ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মজুরি দেয় না রাসিক, আন্দোলনে শ্রমিক-কর্মচারীরা

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩২, ২৯ অক্টোবর ২০২৫   আপডেট: ১৭:৪১, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মজুরি দেয় না রাসিক, আন্দোলনে শ্রমিক-কর্মচারীরা

শ্রমিক-কর্মচারীরা নগরভবনের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে আন্দোলন করেন।

দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের কারণে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে (রাসিক) অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা নগরভবনের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে আন্দোলন করেন। বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকাল থেকেও সারা দিন প্রধান ফটক অবরোধ করে আন্দোলন করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিক-কর্মচারীরা। এর ফলে কোনো সেবাগ্রহীতা কিংবা রাসিকের শীর্ষ কর্মকর্তারা নগরভবনে প্রবেশ করতে পারেননি।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালের দিকে বিক্ষোভকারীরা নগরভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এতে প্রতিটি বিভাগে দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বড় অংশই পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মচারী। তারা কর্মবিরতি শুরু করায় ইতোমধ্যে ‘পরিচ্ছন্ন নগরী’ হিসেবে পরিচিত রাজশাহীতে ময়লা-আবর্জনা অপসারণে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

আরো পড়ুন:

দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন বিভাগে অস্থায়ীভাবে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত আছেন। এর মধ্যে পরিচ্ছন্নতা বিভাগেই বেশি। এ সব শ্রমিকদের প্রতিদিনের নির্ধারিত মজুরি ৬০০ টাকা হলেও বাস্তবে পাচ্ছেন ৪৮৪ টাকা করে। এছাড়া কোনোদিন কাজে অনুপস্থিত থাকলে তারা বেতন-ভাতার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।

তারা বলছেন, গত জানুয়ারিতে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দক্ষ শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৭৫০ টাকা এবং অদক্ষ শ্রমিকদের ৭০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু রাসিক এখনো সেটি বাস্তবায়ন করেনি।

প্রধান ফটক অবরোধ করে রেখে সমাবেশ চলাকালে বক্তারা বলেন, সকল শ্রমিক-কর্মচারীর মাসিক বেতন ন্যূনতম ২২ হাজার ৫০০ টাকা করতে হবে। মাসের ৩ তারিখের মধ্যে বেতন প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত উৎসবভাতাও চালু করতে হবে। কোনো শ্রমিককে বিনা কারণে চাকরিচ্যুত করা যাবে না; যদি কোনো অনিয়ম ঘটে, তবে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে। চাকরি স্থায়ী করতে হবে এবং চাকরি শেষ হলে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। 

পরিবহন শাখার গাড়িচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘‘সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির পর রাসিক প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার খন্দকার আজিম আহমেদ একটি কমিটি গঠন করেন। রাসিকের সচিব ছিলেন ওই কমিটির প্রধান। কমিটি শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও গত তিন মাসে বৈঠক হয়নি। ফলে বেতনও বাড়েনি।’’ 

পরিচ্ছন্নতা বিভাগের ভ্যানচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘চার মাস আগে ভ্যানে আবর্জনা তুলতে গিয়ে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ পায়ে ঢুকে যায়। তিন মাস চিকিৎসা নিতে হয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন চিকিৎসা ব্যয় দেয়নি, বরং কাজ করতে না পারায় বেতনও বন্ধ করে দিয়েছে। এখন পরিবার নিয়ে আমি অসহায় অবস্থায় আছি।’’

করপোরেশনের প্রবেশদ্বারে শ্রমিক-কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে বুধবার (২৯ অক্টোবর) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম, প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আহমদ আল মঈন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. নূর ঈ সাঈদ, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগমসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা সিটি ভবনে প্রবেশ করতে পারেননি। ফলে দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সেবাগ্রহীতারা। আগের দিন শীর্ষ কর্মকর্তারা নগরভবনের বাইরে একটি সভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন। শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভের খবর পেয়ে এ দিন তারা অফিসে আসেননি।

এ বিষয়ে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘‘দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবি আমরা পর্যালোচনা করছি। তবে তারা বেশ কিছু বেআইনি দাবি তুলেছেন। সব কিছু আইনের মধ্যে করা হবে। তাদের আন্দোলনে কারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেটা স্পষ্ট নয়। তাদের নেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এর পেছনে কারো ইন্ধন রয়েছে কি-না, সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।’’ 

ঢাকা/কেয়া/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়