ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মুক্তিযোদ্ধা বাবার আর্তনাদ

ছেলে গুলিতে মারা গেছে বিশ্বাসই করতে পারছি না! 

হৃদয় এস সরকার, নরসিংদী  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪০, ২ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ১২:২০, ২ আগস্ট ২০২৪
ছেলে গুলিতে মারা গেছে বিশ্বাসই করতে পারছি না! 

রাসেল মিয়া

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংঘর্ষে গত ১৯ জুলাই শুক্রবার রাজধানীর রামপুরায় জুমার নামাজ শেষে ভাড়া বাসায় ফেরার পথে গুলিতে নিহত হন রাসেল মিয়া (৩৬)। মৃত্যুর সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো কাটেনি পরিবারের শোক। নিহতের বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি। 

নিহত রাসেল বীর মুক্তিযোদ্ধা হাছেন আলীর ছেলে। গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার দুলালকান্দি গ্রামে। তিনি আর.এম মাল্টিমিডিয়া নামে টেলিভিশন বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও পরিচালক ছিলেন। রাজধানীর রামপুরা এলাকায় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট)  নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের শোকে স্তব্ধ পুরো পরিবার। বাড়িতে লোকজনের আনাগোনায় কিছুক্ষণ পর পর মূর্ছা যাচ্ছেন নিহতের মা-বাবা ও স্বজন। ছেলের ছবি হাতে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বিলাপ করছিলেন মা। 

বাবা মুক্তিযোদ্ধা হাছেন আলী বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মুঠোফোনে অপরিচিত একজন ফোন করে জানান ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সে আশংকাজনক অবস্থায় মুগদা হাসপাতালে আছে। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ওইদিন আনুমানিক বিকেল ৩টায় মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে আমার ছেলের স্ত্রী, আমার আরেক ছেলে এবং মেয়ে হাসপাতালে যায়। তার বুকের বামপাশে একটি গুলি লাগে। 

কাঁদতে কাঁদতে তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশের জন্য আমি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছি। আমার নিষ্পাপ ছেলে বিজিবির গুলিতে মারা গেছে বিশ্বাসই করতে পারছি না, এমনভাবে আর কোনো বাবা-মার বুক যেনো খালি না হয়।’

বোন হাসনাত রেহেনা বলেন,  ‘গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে আমি হাসপাতালে ছুটে গিয়ে দেখি আমার ভাই আর বেঁচে নেই। হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বুকের বামপাশে একটি গুলি লাগে। ওই সময় তার মৃত্যু হয়।’ 

নারায়ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান কাউসার কাজল বলেন, ১৯ (জুলাই) তারিখে রাসেল ঢাকায় গুলিতে মারা গেছে। পরদিন দুপুরে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে প্রথম কেউই বিশ্বাস করতে পারেননি। আমরা নিয়মিত পরিবারের খোঁজ খবর নিচ্ছি।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে সৃষ্টি হয়েছিলো অস্থিতিশীল পরিবেশ। ১৯ জুলাই শুক্রবার রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ এলাকায় শিক্ষার্থী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় রাসেল রামপুরার বাসার পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন। বিজিবির গুলিতে আহত হন রাসেল। আশেপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকার মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আনুমানিক বিকেল ৩টায় মৃত ঘোষণা করেন। স্বজনরা লাশ বাড়ি নিয়ে আসে। পরদিন শনিবার দুপুরে জানাজা শেষে নিজ বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। 

/টিপু/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়