শেখ আক্ষেপ করে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আমার কোনো অভিযোগ নেই। নজরুল শেখ তার শাস্তি পেয়ে গেছেন। তার খামারের গরুগুলো দুই দিন ধরে না খেয়ে আছে, নিজে মশার কামড় খাচ্ছেন।’ 

চাতালের গরম মেঝের উপর শুইয়ে রাখায় এবং পেটানোয় জ্বর হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সৌরভের দাদী জরিনা বেগম। তিনি জানান, নজরুল এবং হাসান দুই জনে মিলে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সুমন ও সৌরভকে চড় থাপ্পড় মারেন, ফাঁড়া বাঁশ গলায় চেপে ধরেন এবং মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেন।

নির্যাতনের শিকার সুমনের দাদা সিরাজুল শেখ জানান, মেম্বারের ভাই প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কিছু করা যাবে না। তাই অভিযোগ দেয়নি।

শিশু নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত নজরুল শেখ থানায় আটক থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তার ভাই এবং ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য নাজমুল শেখের বক্তব্যের জন্য তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বারবার ফোন দিলেও দুপুর পর্যন্ত ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, শিশুদের অভিভাবকদের অভিযোগ না থাকায় ধর্তব্য অপরাধ সংঘটনের দায়ে আটক দুই জনকে বৃহস্পতিবার ফরিদপুর বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
 

নিরব/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়