ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বিয়ের শাড়ি পরে সেই রূপলালের মেয়ে বললেন, ‘বাবাকে হত্যার বিচার চাই’

রংপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৯, ২ নভেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৯:১৩, ২ নভেম্বর ২০২৫
বিয়ের শাড়ি পরে সেই রূপলালের মেয়ে বললেন, ‘বাবাকে হত্যার বিচার চাই’

রূপলালের পরিবারের সদস্যরা। ছবি: রাইজিংবিডি

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামের রূপলালকে প্রায় তিন মাস আগে মব সৃষ্টি করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। রূপলাল যেদিন মারা যান, তার পরের দিন বড় মেয়ে নূপুর রানীর বিয়ের দিন ঠিক করার কথা ছিল। দীর্ঘ শোকের পর অবশেষে সেই মেয়ের বিয়ে হলো আজ।

রবিবার (২ নভেম্বর) নূপুরের বিয়ে উপলক্ষে রূপলালের বাড়িতে ছিল নানা আয়োজন। তবে, এত আনন্দের মাঝেও স্বজনদের চোখে-মুখে ছিল শোকের ছায়া।

রুপলালের পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১০ আগস্ট রূপলালের মেয়ে নূপুর রানীর বিয়ের দিন ঠিক হওয়ার করার কথা ছিল। এজন্য ৯ আগস্ট মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে রূপলালের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন ভাগ্নি জামাই প্রদীপ দাস। কিন্তু, গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা না চেনায় প্রদীপ ফোন করেন রূপলালকে। খবর পেয়ে সেখানে যান তিনি। পরে রূপলাল ও প্রদীপ ভ্যানে চড়ে ঘনিরামপুর গ্রামের দিকে রওনা হন। রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে ভ্যান চোর সন্দেহে তাদের থামায় কয়েকজন। এরপর সেখানে আরো লোক জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে মব তৈরি করে রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাসকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রূপলালের স্ত্রী হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। বাবার মৃত্যুর পর নূপুর রানীর বিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। রূপলালকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে পুরো পরিবার। পরে নূপুরের বিয়ের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ লাখ, তারাগঞ্জ হাটের ব্যবসায়ীরা ৭১ হাজার, উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ৭৫ হাজার ও একটি সংগঠন থেকে ১ লাখ টাকা টাকা দেওয়া হয়। এছাড়া, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে রূপলালের ছেলে জয় ও ছোট মেয়ে রুপাকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়েছে।

রূপলালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের ভেতরে নূপুর বসে আছেন বিয়ের শাড়িতে। মুখে বিয়ের সাজ, কিন্তু চোখদুটো লাল। পাশে মা ভারতী রানী—নীরবে অতিথি আপ্যায়নের প্রস্তুতি সামলাচ্ছেন।

ভারতী রানী বললেন, “বেটির বিয়া ঠিক করার জন্য ভাগ্নি জামাইকে আনতে গিয়েছিল আমার স্বামী। কিন্তু, সেখানে তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়া মারি ফেলছে। আজ বেটির বিয়া, ওর বাপ নাই; চিন্তা করতেই বুকটা ফাটি যাওছে। ওমাক (রূপলাল) ছাড়া পুরা বাড়ি ফাঁকা ফাঁকা লাগেছে। কষ্টে ভেতরটা ভাঙি যাওছে।’’

নূপুর বলেন, “বাবার ইচ্ছে ছিল, ধুমধাম আয়োজনে আমার বিয়ে দেবে। এখন সব আয়োজন হচ্ছে, কিন্তু আমার মনে কেবল বাবার মুখটা ভাসছে। বাবা নেই, কে আমাকে আশীর্বাদ দিবে?’’

হত্যাকারীরা এখনো ধরা পড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘তারা এখনো হাটে-বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে, আমি তাদের বিচার চাই।”

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানা বলেন, ‘‘রূপলালের মেয়ের বিয়ের জন্য এক লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। ছেলে ও ছোট মেয়ের জন্য শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া, স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে তারাগঞ্জ বাজারে রূপলানের ছেলের জন্য একটি দোকান দেওয়া হবে। উপজেলা প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে আছে।’’

ঢাকা/আমিরুল/রাজীব

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়