ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

গরু বিক্রির টাকায় কেনা ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করেন জালু মিয়া

মলয় দে, ভোলা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৩, ২৯ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৭:১২, ২৯ মার্চ ২০২৪
গরু বিক্রির টাকায় কেনা ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করেন জালু মিয়া

প্রতিদিন ঘোড়ায় চড়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ভিক্ষা করতে যান জালু মিয়া

পলিথিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছোট একটি ঘর। পরের জমিতে বাঁশ, কাঠ ও পলিথিনের বেড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাথা গোঁজার ঠাঁই। শীতের হিমেল হাওয়া এবং বৃষ্টির পানি প্রতিনিয়ত প্রবেশ করে ঘরটিতে। নেই কোনো বিদ্যুৎ। এভাবেই ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার চরগঙ্গাপুর গ্রামে অসহায় ও নিঃসন্তান একটি পরিবার বসবাস করছে। এই পরিবারের কর্তা জালাল আহম্মদ। তিনি সবার কাছেই জালু মিয়া নামেই পরিচিত। প্রতিদিন ঘোড়ায় চেপে ভিক্ষা করা তার পেশা। দুই বেলা খাবার যোগাতে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ঘুরে ভিক্ষা করেন তিনি।

জালু মিয়া জানান, তিনি এক সময় লক্ষন দাসের সার্কাসে কাজ করেতেন। সেখানে তিনি ঘোড়ার খেলা শেখাতেন। সেসময় থেকে ঘোড়ার সঙ্গে তার সখ্যতা তৈরি হয়। পাঁচ বছর কাজ করেছিলেন। ঠিকমতো বেতন না পাওয়ায় পালিয়ে চলে আসেন এখানে। এরপর গরু বিক্রির ১৫ হাজার টাকায় কিনেছেন এই শখের ঘোড়া। আর এভাবেই ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করার অধ্যায় শুরু।

জালু মিয়া বলেন, ‘অন্য কোনো কাজ করার শক্তি নেই আমার। বয়সের কারণে এবং শারীরিক সমস্যায় ঠিকমতো হাঁটতেও পারি না। দূর দূরান্তে গিয়ে ভিক্ষা করতে হয় আমাকে। হেঁটে যে ভিক্ষা করবো তাও পারি না। তাই ঘোড়া কিনেছি। এই ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করি।’

জালু মিয়ার বসত ঘর

প্রতিদিন সকালে প্রিয় ঘোড়াটিকে সঙ্গে নিয়ে কাঁধে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ ঝুলিয়ে ভিক্ষা করার জন্য বের হন জালু মিয়া। অভাবের সংসারে জীবিকার তাগিদে যান তিনি। অনেকেই তাকে চাল এবং অর্থ দেন। সারাদিনে তোলা ভিক্ষার চাল ও টাকা দিয়ে বাজার করে এবং ঘোড়ার জন্য খাবার কিনে বাড়ি ফেরেন তিনি। এছাড়া, বিভিন্ন দোকানে থাকা বাকির টাকাও পরিশোধ করেন তিনি। এভাবেই স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চলছে জালু মিয়ার।

জালু মিয়া বলেন, ‘আমার এই পৃথিবীতে আপনজন বলতে কেউ নেই। আত্মীয় স্বজন যারা আছেন তারা খোঁজ খবর নেয় না। সরকারি কোনো সহায়তাও আমি পাইনি এখন পর্যন্ত। এলাকার সাধারণ মানুষের দয়া ও করুনা নিয়ে বেঁচে আছি। এটাই হয়তো আমার নিয়তি। আল্লাহ’র ইচ্ছা ছাড়া কোনো গাছের পাতাও নড়ে না। হয়তো তিনি চাইছেন, আমি ভিক্ষা করেই সংসার চালাই। তাই কষ্ট হলেও সবকিছু মেনে নিয়েছি।’

চরগঙ্গাপুর গ্রামের অটোরিকশা চালক শাহ আলম বলেন, এই লোকটি (জালু মিয়া) অনেক অসহায়। ঘোড়ায় চড়ে বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করে বেড়ান। তার নিজের কোনো জমি নেই। সরকারের পক্ষ থেকে কতো মানুষকে জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে। সে রকম একটা ঘর যদি জালু মিয়া পেতো তাহলে হয়তো মাথা গোঁজার জায়গা নিয়ে তাকে আর ভাবতে হতো না। 

প্রতিবেশী ইমন বলেন, জালু মিয়া সহজ সরল একজন মানুষ। ভিক্ষা করে যা পান এতে সংসার ঠিকমতো তার চলে না। আত্মীয় স্বজনরাও তার খোঁজ নেয় না।আমরা এলাকাবাসী চাই জালু মিয়ার একটা স্থায়ী ঠিকানা ও কর্মসংস্থান হোক। যাতে তিনি মানুষের দান ও দয়ার জীবন থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন।

জালু মিয়া বলেন, ‘ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষার ভিডিও ধারণ করতে এসে অনেকেই আমাকে ঘর পাইয়ে দেওয়ার মতো বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। কিন্তু, সেই ঘর আমি আজও পাইনি। জানি কোনোদিনই ঘর আমি পাবো না। এর পরেও স্বপ্ন দেখি একটা ঘর ও ভালোভাবে জীবন যাপনের। সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়া আমাকে যেন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সেই একখানা ঘর যেন দেওয়া হয়। তাহলে আমার স্বপ্ন সত্যি হবে।’

এ বিষয়ে বোরহানউদ্দিন উপজেলার সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বাহাউদ্দীন পারভেজ বলেন, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী একজন নদী ভাঙা পরিবারকেই শুধুমাত্র ঘর দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ আছে। সে ক্ষেত্রে জালাল আহম্মদ (জালু মিয়া) নদী ভাঙা পরিবারের একজন হয়ে থাকেন, তাহলে আমরা তাকে ঘর দিয়ে পাশে দাঁড়াতে পারবো। 

বাহাউদ্দীন পারভেজ সমাজসেবা অফিসে জালু মিয়াকে যাওয়ার কথা বলেন এবং অন্য যে কোনো উপায়ে তাকে সহযোগীতা করার আশ্বাস দেন।

মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়