ইস্পিতা কেন লঞ্চ থেকে লাফ দেন, মেলেনি উত্তর
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

ভোলা সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুকন্যা আক্তার ইস্পিতা।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমনী মোহন ইউনিয়নের বুড়িরঘাট এলাকার মেঘনা নদীর তীরে অজ্ঞাত এক তরুণীর মরদেহ ভেসে আসে। পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি দাফনের জন্য জেলা আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
গত ২০ জুন ইস্পিতার মরদেহ উদ্ধারের পর ওই দিনই দাফন সম্পন্ন হয়।
এই ঘটনার দুই দিন পর ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা দাবি করেন, মেঘনার তীরে উদ্ধার হওয়া মরদেহটি তার মেয়ে সুকন্যা আক্তার ইস্পিতার (২১)। যিনি গত ১৭ জুন সকালে বাসা থেকে টিউশনির কথা বলে বের হয়ে আর ফেরেননি।
মাসুদ রানা বলেন, ‘‘ইস্পিতা নিখোঁজ হওয়ার কয়েক দিন পরে খবর পাই, ভোলা থেকে ঢাকাগামী এমভি কর্ণফুলী-৪ লঞ্চ থেকে এক তরুণী নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। পরে কর্ণফুলী লঞ্চের ভোলা অফিসে যাই। সেখানে ছবি দেখে নিশ্চিত হই, লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দেওয়া তরুণী আমার মেয়ে।’’
লঞ্চ কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের বরাতে তিনি বলেন, ‘‘জসীম নামের এক ব্যক্তির বুকিং করা কেবিনে উঠেছিল ইস্পিতা। নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার আগে ইস্পিতা মোবাইলে কারো সঙ্গে উত্তেজিতভাবে কথা বলছিল।’’
মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, ‘‘আমার মেয়ে কেন ঢাকাগামী লঞ্চে উঠল, তা তদন্তে বের করা দরকার। প্রশাসন মোবাইল ট্র্যাকিং ও কল লিস্ট বিশ্লেষণ করলেই বিস্তারিত জানা যাবে। কেউ তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে থাকলে বা হত্যা করে থাকলে তার বিচার চাই।’’
সুকন্যা আক্তার ইস্পিতা ভোলা সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন বলে জানান মাসুদ রানা।
এদিকে ইস্পিতার মৃত্যু ঘিরে ওই লঞ্চের সেদিনকার যাত্রীদের মধ্যে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ দাবি করেছেন, লঞ্চের কেবিনে ধর্ষণের শিকার হয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন ইস্পিতা। যদিও এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
কর্ণফুলী-৪ লঞ্চের সুপারভাইজার নান্টু বাবু বলেন, ‘‘ইলিশা ঘাট ছাড়ার পর কালীগঞ্জ অতিক্রম করে কিছু দূর গেলে খবর আসে, এক তরুণী তৃতীয় তলা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। দ্রুত লঞ্চ পেছনে নিয়ে তাকে উদ্ধারে চেষ্টা চালানো হয়। এ সময় তরুণীকে একবার নদীতে ভাসতে দেখা গেলেও কাছে যাওয়ার আগেই তিনি চোখের আড়াল হয়ে যান। পরে কোস্ট গার্ডকে জানিয়ে লঞ্চ আবার ঢাকার পথে রওনা দেয়।’’
ব্রাদার্স নেভিগেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক আলাউদ্দিন বলেন, ‘‘ঘটনার পরপরই লঞ্চে থাকা অন্য এক নারী ৯৯৯-এ ফোন করে জানান, ওই তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জে পৌঁছালে পুলিশ দুই স্টাফ ও অভিযোগকারী নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়। প্রাথমিকভাবে তাদের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’’
লক্ষ্মীপুর মজু চৌধুরী হাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আজিজুল হক বলেন, ‘‘উদ্ধারের সময় মরদেহে কালচে দাগ ছিল। এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছি।’’
লক্ষ্মীপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবদুল মোন্নাফ বলেন, ‘‘নৌ-পুলিশ একটি হত্যা মামলা করেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন।’’
ঢাকা/লিটন/রাজীব