সাম্য হত্যা: গ্রেপ্তার ৩ যুবক এলাকায় নানা অপরাধে জড়িত
মাদারীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

গ্রেপ্তার তিন যুবক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজনের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে। তাদের মধ্যে তামিম (৩০) ও পলাশ সরদার (৩০) সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের শিমুলতলা এলাকার বাসিন্দা। অন্যজন সম্রাট মল্লিক (২৮) ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের শশীকর এলাকার বাসিন্দা।
মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে একদল দুর্বৃত্ত। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় রাত ১২টার দিকে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাম্যকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ও এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি।
বুধবার (১৪ মে) সকালে সাম্যের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ হত্যার পরপরই রাতে ঢাকার গ্রিনরোড ও রাজাবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই তিন জনকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। তাদের ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ তিনজন বিভিন্ন সময়ে এলাকায় নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আওয়ামী লীগের সরকার পতনের আগে তামিম ও পলাশ গ্রামে নিজ বাড়িতে থাকতেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। ডাসার উপজেলার নবগ্রাম শশীকর এলাকার সম্রাট মাদকাসক্ত বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঝাউদি ইউনিয়নের শিমুলতলা এলাকার এরশাদ হাওলাদারের ছেলে তামিম ও কালাম সরদারের ছেলে পলাশ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল খাঁ ও রুবেল খাঁ গ্রুপের লোক। তাদের লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করতেন। আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো পদ-পদবী না থাকলেও দলের ছত্রছায়ায় থাকতেন তারা। চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর তারা ঢাকায় চলে যান। আর বাড়ি ফেরেননি। পলাশের বাবা কালাম সরদার এক সময় পালকি বহন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। অন্যদিকে, তামিমের বাবা এলাকায় জমি বেচাকেনার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
অন্যদিকে, ডাসারের যতীন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সম্রাট মল্লিক মাদকাসক্ত হিসেবে এলাকায় পরিচিত। বেশ কিছু দিন আগে মসজিদের মাইক লাগানো নিয়ে এলাকায় ছাত্রদের মারধর করেন তিনি। এ নিয়ে ডাসার থানায় অভিযোগ রয়েছে সম্রাটের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘‘তারা কেউ ভালো পরিবারের ছেলে না। চাঁদাবাজি, মাদকের সঙ্গে জড়িত। আগে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতার লাঠিয়াল গ্রুপের সদস্য ছিলেন। এখন এলাকা ছেড়ে ঢাকায় থাকেন।’’
ডাসারের বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘শুনেছি ঢাকার তিনশ ফিট, টিএসসিসহ বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি করে এই গ্রুপটি।’’
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল হোসেন বলেন, ‘‘আমরা খোঁজ নিচ্ছি, তাদের বিরুদ্ধে এখানকার থানায় মামলা রয়েছে কি-না। ইতোমধ্যে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে।’’
ডাসার থানার ওসি শেখ এহতেশামুল ইসলাম জানান, সম্রাটের বিরুদ্ধে ডাসার ও ডিএমপির রূপনগরসহ বিভিন্ন থানায় তিনটি মাদক মামলা রয়েছে। তার বিষয় বিস্তারিত খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
ঢাকা/বেলাল/বকুল