ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

নবজাতককে প্রবাসীর স্ত্রীকে দিয়ে মায়ের পলায়ন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৬, ১৯ নভেম্বর ২০২৫  
নবজাতককে প্রবাসীর স্ত্রীকে দিয়ে মায়ের পলায়ন

মালয়েশিয়া প্রবাসী ফজলুর করিমের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন মাতৃস্নেহে নবজাতকটিকে মানুষ করার দায়িত্ব নিয়েছেন।

গর্ভবতী নারীর প্রসব ব্যথা উঠলে গ্রামীণ বাজারে সড়কের পাশে জন্ম নেয় ফুটফুটে ছেলে শিশু। এলাকাবাসী নবজাতক ও তার মাকে নিয়ে আশ্রয় দেয় একটি বাড়িতে। সেখানে তাদের সেবাযত্ন শেষে জানতে চাওয়া হয় পরিচয়। কিন্তু ওই মা নিজের ঠিকানা ও পরিচয় দেননি। পরে নবজাতককে প্রবাসীর স্ত্রীর কাছে দিয়ে চলে গেছেন। 

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ পুরাতন বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। 

শিশুটি বর্তমানে গাড়াগঞ্জের মধুপর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী ফজলুর করিমের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুনের কাছে রয়েছে। এ দিন তারা রাত ৮টার দিকে ওই শিশুটিকে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সুস্থ থাকায় শিশুটিকে পরিবারটির কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।  

মঙ্গলবার দুপুরে ৩০ বছর বয়সী অজ্ঞাত ওই নারীর প্রসব ব্যথা উঠলে সড়কের পাশেই শিশু জন্ম দেয়। খবর পেয়ে এলাকার নারীরা নবজাতক ও তার মাকে বাজারের পাশে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সে বাড়িটির পরিবার স্বচ্ছল না হওয়ায় মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন তাদের নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সন্তান জন্ম দেওয়া মায়ের ঠিকানা ও পরিচয় জানতে চাইলে তিনি সঠিকভাবে তথ্য দেননি। পরে তিন ছেলে সন্তানের জননী ওই প্রবাসীর স্ত্রীর কাছে নবজাতককে রেখে তিনি চলে যান। 

প্রবাসীর স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন বলেন, ‘‘নবজাতকটির মা ডাক্তার দেখাতে এসেছিল। তার প্রসব ব্যথা উঠলে বাজার এলাকার সড়কের পাশে শিশুর জন্ম দেয়। আমি খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে তাদের আমার বাড়িতে নিয়ে এসে সেবাযত্ন করি। খবর পেয়ে এলাকার মানুষ বাড়িতে ভিড় করতে শুরু করে। ওই মায়ের কাছে শিশুটির বাবা ও ঠিকানা জানতে চাইলে বাচ্চার বাবা দেশের বাইরে থাকেন বলে জানান। কিন্তু উনার বাড়ির ঠিকানা ভিন্ন ভিন্ন গ্রামের নাম বলতে থাকে। এমনকি তার পরিবারের মানুষের মোবাইল নম্বর চাইলেও দেননি। ওই মহিলা নিজের ঠিকানা, এমনটি নামও বলেনি।’’

আনোয়ারা খাতুন বলেন, ‘‘একপর্যায়ে আমি বলি, আপনি বাচ্চা নিতে না চাইলে আমাকে দিয়ে যান। তখন সন্তানকে দিয়ে তিনি চলে যাওয়ার সময় বলেন- ‘আপনি আমার বড় বোনের মতো কাজ করলেন। আপনি আমার খুব উপকার করলেন। আমি মাঝেমধ্যে দেখতে আসব’।’’ 

ওই মা যদি পরবর্তীতে নিজের সন্তানকে ফেরত নিতে চান— এমন প্রশ্নে আনোয়ারা খাতুন বলেন, ‘‘আমি নিজের সন্তানের মতো শিশুটিকে রাখব। তিনি তো চলে গেছেন। সন্তানের প্রয়োজন হলে তিনি এভাবে আমাকে দিয়ে যেতেন না।’’ 

ওই মায়ের এমন কাণ্ডে হতবাক স্থানীয়রা। মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ওই নারী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সুরাব হোসেনের দোকানে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। আমরা ধারণা করছি, নবজাতকের মা সুরাব ডাক্তারের পরিচিত কেউ।’’ 

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সুরাব বলেন, ‘‘আমার দোকানের পাশে শিশুটি জন্ম নেয়। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে শিশু জন্ম নেওয়ার বিষয়টি দেখতে পাই। আমি ওই নারীকে চিনি না।’’ 

শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফারিয়া তন্নি বলেন, ‘‘শিশুটিকে রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। শিশুটির ওজন দুই কেজি ৮০০ গ্রাম। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শিশুটি সুস্থ থাকায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়নি।’’ 

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান বলেন, ‘‘আপনার মাধ্যমে খবর প্রথম শুনলাম। আমি খোঁজখবর নিচ্ছি।’’

ঢাকা/সোহাগ/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়