ঢাকা     সোমবার   ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাগেরহাটে সাংবাদিক হায়াত উদ্দিনের দাফন

বাগেরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪০, ৪ অক্টোবর ২০২৫  
বাগেরহাটে সাংবাদিক হায়াত উদ্দিনের দাফন

হত্যার শিকার সাংবাদিক ও বিএনপি নেতা এস এম হায়াত উদ্দিনের হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।

বাগেরহাটে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত সাংবাদিক ও বিএনপি নেতা এস এম হায়াত উদ্দিনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (০৪ অক্টোবর) রাতে শহরের হাড়িখালি এলাকার নিজ বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে হাড়িখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। 

জানাজায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এ এম আকরাম হোসেন তালিম, বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তরফদার রবিউল ইসলামসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ও জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় শহরের হাড়িখালি এলাকায় দৈনিক ভোরের চেতনা পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক হায়াত উদ্দিনকে (৪০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে ও হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করা হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নেয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে হায়াত উদ্দিনের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় বাগেরহাটে নিয়ে আসা হয়।

নিহত হায়াত উদ্দিন শহরের হাড়িখালি এলাকার মৃত নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি সম্প্রতি বাগেরহাট পৌর বিএনপির সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন। তবে তিনি পরাজিত হন। এর আগে হায়াত উদ্দিন পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। হায়াত উদ্দিন স্ত্রী এবং ৮ ও ১ বছর বয়সী দুটি মেয়ে সন্তান রেখে গেছেন। 

প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী বলেন, হাড়িখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন মোড়ে চায়ের দোকানে বসে ছিলেন হায়াত উদ্দিন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে করে এসে চার–পাঁচ যুবক অতর্কিত তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে হামলাকারী ব্যক্তিরা ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়। 

বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তরফদার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘মাদক কারবার, ঠিকাদারি কাজের মান, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন হায়াত উদ্দিন। কয়েক মাস আগেও তার ওপর হামলা করা হয়।’’

স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘‘শুধু সত্য কথা বলার কারণে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।’’

হায়াত উদ্দিনের মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে সন্ত্রাসীরা বাড়িতে এসে আমার ছেলেকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। তখন আমার ছেলে মামলা করেছিল। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আসলে বিচার দেওয়ার আমাদের কোনো জায়গা নেই। তাই আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি।’’ 

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘‘হত্যার সঙ্গে জড়িতদের আমরা প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছি। তার নাম ইসরাইল মোল্লা। তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এজাহার দিলে মামলা করা হবে।’’ 

অভিযুক্ত ইসরাইল মোল্লা হাড়িখালি এলাকার আব্দুস ছালাম মোল্লার ছেলে। তিনি বিএনপির কর্মী। পাশাপাশি ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড হেলথ কেয়ার সোসাইটির বাগেরহাট জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে মাদক কারবার করার অভিযোগ রয়েছে। 

এদিকে, হত্যার শিকার সাংবাদিক ও বিএনপি নেতা এস এম হায়াত উদ্দিনের হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। দুপুরে প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধনে শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী অংশ নেন। 

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক তরফদার রবিউল ইসলাম, টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হক, সাংবাদিক এস এম রাজ, আহাদ উদ্দিন হায়দার, হেদায়েত হোসেন লিটন, ইয়ামিন আলী, এইচ এম মইনুল ইসলাম, মোল্লা আব্দুর রব, এস এস শোহান, মিরনুজ্জামান, এস এস সাগর, কামরুজ্জামান শিমুল প্রমুখ। 

বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে একজন সংবাদকর্মীকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের আটক করতে হবে। তা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেন সংবাদকর্মীরা।

এদিকে, সংবাদকর্মীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মানববন্ধনে যোগ দেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার জাকির হোসেন, খান মনিরুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানা, ফকির তারিকুল ইসলাম, শাহেদ আলী রবি, মাহবুবুর রহমান টুটুলসহ জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

তারা বলেন, হায়াত উদ্দিন শুধু সাংবাদিক ছিলেন না, তিনি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী একজন সৈনিক ছিলেন। তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তার হত্যাকারী যত শক্তিশালী হোক তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। 

ঢাকা/শহিদুল/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়