ঢাকা     শুক্রবার   ১৭ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জের দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজ

৪ শিক্ষকের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষকে অপহরণের অভিযোগ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৮, ১৬ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৪:০৬, ১৬ নভেম্বর ২০২৩
৪ শিক্ষকের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষকে অপহরণের অভিযোগ

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদ রানাকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন তার পরিবারের সদস্যরা। গত তিন দিন ধরে তিনি নিখোঁজ থাকার পিছনে একই কলেজের চার শিক্ষক জড়িত বলে জানা গেছে। মাসুদ রানা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাসুদ রানাকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন পিতা-মাতা, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে। তারা মাসুদ রানাকে জীবিত উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এদিকে, অপহরণের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে বলে থানার ডিউটি অফিসার রিটু চন্দ্র দে নিশ্চিত করেছেন।

অপহ্নত কলেজ অধ্যক্ষ মাসুদ রানার পরিবারের সদস্যরা জানান, মাসুদ রানার সঙ্গে একই কলেজের উপাধ্যক্ষ সানোয়ার, প্রভাষক কেএম খালেকুজ্জামান, হাসানুজ জামান সোহেল ও সায়েদুলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছিলো। এ নিয়ে তাদের মধ্যে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে।

গত ১৩ নভেম্বর বিকেলে মামলা সংক্রান্ত কাজে ঢাকায় হাইকোর্টে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে রওনা হন মাসুদ রানা। রাত ১১টার দিকে পরিবারের লোকজন তাকে ফোন দিলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তখন তার খোঁজ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করা হয়। রাত ১২টার দিকে মাসুদ রানার ফেসবুক আইডি থেকে একটি লেখা পোস্ট করা হয়।

ফেসবুক আইডিতে লেখা হয়, ‘পাঁচ জনের টিম আমায় চন্দ্রা থেকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়েছিল। এই ফোনটা ব্যাগে ছিল। আরেকটা ওরা ভেঙে ফেলেছে। আমি সম্ভবত সদরঘাটের কোনো পুরাতন ভবনে। এরা রাস্তায় কথা বলেছে কলেজের উপাধ্যক্ষ সানোয়ার, প্রভাষক কেএম খালেকুজ্জামান, হাসানুজ্জামান ও সাইদুলদের সঙ্গে। এরা মনে হয় মেরে ফেলবে আমায়। মাইক্রোতে অনেক মারধর করেছে। বাথরুমের কথা বলে আমি এই বিপদের কথা লিখতে পারলাম। এরা শুধু রিজিকেই আঘাত করেনি, এখন দেখছি আমার জীবনের ওপর চরম আঘাত। আল্লাহ আমায় বাঁচাও আর এদের বিচার কর।’

উল্লেখিত পোস্ট দেখার পর মাসুদ রানার দুটি মোবাইল নাম্বার ট্রাকিং করলে সেগুলো নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন চিটাগাং রোডের পার্শবর্তী মুক্তি নগর এলাকার সানারপাড়ায় দেখা যায়। যা সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, কলেজ অধ্যক্ষ মাসুদ রানার অপহরণের খবর প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে কলেজের অভিযুক্ত শিক্ষক সানোয়ার, খালেকুজ্জামান, হাসানুজ্জামান ও সায়েদুল গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।

অপহ্নত মাসুদ রানার স্ত্রী লতা পারভিন বলেন, কলেজের বিরোধের জেরে আমার স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণের কারণে আমি বেলকুচি থানায় গিয়েছিলাম মামলা করার জন্য। থানায় গিয়ে দেখি যাদের বিরুদ্ধে আমার স্বামী ফেসবুকে পোস্ট করেছে তারা থানায় বসে আছেন। ওসি আমার মামলা নেননি। কলেজের শিক্ষক সানোয়ার, খালেকুজ্জামান, হাসানুজ্জামান ও সায়েদুলকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমার স্বামীর সন্ধান পাওয়া যাবে।

অপহ্নত মাসুদ রানার মেয়ে রাফিকা কানিজ সূচনা বলেন, আমি আমার বাবাকে ফিরে পেতে চাই। আমার বাবাকে যারা অপহরণ করে আটক করে রেখেছে তাদের শাস্তি চাই। কলেজের স্যারদের সঙ্গে আমার বাবার বিরোধ চলছিলো। এই বিরোধের কারণে আমার বাবাকে অপহরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনিছুর রহমান জানান, ওই পরিবারের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে। যেহেতু এটা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভিতরে তাই এই বিষয়ে আমার কিছু করার নেই।

/আদিত্য/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়