ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

জিম্মি ছালেহ ও রাজুর পরিবারে নেই ঈদ আনন্দ

মওলা সুজন, নোয়াখালী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ৩ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৯:৫২, ৩ এপ্রিল ২০২৪
জিম্মি ছালেহ ও রাজুর পরিবারে নেই ঈদ আনন্দ

জিম্মি রাজুর বাঁ থেকে ভাই রনি, বোন কামরুন নাহার রুমি ও মা দৌলত আরা বেগম

আর মাত্র কয়েকদিন পর ঈদুল ফিতর। সবাই এখন কেনাকাটায় ব্যস্ত। কিন্ত, ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর দুই নাবিক ছালেহ আহমেদ (৪৩) ও আনোয়ারুল হক রাজুর (২৭) পরিবারে নেই কোনো আমেজ। ঈদকে সামনে রেখে কোনো ধরনের কেনাকাটা করছেন না তারা। দুই পরিবারের সবাই অপেক্ষা করছেন প্রিয় মানুষটির ফিরে আসার।

গত ১২ মার্চ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। সেসময় জাহাজটিতে ২৩ জন নাবিক ছিলেন। তাদের মধ্যে ছেলেহ ও রাজুর বাড়ি নোয়াখালীতে।

জিম্মি নাবিক ছালেহ আহমেদ ও আনোয়ারুল হক রাজুর পরিবার জানায়, প্রতিবার অনেক আনন্দ করে ঈদ পালন করা হলেও এবার কোনো আমেজ নেই। ঈদকে সামনে রেখে পরিবারের কেউ কেনাকাটা করছেন না। নেই ভালো কিছুর প্রস্তুতিও। দিন যত যাচ্ছে ততই শঙ্কা এবং উৎকণ্ঠা বাড়ছে। যোগাযোগ না থাকায় পরিবারের কেউ তাদের অবস্থাও জানতে পারছে না। দুই জিম্মির পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ঈদুল ফিতরের আগে ২৩ নাবিককে মুক্ত করার আকুতি জানিয়েছেন।

দস্যুদের হাতে জিম্মি ছালেহ আহমেদ নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার সিংবাহুড়া গ্রামের মৃত সাখাওয়াত উল্যাহর ছেলে। পরিবারের চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। জাহাজের ফাইটার পদে কর্মরত ছিলেন তিনি।

স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে ছালেহ আহমদের পরিবার। সঙ্গে রয়েছেন মা, ভাই, বোন। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ছালেহ আহমদ গত বছর ঈদ করেছেন কর্মস্থলে। পরিবারের আশা ছিল, এবার তাদের সঙ্গে ঈদ করবেন তিনি। কিন্তু, জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার খবরে এলামেলো হয়ে যায় ছালেহ আহমদের পরিবারের স্বাভাবিক জীবন। তিন মেয়েকে নিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ তার স্ত্রী তানিয়া আক্তার। তিনি ছোট তিন মেয়েকে নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন স্বামীর জন্য। একেবারে নিকট স্বজন ছাড়া কারো সঙ্গে কথা বলছেন না তিনি।

জিম্মি ছালেহ  আহমদের স্ত্রী তানিয়া আক্তার

ছালেহ আহমদের স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, ‘এই ভেবে নিজেদের সান্তনা দিচ্ছি- এখনো সময় আছে স্বামী ফিরবে। সরকার ২৩ জন নাবিককে ঈদের আগে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে আনবে এমন প্রত্যাশা করছি আমরা।’

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি আনোয়ারুল হক রাজু নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রামপুর গ্রামের আজিজুল হক মাস্টারের ছেলে। 

আজিজুল হক মাস্টার বলেন, ‘দুই ভাই এবং এক বোনের মধ্যে রাজু সবার ছোট। গত নভেম্বরের শেষ দিকে রাজু সিঙ্গাপুর থেকে জাহাজে ওঠে। এরপর ছেলের বন্দিদশায় বদলে গেছে পরিবারের চিত্র। এবার বাড়িতে এসে ঈদ করার কথা ছিল রাজুর। ঈদের আগেই আমার সন্তানসহ সব নাবিকদের মুক্ত করার ব্যবস্থা যেন সরকার করে।’

রাজুর মা দৌলত আরা বেগম বলেন, খুবই কষ্টে দিন অতিবাহিত করছি। ছেলে জিম্মি। এ অবস্থায় কোনো মা কি ভালো থাকতে পারে। ছেলে ছাড়া আমাদের ঈদ আনন্দ নেই। প্রধানমন্ত্রী ঈদের আগেই যেন আমার ছেলেসহ জিম্মি সবাইকে ছাড়িয়ে আনেন।’

রাজুর বড় বোন কামরুন নাহার রুমি বলেন, ‘বাড়িতে নতুন ঘরের কাজ চলছে রাজুর বিয়েকে উপলক্ষ্য করে। তার স্মৃতি চারণ করে এখন বাবা-মা শোকে কাতর। পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে ভালো নেই।’

মাসুদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়