ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

যমুনায় অসময়ে ভাঙন, ৭ গ্রামের দুই শতাধিক বাড়ি বিলীন

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৭, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৬:৪০, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
যমুনায় অসময়ে ভাঙন, ৭ গ্রামের দুই শতাধিক বাড়ি বিলীন

অসময়ে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে যমুনা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুই মাসে নদী ভাঙনে তিন ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক বাড়ি ও ৩০০ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এদিকে, ভাঙনের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। ঘর-বাড়ি  হারিয়ে তাদের অনেকেই এখন খোলা আকাশের নিচে বাসবাস করছেন।

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জালালপুর, খুকনি ও কৈজুরি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে হাটপাচিল পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে যমুনার ভাঙন। এতে ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, পাড়ামোহনপুর, জালালপুর, পাকুরতলা, সৈয়দপুর ও হাটপাচিল গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

জালালপুর গ্রামের আব্দুস সালাম, আব্দুল হাই ও পাকুরতলা গ্রামের আশরাফ আলী বলেন, অসময়ে নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই একের পর এক গ্রামে ভাঙন চলছে। এতে নদীর পেটে চলে যাচ্ছে ফসলি জমিসহ বাড়ি। ভাঙনের কারণে গ্রামের মানুষরা সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে। অনেকের দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে। অনেকে আবার অন্যত্র চলে যাচ্ছেন জীবিকার তাগিদে।

হাটপাচিল গ্রামের আব্দুল মজিদ ও নুরনবী বলেন, চোখের সামনে বাড়ি যমুনার পেটে যাচ্ছে। দুই চোখ দিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারছি না আমরা। গত বর্ষা মৌসুমে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদী থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় বালু উত্তোলন করায় এবং বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর উজান থেকে উত্তোলন করা বালুবাহী ২ শতাধিক বাল্কহেড উচ্চ গতিতে যমুনা নদীর এই স্থান দিয়ে চলাচল করায় তীব্র ঢেউয়ের আঘাতে নদীর পশ্চিম তীরের তলদেশে বালুর স্তর সরে যাওয়ায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। আমরা এসব বাল্কহেড চলতে নিষেধ করলে প্রভাবশালীরা আমাদের প্রাণনাশের হুমকিসহ নানাভাবে হয়রানি করে থাকেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩ বছর আগে ভাঙনরোধে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে। কিন্তু গত ৩ বছরে নাম মাত্র কিছু সিসি ব্লক তৈরি ছাড়া কাজের আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে সময় ও অসময়ে ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন স্থানীয়রা। ভাঙনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছিলে সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম। তিনি ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ও অসহায় মানুষের কষ্টের কথা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকায় সরকারের প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে কিছু কিছু ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ না করায় তাদের  নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সিংহভাগ কাজ চলমান। আশা করছি, চলতি বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও অসহায় মানুষের কষ্টের কথা শুনে পানি সম্পদমন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে ৩ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত সিসি ব্লক স্থাপন করে তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করবে বলে জানিয়েছেন তারা। বাকি অংশের ভাঙনরোধে এ বছর ১০ হাজার জিওটেক্স টিউব ব্যাগ ফেলা হবে। পরবর্তী বছরে ওই অংশেও সিসি ব্লকের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া, হাটপাচিল থেকে ঠুটিয়া স্কুল পর্যন্ত বাঁধ সংস্কার করা হবে। এ কাজ শেষ হলে আগামীতে শাহজাদপুরে কোনো ভাঙ্গন থাকবে না ইনশাহআল্লাহ।

অদিত্য/মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়