ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

শবনম কি ফিরে এসেছিল?

ইকবাল হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৪, ২৩ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শবনম কি ফিরে এসেছিল?

একজন তুর্কি বংশোদ্ভূত আফগান বড়লোকের একমাত্র মেয়ের সঙ্গে এক বাঙালি যুবকের প্রেমকাহিনি নিয়ে ‘শবনম’ উপন্যাসটি লিখেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী। তার এই উপন্যাসটি সম্পর্কে নানাজন নানা কথা বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, বাঙালি তরুণ-তরুণীদের প্রেমে পড়ার পূর্বে অবশ্যই সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘শবনম’ উপন্যাসটি পড়ে নেওয়া উচিৎ।

‘শবনম’ বইটি প্রকাশের পূর্বে ৩ বৈশাখ ১৩৬৭ থেকে ১১ ভাদ্র ১৩৬৭ পর্যন্ত কলকাতার একটি পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় বইয়ের কাহিনি। শবনম ১৯৬০ সালে প্রথম গ্রন্থ আকারে বের হয় অধুনালুপ্ত ত্রিবেণী প্রকাশন থেকে। প্রথম সংস্করণের পৃষ্ঠাসংখ্যা ২১৯, দাম ছিল পাঁচ টাকা।

‘শবনম’ তিন খণ্ডে লেখা হয়েছে। তবে, এই তিন খণ্ডের বিশেষ কোনো নাম নেই। তাই, আমার মতো কাঁচা পাঠকদের পড়তে গিয়ে বেশ বিপাকে পড়তে হতে পারে। উপন্যাসটির লেখক ব্যক্তি জীবনে বহু ভাষার পণ্ডিত ছিলেন। সেই সূত্রে, তিনি তার লেখায় ফার্সি, ফরাসি অনেক কবিতার ব্যবহার করেছেন। ফলে, প্রথম দিকে পাঠকদের পড়তে গিয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু গল্প যত আগায় ততই হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে।

এই উপন্যাসের গল্পটি লেখক গেঁথেছেন একজন তুর্কি বংশোদ্ভূত আফগান বড়লোকের একমাত্র মেয়ের সঙ্গে এক বাঙালি যুবকের প্রেমকাহিনি নিয়ে। অস্থিতিশীল আফগানের প্রেক্ষাপটে একটা নিখুঁত পবিত্র প্রেমের উপন্যাস। দিনের বেলা সবকিছু স্বাভাবিক চললেও রাতের স্বপ্নময় পরিবেশে অবধারিতভাবেই শবনম তার পবিত্রতা আর হেঁয়ালি নিয়ে উপস্থিত হতো। যাকে নিয়ে উপন্যাসটি লেখা হয়েছে, তার নাম মজনুন।

বাংলাদেশের সিলেট থেকে আফগানিস্তানের কাবুল শহরে তিনি এসেছেন কলেজে পড়ানোর দায়িত্ব নিয়ে। সঙ্গে থাকেন এক ভৃত্য আবদুর রহমান, যাকে আমরা সৈয়দ মুজতবা আলীর অন্য আরও রচনায় পাই। মজনুন সাহেব প্রথম দর্শনেই প্রেমে মজনু হয়ে যান সর্দার আওরঙ্গজেবের কন্যা শবনমের। শবনমের প্রতি মজনুনের ভালোবাসার ব্যাপ্তি দেখা যায় তার বিরহে। শবনমের প্রথম খণ্ডে এমনই এক প্রেম ধীরে ধীরে জন্মলাভ করে থাকে। উপন্যাসের দ্বিতীয় খণ্ডই অনেক বড়, এখানে প্রেমের তীব্রতাও প্রখরতম।

প্রেমের পরিণতিবহ ইঙ্গিত নিয়ে ‘শবনমের দ্বিতীয় খণ্ডের আরম্ভ আর তা ‘শবনমের জবানিতে প্রকাশ পায়, ‘আমার বিরহে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেও না।

এমন অদ্ভুত সুন্দর আলাপে পরিপূর্ণ পুরো উপন্যাস। উপন্যাসের শেষ খণ্ড অর্থাৎ তৃতীয় খণ্ডে লেখক পাঠককে দাঁড় করিয়ে দেন এক ধাঁধার সাথে। শবনমকে যখন ডাকাতরা উঠিয়ে নিয়ে যায়, তখন সে তার মজনুনকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘বাড়িতে থেকো, আমি ফিরব’।

প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডে মজনুন ও শবনমের প্রেম তারপর পরিণতি আসে। কিন্তু এই পরিণতির পরদিন সেই আগের বিচ্ছেদ আবির্ভূত হয়। ডাকাতরা শবনমকে উঠিয়ে নিয়ে যায়, এরপর বহু ঘটনা ঘটে গেলেও শবনম আর বাড়ি ফেরেনি।

শেষ পর্যন্ত শবনম কি মজনুনের জীবনে এসেছিল কি আসেনি তেমন ইঙ্গিত সৈয়দ মুজতবা আলী দেননি। তারপরের ঘটনা তিনি বলে জাননি। কিন্তু পাঠকের কল্পনা থেমে নেই। পাঠক তার কল্পনায় এঁকেছে বহু শবনমকে, আবার নিজেই হয়েছে মজনুন। হন্য হয়ে খুঁজেছে শবনমকে।

শবনম চরিত্রটি শেষের দিকে না থেকেও থেকে গিয়েছে সবটা জুড়ে। শবনম মানে শিশির বিন্দু, হিমকণা। ভোরে জমা শিশির বিন্দু, সকালের সূর্যের স্পর্শ পেতে না পেতেই হাওয়া হয়ে যায়। এ উপন্যাসেও শবনম শিশির বিন্দুর মতো, উপন্যাস শেষ হতেই হাওয়া। তবে শবনম চরিত্রটির রেশ কাটে না যেন। ভোরের শিশির যেমন কিছু চিহ্ন রেখে যায়, তেমনি শবনম রেখে যায় স্মৃতি, কথা, সৌন্দর্য।

বাঙালির হৃদয়ে দেবদাস, চোখের বালির বিনোদিনীর প্রেম কিংবা আরও যেসব উল্লেখযোগ্য চরিত্র গেঁথে রয়েছে, সে সবের সাথে গেঁথে থাকবে শবনম ও মজনুনের প্রেমের কথা। পাঠকরা স্মৃতি হাতড়িয়ে ফিরবে বারবার। প্রতিক্ষণে প্রশ্ন জাগবে শবনম কি এসেছিল ঘরে?

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।



কুবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়