ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৮ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রাজশাহীতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসবমুখর ভোট

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৩, ২১ জুন ২০২৩  
রাজশাহীতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসবমুখর ভোট

উৎসবমুখর পরিবেশে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে দু’-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোথাও অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি। তবে শান্তিপূর্ণ এ ভোটে ভোটারদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছে ইভিএম। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, ইভিএমে ভোট দিতে সময় বেশি লেগেছে। 

তবে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নগরবাসী এবারই প্রথম ইভিএমে ভোট দিলেন। তাই বুঝে উঠতে সময় লেগেছে। পুরুষের ক্ষেত্রে সময় একটু কম লাগলেও নারীদের বেশি লেগেছে। ভোট দিতে সময় লাগলেও ভোটাররা কেন্দ্র ছেড়ে চলে যাননি। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে তারা ভোট দিয়েছেন পছন্দের প্রার্থীকে। ভোট দিতে বাধা পেতে হয়নি।

আরো পড়ুন:

বুধবার (২১ জুন) সকাল ৮টা থেকে শহরের ১৫৫টি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকালে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোট শুরুর আগেই ভোটাররা কেন্দ্রে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সকাল ৯টায় নগরীর স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

এরপর তিনি বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। আটকোষী নগরীর আটকোষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা হয় এই কেন্দ্রের ভোটার জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপনের। এ সময় দুজনে আলিঙ্গন করেন। সাইফুল ইসলাম স্বপন তখন বলেন, ‘আমরা তো চাচা-ভাতিজা। আমাদের সম্পর্ক সব সময়ই ভালো।’ তবে সেখানে ইভিএমে ভোট দিতে বিলম্ব হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের প্রতি ক্ষোভ জানান লাঙ্গল প্রতীকের এই প্রার্থী।

কেন্দ্রে কেন্দ্রে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন নিয়ে যখন ভোট উৎসব চলছিল, তখন বেলা ১১টার দিকে এতে বাগড়া দেয় বৃষ্টি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি চলে। অনেক ভোটার বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ভোটকেন্দ্রে আসেন। আবার লাইনে দাঁড়ানো অনেকে এখানে সেখানে আশ্রয় নেন। বৃষ্টি শেষে রাজশাহী মুসলিম হাইস্কুলে ভোট দিতে যান জাকের পার্টির মেয়রপ্রার্থী লতিফ আনোয়ার। গোলাপ ফুল প্রতীকের এই প্রার্থী সেখানে সাংবাদিকদের জানান, মানুষকে ভালোবাসার জন্য তিনি রাজনীতি করছেন। আর ভালোবাসার প্রথম শর্ত হলো বিশ্বাস। তিনি নির্বাচন কমিশনসহ সবাইকে বিশ্বাস করতে চান বলে কোনো ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেননি। নির্বাচন খুব সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই চলছে বলে তিনি জানান।

তবে এই শান্তিপূর্ণ ভোটের মধ্যে দুপুরে নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে দুইপক্ষের কয়েকজন আহত হন। দুইপক্ষেরই নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়। এতে কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুরে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কমে যায়। তবে ঘণ্টাখানেক পরে আবারও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।

ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে কেশবপুর মহল্লার বাসিন্দা সুলতানা খাতুন বলেন, ‘এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে বুথের সামনে গেলাম। তারপর দেখলাম একজনের ভোট দিতে ৫-৭ মিনিট লেগে গেল। এরপর আমি দিলাম। প্রথমবার ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্য বুঝতে একটু সময় লেগেছে।’

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার বিবেকানন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘পুরুষের ভোট একটু তাড়াতাড়ি হচ্ছে। কিন্তু বার বার বোঝানোর পরও নারীরা বুঝতে পারছে না। তাদের ভোট দিতে সময় লাগছে। এ জন্য ভোটগ্রহণে একটু ধীরগতি। তাও দুপুর ১টা পর্যন্ত ১ হাজার ১৩ ভোট গ্রহণ করা হয়।’

বিকালে আবার কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ৪৫ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। রাজশাহী সরকারী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার তন্ময় কুমার সরকার জানান, বেলা ৩টায় তার কেন্দ্রে ৬২ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। 

বিভাগীয় স্টেডিয়াম কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মিয়াজ উদ্দিন জানান, এখানে ভোট পড়েছে ৫০ শতাংশ। ভোটগ্রহণের সময় কোন ধরনের গোলযোগ হয়নি। সকালে নারী-পুরুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল। তবে বৃষ্টির পর ভোটার উপস্থিতি একটু কমে যায়।

কম ভোট পড়েছে মেয়রপ্রার্থী খায়রুজ্জামানের স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল ভোটকেন্দ্রে ভোটার। কেন্দ্রটিতে এবার ভোট পড়েছে মাত্র ২৪ শতাংশ। ভোটগ্রহণ শেষে স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আবু সাঈদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কেন্দ্রে মোট ভোটার ১ হাজার ৬২৮ জন। এরমধ্যে ৪১৩ জন ভোট দিয়েছেন। ভোট পড়ার হার ২৪ শতাংশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপশহর এলাকাটি রাজশাহীর একটি অভিজাত এলাকা। এলাকার বাসিন্দাদের ভোট দেওয়ায় আগ্রহ কম। তাছাড়া অনেকেই চাকরির সুবাদে রাজশাহীর বাইরে থাকেন। এ কারণে এখানে ভোট পড়ার হার কম বলে অনেকেই মনে করছেন। 

সকাল ৯টার পরে এই কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন মেয়রপ্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন। তখন এক ঘণ্টায় এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছিল মাত্র ৩৫টি। ভোট পড়ার হার কম হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সকালে সদ্য সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেছিলেন, ‘একেক এলাকার মানুষের অভ্যাস একেকরকম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানেও ভোটার বাড়বে।’

শহরের আরও বেশকিছু কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন নারীরা। বিকাল ৪টার পরও কিছু কেন্দ্রে ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যারা কেন্দ্রের ভেতরে ছিলেন তাদের ভোট ৪টার পরও নেওয়া হয়েছে। এরপর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়।

এবার শহরের ৩০টি ওয়ার্ডের ১৫৫টিই কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়। কেন্দ্রে কেন্দ্রে থাকা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে তিনজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এছাড়া ১১২ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৪৬ জন সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচন নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই।
 

কেয়া/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়