ঢাকা     শনিবার   ১২ জুলাই ২০২৫ ||  আষাঢ় ২৮ ১৪৩২

হুইল চেয়ারে রফিজ উদ্দিনের জীবন সংগ্রাম

অমরেশ দত্ত জয়, চাঁদপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১২, ১৩ জুন ২০২৫   আপডেট: ২০:৩৩, ১৩ জুন ২০২৫
হুইল চেয়ারে রফিজ উদ্দিনের জীবন সংগ্রাম

এক সময় সাধারণ দশজনের মতোই শারীরিকভাবে সক্ষম ছিলেন রফিজ উদ্দিন (৫২)। ছিল বেঁচে থাকার স্বপ্ন। ছিল জীবন গড়ার আশা। সেই জীবন গড়তে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। একটি দুর্ঘটনা তার জীবনের গতিপথ বদলে দিয়েছে। জীবনের হিসাব নয়, এখন প্রতিদিন খাবার খরচের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন রফিজ উদ্দিন। 

চাঁদপুর লঞ্চঘাটে যারা যাতায়াত করেন তাদের চেনা মুখ হতে পারেন রফিজ উদ্দিন। ভাঙ্গা হুইল চেয়ারে এই লঞ্চঘাটে বসেই পানি বিক্রি করেন তিনি। এই লঞ্চঘাটেই একদিন শুরু হয়েছিল তার কর্মজীবন। এই ঘাটেই হারিয়েছেন পা। তবুও ঘাট ছাড়েননি তিনি। দায়িত্ববোধ থেকে, ৫ জনের সংসারের ঘানি টানছেন দু’পায়ের সহায়তা ছাড়াই। 

রফিজ উদ্দিন চাঁদপুর পৌর ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের টিলাবাড়ী এলাকার মৃত আজিজ মাঝির বড় ছেলে। ছোটবেলা থেকেই সংসার কাঁধে চেপে বসে। লঞ্চঘাটে হকারি শুরু করেন। এই আয় থেকেই আদরের ছোট বোন মাজেদা খাতুনের বিয়ে দেন। নিজেও বিয়ে করেন অনেক পরে। বর্তমানে তিনি টিনশেড ঘরে পরিবারসহ ভাড়া থাকেন।

রফিজ উদ্দিন বলেন, ‘‘সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা এবং সন্ধ্যা থেকে আবার রাত ১২টা পর্যন্ত লঞ্চঘাটে পানি বিক্রি করি। গড়ে প্রতিদিন ৬শ’ টাকা আয় হয়। এই দিয়েই সংসার চালাচ্ছি।’’

‘‘ঘরে স্ত্রী ভানু বেগম অসুস্থ। বাম পা অকেজো। বড় ছেলে বাদশা মাঝি বেকার। ছোট ছেলে শাহাদাত মাঝি সামান্য কিছু আয়ের চেষ্টা করছে। মেয়ে মানসুরা খাতুন স্কুলে পড়ে। পুরো পরিবারের চিকিৎসা খরচ, মেয়ের পড়ালেখার খরচ, ঘরভাড়া, বাজারসদাই আমাকে সামলাতে হয়।’’

একটু দম নেন রফিজ উদ্দিন। দুঃখের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘এক সময় লঞ্চঘাটে কলা, রুটি, সিগারেট বিক্রি করতাম। ১৯৯৫ সালে লঞ্চ থেকে কলা নিয়ে নামার সময় দুই লঞ্চের মাঝখানে পড়ে পা দুটো থেতলে যায়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে আমাকে বাঁচাতে পা দু’টো কেটে ফেলা হয়। সবাই ভেবেছিল আমাকে হয়ত ভিক্ষা করে খেতে হবে। কিন্তু আমি ওপথে যাইনি। একটা পুরোনো হুইল চেয়ার সংগ্রহ করে লঞ্চঘাটেই পানি বিক্রি করছি।’’

নতুন হুইল চেয়ার এবং কিছু আর্থিক সহায়তা পেলে জীবনে এখনও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন রফিজ উদ্দিন। 

বিষয়টি চাঁদপুরের প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা সুমন নন্দীকে অবগত করলে তিনি বলেন, ‘‘রফিজ উদ্দিন ভোটার আইডি কার্ড, শরীরের ছবিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আমাদের কার্যালয়ে এলে আমরা তাকে যত দ্রুত সম্ভব নতুন একটি ট্রাই সাইকেল বা হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেব। পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার ব্যাপারটি নিয়েও আমরা কাজ করবো।’’

তারা//


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়