খুলনায় চাল নিয়ে চালবাজি চলছেই

খুলনায় চাল নিয়ে চালবাজি কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। দাম নিয়ন্ত্রণে কাজে আসছে না কোনো পদক্ষেপ। ফলে চালের দাম বেড়েই চলছে। এতে ভোক্তারা পড়েছেন বিপাকে। চাল আনতে পান্তা শেষ হওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা অতিরিক্ত মূল্যে চাল কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। 

জানা গেছে, খুলনায় চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এর আগে মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে জেলা প্রশাসন। চালের গুদামে অভিযান চালানো হয়, দেওয়া হয় লাইসেন্স বাতিলের হুঁশিয়ারি। তারপরও চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। চলতি মাসে খুলনার বাজারে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪/৫ টাকা।

খুলনার চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুলনায় ধানের উৎপাদন কম। নওগা, দিনাজপুর ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বড় বড় মোকাম থেকে চাল খুলনায় এনে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন। মিল মালিক ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছে। এখানে খুলনার খুচরা ব্যবসায়ীদের কিছু করার নেই।

কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমন মৌসুমের ধান কৃষকরা বিক্রি করে দিয়েছেন। এই মুহূর্তে বাজারে চালের পর্যাপ্ত মজুত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তারা চাহিদা অনুযায়ী চাল পাচ্ছেন না। ১০০ বস্তা চালের অর্ডার দিলে ৩০/৪০ বস্তা চাল দেওয়া হচ্ছে। মজুত করে দাম বাড়াতেই এই কার্যক্রম চলছে বলে তাদের ধারণা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল রোববার (২১ জানুয়ারি) খুলনার বাজারে চালের দাম আরেকদফা বেড়েছে। এর মধ্যে ৪২ টাকা মোটা স্বর্ণা সাড়ে ৪৬ টাকা, ৪৭ টাকার রত্না ৫২ টাকা, ৫৩ টাকার মিনিকেট মানভেদে ৬০ টাকা, ৬৫ টাকার বাসমতি ৭২ টাকা, ৩৮ টাকার ইরি আতপ ৪৩ টাকা, ৬২ টাকার নাজিরশাইল ৬৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

খুলনার সব থেকে বড় চালের মোকাম বড় বাজারের চাল ব্যবসায়ী কুন্ডু ট্রেডার্সের মালিক শংকর কুন্ডু বলেন, কুষ্টিয়া, যশোর ও দিনাজপুর অঞ্চল থেকে চাল আসে এখানে। মিল মালিকরা দাম বাড়ালে তবেই দাম বাড়ে। দাম বাড়ার কারণে চালের বিক্রিও কমেছে।

খুলনা জেলা বাজার কর্মকর্তা শাহরিয়ার আকুঞ্জি বলেন, বৃহস্পতিবার খুলনার মিলগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে, সেখানে চালের মজুতের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এছাড়া, বাজারে পাইকারি চালের প্রতিষ্ঠানগুলোতেও তদারকি করা হচ্ছে। 

খুলনার জেলা প্রশাসক খোন্দকার ইয়াসির আরেফিন বলেন, চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত অভিযান চালানোর পাশাপাশি খুলনায় ৩০ টাকা দরে চাল বিক্রি করছে টিসিবি।

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, খুলনায় চলতি মৌসুমে ৯৪ হাজার ৭৯৮ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৩৬১ মেট্রিক টন। খুলনা জেলায় মানুষ অনুপাতে ধান ও চালের চাহিদা আরও বেশি। এই চাহিদা অন্যান্য জেলা থেকে আমদানি করে পূরণ করেন ব্যবসায়ীরা।