ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মুন্সীগঞ্জে পদ্মা নদীতে ভাঙন, ঘর সরাতে হিমশিম অবস্থা

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ১৮ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ১০:৪৯, ১৮ আগস্ট ২০২৫
মুন্সীগঞ্জে পদ্মা নদীতে ভাঙন, ঘর সরাতে হিমশিম অবস্থা

মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পদ্মা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কারণে ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে কিছু বসত ঘরসহ ৯টি দোকান। ভাঙন আতঙ্কে নদীর পাড় থেকে ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন স্থানীয়দের অনেকেই। তারা জানান, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হুমকিতে পড়বে রাস্তা, হাটবাজার ও শতাধিক বসতবাড়ি।

এক সপ্তাহ আগে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপার বাজার এলাকার পাশ দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। ওই এলাকায় আগে জিও ব্যাগ ভর্তি বালু ফেলা হয়েছিল। পানির তীব্র স্রোতে জিও ব্যাগ ভেসে গিয়ে ভাঙন দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত এই বাজারের ৯টি দোকান   বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজল হক মোল্লা। নতুন করে জিও ব্যাগ ফেলায় দিঘিরপার বাজার এলাকার ভাঙন কিছুটা কম। 

আরো পড়ুন:

এই উপজেলার কান্দাবাড়ি এলাকায় প্রায় ২৫ বছর আগে একবার ভাঙন দেখা দেয়। পর ওই এলাকায় চর জেগে উঠলে ঘর তুলে বসবাস করতে শুরু করেন স্থানীয়রা। ২০২২ সাল থেকে আবারও পদ্মা গিলে খেতে থাকে ওই চরাঞ্চলের কান্দারবাড়ি, সরিষাবন, ধানকোরা ও মাঝিকান্দি গ্রাম। ফলে প্রায় ৭০০ পরিবার গৃহহারা হয়েছেন। বিলীন হয়েছে বহু মসজিদ ও স্কুল, কবরস্থান। 

এদিকে, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পূর্ব রাকিরকান্দি এলাকায় তীব্র নদী ভাঙন চলছে। চার দিনের ভাঙনে প্রায় ৩০টি পরিবার গৃহহারা হয়েছে বলে জানান ওই এলাকার লোকজন।

ভক্তভোগীদের অভিযোগ, টঙ্গিবাড়ীর দিঘিরপাড় বাজারের পাশে পদ্মার যে শাখা নদীটি তাণ্ডব চলাচ্ছে ৬-৭ বছর আগেও সেটি ছিল সরু খালের মতো। শুষ্ক মৌসুমে সেটি শুকিয়ে যেতো। সরু খালের মতো নদীটি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণেই নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়। যার গতি প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরেজমিনে সদর উপজেলার পূর্ব রাকিরকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীর থেকে ঘর সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন এলাকাবাসী। অনেকেই গাছ কেটে তার কাঠ বিক্রি করে দিচ্ছেন। স্থানীয় কয়েকজন জানান, চার দিন ধরে নদী ভাঙন চলছে। তাদের অন্তত ৩০টি বসত বাড়ি নদীতে ভেঙে গেছে।

ঘর সড়িয়ে নেওয়ার কাজে ব্যাস্ত হায়দার আলী বলেন, “দুই বছর ধরে নদীর তীর ভাঙতাছে। কেউ আমাদের খোঁজ নেই নাই।”

লিপি আক্তার বলেন, “সরকারি লোকরা আমাদের সাহায্য সহযোগিতা তো দূরের কথা একটি বার এসে খোঁজ খবরও নিল না। কয়েকদিন ধরে নদী ভাঙতাছে। ঘর সরিয়ে নিতে হচ্ছে। এই কাজ করতে হিমশিম অবস্থা আমাদের।”

মজনু সরদার বলেন, “আমাদের সব শেষ হইয়া গেলো। সহযোগিতা দূরের কথা কেউ দেখতে পর্যন্ত আসলো না।”

রিপন নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, “চেয়ারম্যানরা ভোটের সময় আসে। ভোট চাওয়ার সময় হাত পা জড়াইয়া ধরে। তারপর আর তাদের খোঁজ থাকে না।”

দিঘিরপার বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজল মোল্লা বলেন, “আমরা আগেই পানি উন্নায়ন বোর্ডকে বলেছিলাম। তারা যদি আগে বালুর বস্তা ফেলতো তাহলে হয়তো আমাদের বাজারের কোটি কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হত না।”

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান বলেন, “ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। অচিরেই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে ভাঙন ঠেকাতে প্রাথমিক পর্যায়ে বালু ভর্তি জিও বেগ ফেলা হচ্ছে।”

পানি উন্নায়ন বোর্ডের উপবিভাগীর প্রকৌশলী শেখ এনামুল হক বলেন, “ভাঙ্গন কবলিত স্থানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এরপর সিসি ব্লক ফেলা হবে।” 

তিনি আরো বলেন, “২০২০-২১ সালে পদ্মা নদীর বাম তীর রক্ষা করার জন্য লৌহজং-টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। দুই দফা সংশোধিত হয়ে চলমান প্রকল্প ব্যয় ৫২৭ কোটি টাকা হয়েছে। প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এরমধ্যে ২৬টি প্যাকেজের কাজ অন্তর্ভুক্ত আছে। আমরা আশা করছি, এই প্রকল্প আমরা নির্ধারিত সময়ে শেষ করব এবং নদীর ভাঙন রোধ করব।"

ঢাকা/রতন/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়