ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

চৌগাছায় খেজুর গুড়ের মেলা শুরু 

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২১:২২, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪
চৌগাছায় খেজুর গুড়ের মেলা শুরু 

স্কাউটসের সদস্যরা মেলায় গাছিদের মাধ্যমে খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরির ‍উদ্যোগ নেয়।

যশোরের চৌগাছায় তিন দিনব্যাপী খেজুর গুড়ের মেলা শুরু হয়েছে। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদের বৈশাখী মঞ্চের সামনে মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার। এই মেলা চলবে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) পর্যন্ত। এর আগে, গতকাল রোববার (২৮ জানুয়ারি) যশোরের খেজুরের গুড় জিআই ইনডেক্সভুক্ত হয়েছে।

চৌগাছা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবার দ্বিতীয়বারের মতো খেজুরের গুড়ের মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলায় উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং চৌগাছা পৌরসভার জন্য একটি করে স্টল বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়াও মৃধাপাড়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী এবং একটি সংস্থার পক্ষ থেকে খেজুর গুড় দিয়ে তৈরি বিভিন্ন প্রকারের পিঠার দুটি স্টল দেওয়া হয়েছে। স্কাউটসের সদস্যরা মেলায় রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন। 

আরো পড়ুন:

মেলা উদ্বোধন উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ বৈশাখী মঞ্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মোস্তানিছুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরী, চৌগাছা পৌর মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল, খেজুর গাছ গবেষক সৈয়দ নকীব মাহমুদ, বিশিষ্ট কলামিষ্ট অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মিজানুর রহমান মধু, সহকারী কমিশনার গুঞ্জন বিশ্বাস, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুবাশ্বির হুসাইন প্রমুখ।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর অঞ্চলের খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং খেজুর রস ও গুড়কে অর্থনৈতিক পণ্য হিসেবে প্রসার ঘটাতে ২০২৩ সালের ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি প্রথমবার গুড় মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। সেসময়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা ওই মেলার আয়োজন করেন। তখন অলিখিতভাবে সিদ্ধান্ত হয় মাঘ মাসের ১ তারিখ চৌগাছায় খেজুর গুড়ের মেলা অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে মেলার সময় কিছুটা পিছিয়ে দেওয়া হয়।

মেলায় অংশগ্রহণকারী উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের স্বরুপপুর-চাকলা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস জানান, তিনি ১২০ কেজি গুড় নিয়ে এসেছেন। মেলায় ৪০০ টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রি করেছেন। 

পাতিবিলা ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামের গাছি জামাত আলী বলেন, আমি ৬০ বছর ধরে গাছ কাটি (রস সংগ্রহ করি)। রস ও গুড় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছি। আমরা মারা গেলে ছেলেপেলে (সন্তান) কেউ গাছ কাটবে না। এটা অনেক কষ্টের কাজ। এই যুগের ছেলের শিখতে চায় না।

মেলায় অংশ নেওয়া সিংহঝুলি ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের গাছি আনিছুর রহমান বলেন, খেজুর গাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। খেজুর গুড় খাওয়ায় মানুষ বাদ দিয়েছে। কিন্তু এই খেজুর গুড় হতে পারতো চিনির বিকল্প খাদ্য। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। প্রত্যেকেই যদি খেজুর গাজ লাগায় (রোপণ) করি, তাহলে সবার বাড়ি বাড়ি গুড় হবে। চিনির বিকল্প হিসেবে খেজুর গুড় ব্যবহার করতে পারকে। গুড় স্বাস্থ্যসম্মত, সাদা চিনিতে বিষ আছে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

মেলায় আসা দর্শনার্থী আজিজুর রহমান বলেন, দুই বছর ধরে চৌগাছায় খেজুর গুড়ের মেলা হচ্ছে। এতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। খেজুর রস ও গুড় ভিত্তিক অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। একই সঙ্গে খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম সচেতন হচ্ছে।

মেলা আসা দর্শনার্থী শাহানুর আলম উজ্জ্বল বলেন, এই মেলা তখনই সার্থক হবে, যখন আমরা খেজুর গাছ রোপণ ও পরিচর্যা করবো এবং গুড় উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের পৃষ্ঠপোষকতা করবো। এক সময় আমরা খেজুর গুড়ের ব্যাপারে উদাসীন ছিলাম।

চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা বলেন, খেজুর গাছের মালিক কিংবা গাছিরা এক সময় হতাশ হয়ে গাছ কেটে ফেলতেন। ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ বেচে দিতেন। অনেকে খড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। খেজুর গুড়ের শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্য রক্ষার উদ্যোগ হিসেবে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আমরা গাছিদের পাশে আছি, এটা জানান দেওয়ার জন্যই মেলা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গুড় মেলা চালু হয়েছে। ভবিষতে এটি আরও বড় আয়োজন হবে। সারাদেশের মানুষ এই মেলায় আসবেন গুড় কিনতে ও দেখতে। এমনটাই স্বপ্ন দেখি আমি।

যশোরের জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, যশোরের খেজুর রস গুড় আমাদের ঐতিহ্যের একটি অংশ। এই ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করার জন্য উপজেলা প্রশাসন গুড় মেলার আয়োজন করেছে। মেলার মাধ্যমে ঐতিহ্যটাকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সারাদেশের মানুষের মধ্যে যশোরের গুড়ের ঐতিহ্য ছড়িয়ে দিতেই কাজ করছি আমরা।

রিটন/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়