গোপালগঞ্জে কবর থেকে ৩ লাশ উত্তোলনের নির্দেশ
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের মরদেহ কবর থেকে তুলে সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২১ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে হত্যা মামলার বাদীরা মরদেহ উত্তোলনের আবেদন করলে আদালত এ নির্দেশ দেন। যাদের মরদেহ উত্তোলন করা হবে, তারা হলেন—রমজান কাজী, ইমন তালুকদার ও সোহেল রানা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান বলেছেন, নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদীগণ আজ আদালতে সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উত্তোলনের জন্য আবেদন করেন। আদালত একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে নিহত রমজান কাজী, ইমন তালুকদার ও সোহেল রানার লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা গোপালগঞ্জ পৌর কবরস্থানে গিয়ে নিহত রমজানের লাশ আগে উত্তোলন করব।
এর আগে শনিবার রাতে সদর থানার চার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় চারটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ জনকে এবং একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ৯০০ জনকে।
রমজান কাজী নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করেন গোপালগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আইয়ুব হোসেন। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে থেকে ৯০০ জনকে।
মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, গত বুধবার (১৬ জুলাই) এনসিপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে পৌর পার্ক থেকে দুপুরে মাদারীপুরের উদ্দেশে গাড়িবহর নিয়ে রওনা দিয়ে নেতৃবৃন্দ গোপালগঞ্জ শহরের এসকে সালেহিয়া মাদ্রাসার কাছে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং দুষ্কৃতকারীরা গাড়িবহরে দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করে। পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতে বাধা দেয়। হামলাকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর গুলি চালায়। এ সময় রমজান কাজী (১৭) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দীপ্ত সাহা (২৭) নিহতের ঘটনায় সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম হোসেন বাদী হয়ে ১৯ জুলাই গভীর রাতে মামলা করেন। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করা হয়।
বাদী উল্লেখ করেছেন, গত বুধবার (১৬ জুলাই) এনসিপির গাড়িবহরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং দুষ্কৃতকারীরা হামলা করলে শহরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। কলেজ মসজিদের পাশে মিলন ফার্মেসির সামনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এটি প্রতিরোধ করতে গেলে হামলাকারীরা গুলি করে। সেখানে দীপ্ত সাহা গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সোহেল রানা মোল্লা নিহতের ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন একই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ জনকে।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেছেন, লঞ্চঘাট এলাকায় হোটেল রাজের সামনে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও দুষ্কৃতকারীরা এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী এগিয়ে এলে তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় হামলাকারীরা। এ সময় সোহেল রানা মোল্লা (৩০) মারাত্মক আহত হন। সোহেলকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে, ইমন তালুকদার নিহতের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ মিজানুর রহমান।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেছেন, গত ১৬ জুলাই আসামিরা শহরের পুরাতন সোনালী ব্যাংকের সামনে এনসিপির গাড়িবহরে হামলা করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতে বাধা দিলে দুষ্কৃতকারী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গুলি চালায়। এতে ইমন তালুকদার গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা/বাদল/রফিক