‘বাবা কবে আসবে বাড়ি’
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
সোহানুর রহমান রঞ্জু, তার স্ত্রী মৌসুমী ও দুই বছরের শিশু সুমাইয়া খান রোজা।
দুই বছরের শিশু কন্যা সুমাইয়া খান রোজা। দুনিয়ার অনেক কিছুই তার এখনো অজানা। অবুঝ শিশুটি মায়ের কাছে প্রতিনিয়তই জানতে চায় বাবা কই? বাবা কবে আসবে বাড়ি। মোবাইলে বাবার ছবি দেখিয়ে শিশু সুমাইয়াকে মা মৌসুমী সান্ত্বনা দিচ্ছেন। তার চোখে যেন বাবাকে দেখার একধরনের ক্ষুধা। সারাদিন খুঁজে বেড়ায় তার প্রিয় বাবার মুখ। তবে এখনো সে বুঝতে পারেনি, তার বাবাকে সে কখনো দেখতে পাবে না। কোনদিনও পাবে না বাবার ভালোবাসা।
মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) অবুঝ সন্তানের এ রকম অনেক প্রশ্নের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মাছুমপুর মহল্লার সোহানুর রহমান রঞ্জুর স্ত্রী মৌসুমী।
মৌসুমী জানান, বাবা ফেরার অপেক্ষায় প্রতিদিন এভাবে নানা ধরনের আশ্বাস দিয়ে সুমাইয়াকে খাবার খাওয়াতে হয়। মেয়েকে দেওয়া সান্ত্বনা বুকের ভেতর চাপা দিয়ে মনে নানা প্রশ্ন নিয়ে ঘুমাতে যান তিনি।
জানা যায়, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সিরাজগঞ্জ শহরের এস.এস রোড এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সংঘর্ষ হয়। সেখানে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রঞ্জুকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত শহীদ সোহানুর রহমান রঞ্জু মাছুমপুর মহল্লার মাজেদ খানের ছেলে। তিনি পৌর যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরদিন শহীদ সোহানুর রহমান রঞ্জুর লাশ জানাজা শেষে কান্দাপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রঞ্জুর স্ত্রী মৌসুমী খাতুন জানান, ঘটনার আগের দিন আমি তাকে বলেছিলাম তুমি আন্দোলনে যাচ্ছ, কিন্তু পুলিশ যেভাবে গুলি করছে। সাধারণ মানুষসহ অনেক মানুষকে গুলি করে মারছে। আমার কথায় তিনি বলেছিলেন, গুলি করা বন্ধ হয়েছে। আজকে দেশ স্বাধীন করবো। না হয় জীবন দিবো। এই বলে তিনি বাড়ি থেকে বেড় হয়ে যায়। সেদিন জীবন দিলো আমার স্বামী। আমার স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
তিনি জানান, রঞ্জুর লাশ বাড়িতে আনার পর প্রতিবেশীরা খাটিয়ার ওপর জাতীয় পতাকা বিছিয়ে দেন। রোজা ওই অবস্থায় বাবাকে দেখে। এরপর থেকেই বাবা কোথায় জিজ্ঞেস করে। আমার স্বামী তো কোনো দোষী ছিলো না। তাহলে তাকে কেন মারল। এর দায় কে নেবে?
প্রতিবেশী বেবী খাতুন বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন রঞ্জু। তাকে হারিয়ে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছেন। যতদূর শুনেছি, মৌসুমী সমাজকল্যাণ বিষয়ে স্নাতকে পড়ত। একটি চাকরি পেলে তিনি ছোট মেয়েকে নিয়ে অন্তত দু’মুঠো খেতে পারবেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ খান হাসান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে নিহত হয়েছে রঞ্জু। লাশ দাফনের পরে নিহতের পরিবারকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নিহতের পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছে জেলা বিএনপি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিরাজগঞ্জ জেলার সেক্রেটারী জাহিদুল ইসলাম বলেন, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিলেন। সেই আন্দোলনের সঙ্গে একতা জানিয়েছিলেন রঞ্জু। এতে রঞ্জুকে গুলি ও উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি দুর্দশায় পড়ে। পরে নিহতের পরিবারকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।
রাসেল/ইমন