ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

গল্প: দেয়াল

কাজী মিঞা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪১, ১০ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
গল্প: দেয়াল

হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতাল। ছয়টি বেডে আমিই একমাত্র রোগী। আমার হাত ধরে পাশে বসে নীলাদ্রি কাঁদছে। আমার বন্ধু আবির তাকে ফোন করে জানিয়েছে আমি এক্সিডেন্ট করেছি। গুরুতর আহত হইছি। রিক্সা দিয়ে আসছিলাম, বসুনিয়া তোরণের মোড়ে একটি মোটরসাইকেল রিক্সার উপরে তুলে দেয়। মোটরসাইকেলের গতি কম ছিল বলে মাথা আর পায়ে হালকা চোট ছাড়া তেমন কিছু হয়নি। 

এই হালকা চোটেও মেয়েটা কিভাবে কাঁদছে। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখছি। কান্নার সময়ও মেয়েটা কেমন সৌন্দর্যের দ্যুতি ছড়ায়! আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমার ঠোঁটের কোণে সুখ ও প্রাপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে। এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমার দুঃখে কেউ কাঁদছে এর থেকে বড় প্রাপ্তি, বড় সুখ কী হতে পারে?

আমি উঠে বসে ওকে বুকে টেনে নিয়ে বললাম, এত কাঁদছো কেন?
সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো, তুমি আমার স্বাভাবিক ব্যথায় অস্থির হয়ে সারারাত ফোনে কথা বলে সঙ্গ দিতে পারো । আমি তোমার অ্যাক্সিডেন্টে কাঁদবো না?
আমি অভ্যাস মতো খোঁচা দিয়ে বললাম, প্রতিদান দিচ্ছো নাকি?
সে আমার বুক থেকে মাথা তুলে বলল- যদি প্রতিদান মনে করো তবে তা-ই। তবে সেটা ভালোবাসা দিয়েই দিচ্ছি।
আমি ওর চোখ মুছে দিয়ে বললাম, আর কান্না করতে হবে না।
সে বলল, আচ্ছা এখন বল, রিক্সা দিয়ে কোথা হতে আসছিলে?
বললাম- নিউমার্কেট।
সে বলল- কেন?
বললাম- সামনে ইদ। তাই তোমার জন্য একটা গিফট কিনতে গিয়েছিলাম। আমার পাশ থেকে শপিং ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললাম, দেখো।
সে চোখ মুছে ব্যাগ খুলে বলে, শাড়ি! তার  চোখ মুখ খুশির আভায় চকচক করছে। বুঝার উপায় নেই এই মেয়েটাই একটু আগে কাঁদছিলো। পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে মেয়েরা প্রকৃতির যোগ্য অনুচারী।
সে এবার উদাস হয়ে বলল, তোমার পছন্দ খুবই বাজে! কালো শাড়ি!
আমি হেসে বললাম, তুমিও কিন্তু আমার পছন্দ।
বাচ্চাদের মতো অভিমান করে বললো, কিন্তু আমি তো ভালো পছন্দ।

বিকেলে হলে ফিরেছি। রুমে প্রবেশ মাত্রই নীলাদ্রি ফোন করেছে। শোন, ইদের ছুটি তো আর মাত্র তিনদিন পর। তুমি অসুস্থ, তাই এই তিনদিন আমি তোমাকে রান্না করে তোমার হলের গেস্টরুমে নিয়ে আসবো, শুধু সকাল বাদে। সকালে ক্লাস আছে তো তাই। তাছাড়া তুমি তো ঘুম দেবতার একনিষ্ঠ ভক্ত। তিনি অনুমতি না দিলে তো আর সকালে খেতে পারো না।
আমি বললাম, এত কষ্ট করার কী প্রয়োজন? ক্যান্টিনই তো আছে।
সে শাসনের সুরে বলল, যা বলেছি তাই হবে, আর কোনো কথা না। নিঃশব্দে ফোন কেটে দিয়েছে।

নীলাদ্রির ফোন কাটার সাথে সাথেই আব্বা ফোন করেছে,
আব্বা- কেমন আছো, বাবা?
আমি- ভালো। তুমি কেমন আছো?
আব্বা- ভালাই আছি।
আমি- আম্মা কেমন আছে?
আব্বা- তোমার মা ভালাই আছে।
আমি- আব্বা, টাকা লাগবে এক হাজারের মতো।
আব্বা- আইচ্ছা ঠিক আছে।
আমি- তাহলে রাখি, আব্বা
আব্বা- আইচ্ছা।

ফোন কেটে দিলাম। আব্বা, আম্মার সাথে ফোনে কথা বললে ভালো, মন্দ জিজ্ঞাস করা আর টাকা ছাড়া কোনো কথাই হয় না। কথোপকথন দীর্ঘ করার চেষ্টা করলেও তিন মিনিটের বেশি হয় না। তিন মিনিটের মধ্যে টাকার আলাপই থাকে এক মিনিট। আজকেও টাকা চাইলাম। কয়েকদিন আগেই টাকা পাঠিয়েছে কিন্তু নীলাদ্রির জন্য শাড়ি কিনে আর আজকের অ্যাক্সিডেন্টের ওষুধ কিনে আগামী তিন দিন টেনেটুনেও চলা যাবে না, তাছাড়া বাড়ি যাওয়ার ভাড়াও লাগবে। তবে আব্বা নিম্নবিত্ত কৃষক হলেও যখনই টাকা চাই কোনো প্রশ্ন না করেই টাকা পাঠিয়ে দেন। ছেলে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সে বাজে পথে টাকা ব্যয় করবে না এই বিশ্বাস তার আছে।

রাত আট টায় নীলাদ্রি খাবার নিয়ে গেস্টরুমে হাজির। আমি- প্রেমিকার হাতের রান্না খাওয়ার মধ্যে আলাদা আনন্দ ও মজা আছে।
নীলাদ্রি- ও, তখন ফোনে কষ্টের কথা বলছিলে ফর্মালিটির জন্য?
আমি- ঝগড়া করতে এসেছো নাকি খাওয়াতে?
নীলাদ্রি- দু’টো করতেই।
আমি- দুই কাজ একসাথে করা যায় না, মস্তিষ্ক রোবট নয়।
নীলাদ্রি- আমি রোবটই। এখন বল ফর্মালিটি দেখাচ্ছিলে কেন?
আমি- ফর্মালিটি না। প্রেমিকার হাতের রান্না খাওয়া আসলেই আনন্দের ও মজার। কিন্তু তুমি যদি সেটা এক নাগাড়ে তিনদিন করো এটাতো তোমার জন্য কষ্টের হবে তাই না?
নীলাদ্রি- সত্যি?
আমি- হু, সত্যি
নীলাদ্রি- তাহলে আসো, খাইয়ে দেই।

আমি ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম, গেস্টরুমে লোক আছে তো, বিব্রতবোধ হবে।
নীলাদ্রি আমার ফিসফিসানিকে তোয়াক্কা না করে গলার স্বর উঁচু করে বলে, প্রেম করছি, মানুষ দেখুক, জ্বলুক। আমি চাই মানুষ আমাদের প্রেম দেখে জ্বলে পুড়ে ট্রয় নগরী হয়ে যাক।
নীলাদ্রি নিজ হাতে খাওয়াচ্ছে। গেস্টরুমে ফ্যান চললেও তা গরমকে পরাজিত করতে পারছে না। ও সিনেমার নায়িকাদের মতো টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে দিচ্ছে। যার যৌবনে এমন প্রেম আসেনি তার যৌবন ষোলো আনাই বৃথা৷ নীলাদ্রি আমার যৌবনকে পূর্ণতা দান করেছে।

কত বিচিত্রতা, কত রহস্য ওর মধ্যে লুকিয়ে আছে। হঠাৎ মনে হয় শরতের মেঘের মতো শুভ্র, আবার কখনো মনে হয় কালবৈশাখীর সময় ঈশান কোণে জমে থাকা কালো মেঘ। কখনো মনে হয় পাথরের মতোই কঠিন আবার কখনো মনে হয় কাশফুলের চেয়েও কোমল। কখনো মনে হয় ও আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে আবার কখনো মনে হয় ভালোইবাসে না। কখনো মনে হয় লজ্জাবতী ফুলের মতোই লাজুক আবার কখনো মনে হয় দৃঢ় কান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা ডালিয়া ফুল। কখনো মনে হয় ও নলখাগড়ার মতো সহজ সরল, আবার মনে ও এঁকেবেঁকে চলা প্রবাহমান নদী।
নীলাদ্রি বিচিত্রতা দিয়ে আমার জীবনকে ঢেলে সাজিয়েছে, আমি ওর বিচিত্রতা দেখে মুগ্ধ হই।

-এভাবে কী দেখছো? নীলাদ্রির প্রশ্নে মোহ থেকে বেরিয়ে আসি
আমি- তোমাকে।
হঠাৎ মনে হল ও যেন লজ্জাবতী ফুল। যাকে আমি 'তোমাকে' নামক শব্দ দিয়ে স্পর্শ করেছি আর সে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
আমি- আমাকে এত ভালো কেন বাসো ?
নীলাদ্রি চোখের দৃষ্টি খাবারের বাটিতে রেখে বলে, জানিনা।
আমি বললাম, জানিনা! এটা কোনো উত্তর হতে পারে নাকি?

ও তখন আমার চোখে চোখে রেখে বলে, আমার কাছে মনে হয় ভালোবাসায় 'জানি না' সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কারণ। ধরো তোমাকে ভালোবাসার কারণ যদি হয় আমার প্রতি তোমার প্রচন্ড ভালোবাসা তবে  একদিন এর কিছুটা ভিন্ন ঘটলেই আমার ভালোবাসা কমে যাবে। আমাকে  ভালোবাসার কারণ যদি হয় সৌন্দর্য তবে এই যৌবনেই কোনো একদিন কোনো কারণে আমার সৌন্দর্য শেষ হয়ে যেতে পারে তখন সেই কারণটি ক্ষয় হয়ে যাবে।তখন তুমি আমাকে এখনকার মতো ভালোবাসবে না। কিন্তু 'জানি না' কখনো ক্ষয় হবে না। এটি আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বেঁচে থাকবে আর সবসময় আমার মধ্যে তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে, আমাকে প্রতি মূহুর্তে তাগিদ দেবে তোমাকে ভালোবাসতে, খুব ভালোবাসতে।

আমি মুগ্ধ শ্রোতা হয়ে ওর কথা শুনছি। ইচ্ছে হচ্ছিলো ওকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালের কালো টিপে কিছুটা ভালোবাসা চাষ করি। প্রেমিকার প্রেমময় বাক্যে বাক্যহারা হয়ে গেলে কপালের কালো টিপে একটি চুম্বনই আমার সব অনুভূতি বলে দিতে পারে। কিন্তু গেস্টরুমে ছিলাম বলে আমার অনুভূতি প্রকাশ সম্ভব হয়নি। কী এক নিষ্ঠুর সামাজিকতা আমাদের দেশে বিদ্যমান!

তিনদিন পর বাড়ি আসলাম। হল থেকে বাড়ি ফেরা মানে মায়ের হাতে রান্না করা খাবারের সাম্রাজ্যে ডুবে থাকা। তাই হল থেকে কঞ্চির মতো হয়ে বাড়ি ফিরলেও বাড়ি থেকে যখন হলে ফিরি তখন একটি পুষ্ট সজীব বাঁশ হয়েই ফিরি। কঞ্চি থেকে বাঁশ হওয়ার পিছনে খাবারের সাথে সাথে স্বাস্থ্য নিয়ে মা-বাবার, গ্রামের স্বজনদের নাগা মরিচের মতো ঝাল ঝাল কথাও বিশেষ ভূমিকা রাখে। হল জীবন আর বাড়ির জীবনে প্রধান পার্থক্যটি গড়ে দেয় সম্ভবত খাবারই। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে আসতে না আসতেই দেখি মা খাবার নিয়ে টেবিলে বসে আছে। মা জাতি শিশুকালে দৌড়ে দৌড়ে তার সন্তানদের খাবার খাওয়ায়, সন্তান বেশি করে খেতে পারলেই তাদের সুখ। বড় হয়ে দৌড়ে দৌড়ে খাবার না খাওয়ালেও সন্তানকে খাওয়াবে আর ঠিক শিশুকালে যে সুখটা উপভোগ করতে চাইতেন এখনো তাই চান। এ যেন এক অদ্ভুত স্বার্থপর মমতা! খেতে বসেছি এমন সময়, আমার পৃথিবীর সমস্তজুড়ে জড়িয়ে থাকা প্রিয় মানুষটি ফোন করেছে।

মায়ার বর্ষা ঢেলে জিজ্ঞাস করে, পৌঁছেছো?
-হ্যা, কিছুক্ষণ হল, খেতে বসছি।
হঠাৎ দাবানলের মতো জ্বলে উঠে চিৎকার দিয়ে বলে,
-তাহলে জানাওনি কেন? বাড়িতে গিয়ে পাখা গজিয়ে গেছে? জানানো লাগে না? আমিও তো বাড়ি আসছি, কই আমার খবরও তো নাও নি, রাস্তায় কতবার খোঁজ নিয়েছি আমি, আমার খোঁজ নিয়েছো একবার?
আমি বললাম, হ্যা একবার নিয়েছি।
ও বলে, আবার তর্ক করছো।

আমি ওর কথা শুনে বুঝতেছিনা ও হঠাৎ কিভাবে বদলে গেলো। ফোন দিয়েছে বরফ হয়ে আর এখন আগ্নেয়গিরির লাভার মতো জ্বলছে। এমন বিচিত্রতা শুধু মেয়েরাই প্রদর্শন করতে পারে। অবশ্য এমন লাভা হয়ে যাওয়ার পিছনে আমিই দায়ী। বাড়িতে এসেই জানানো আমার কর্তব্য ছিলো। রাস্তায় সে বহুবার খোঁজ নিয়েছে, কোথায় আছি,  ক্ষুধা লেগেছে কিনা, কিছু খেয়েছি কিনা, সিগারেট কয়টা খেয়েছি। আর আমি মাত্র একবার ফোন দিয়েছি। ও এখানে সাম্য খুঁজছে। খোঁজাটাই স্বাভাবিক। তবে এই সাম্য খোঁজার অধিকার শুধু মেয়েদেরই আছে, ছেলেদের একদমই নাই।

আমি উত্তর দিলাম, তর্ক করছিনা তো, আমি বাড়িতে এসেই ফ্রেশ হতে গেছি, ফ্রেশ হয়ে ফিরতেই দেখি আম্মা খাবার নিয়ে বসে আছে তাই আর ফোন দিতে পারিনি। কিন্তু খেয়ে ফোন দিতাম।
-থাক, এখন আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবেনা। আন্টি হয়ত সামনে বসে আছে, ঠিকমতো খাও, আর এই যে, সময়মত ওষুধ খাবেন। এটা বলেই রাগে ফোন কেটে দিলো। কিন্তু তার যে কর্তব্য তা ঠিকই পালন করে গেছে। ঠিক যেন মায়ের মতো। ভালোবাসাটা ঠিকই দিবে কিন্তু সেখানে মাঝেমাঝে একটা চাদর লাগিয়ে দিবে। এখানে আমি সময়মতোই ওষুধ খাবো কারণ মা আছেন, আর ক্যাম্পাসেও সময়মতো খেতাম কারণ আমার নীলাদ্রি আছে।
মা বললো, কেডা ফোন করসে?
উনার প্রশ্নে একটু লজ্জা পেলাম। লাজুকভাবেই উত্তর দিলাম, বন্ধু।
আম্মা রহস্যময় একটা হাসি দিলো। এই হাসির রহস্য নিয়ে গবেষণা করলে ফলাফল আসবে, আমি তোর মা। আর এই ফলাফল বিশ্লেষণ করতে চাইলে শুধু দিস্তা দিস্তা কাগজ আর অগণিত কলমের কালিই অপচয় হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আমার কাছে এখন পুরো গ্রাম ভালো কিছু প্রত্যাশা করে। গ্রামে সর্বত্র এখন বিসিএসের হাওয়া লেগেছে। আমাদের গ্রামে যারা বিসিএস কি বুঝে তারা দেখা হলেই বলবে, ক্যাডার হওয়া চাই, আর যারা বুঝে না তারা বলবে, বড় অফিসার হওয়া চাই। বিসিএস আমার কাছে দিল্লির মতোই দূরে। মাত্র দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। যখন সময় হবে তখন শুরু করা যাবে, এখন গ্রামের জন্য কিছু একটা করতে চাই। কী করা যায় ভেবে পাচ্ছি না। তাই সে রাতেই গ্রামের বন্ধুদের কাছে পরামর্শ চাইলাম। নানা মুনির নানা মতের মতো বন্ধুরা আমাকে পরামর্শ দিলো কিন্তু কোনটাই মনের মতো হচ্ছে না। অবচেতন মনে বন্ধুদের থেকে খানিকটা দূরে গিয়ে নীলাদ্রিকে ফোন  দিলাম। বুঝতে বাকি রইলো না আমি ওর প্রতি কত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি।
-কী ব্যাপার ফোন দিলে কেন?
-প্রয়োজনে।
-হ্যা, ঠিকই তো। আমি শুধু শুধু প্রশ্নটি করলাম। তুমি তো আর প্রয়োজন ছাড়া ফোন  দাও না।
-রাগ করছো কেন? আমি প্রয়োজন ছাড়াও ফোন দেই।
-তবে ফোন কেটে দেওয়ার পর রাগ ভাঙ্গাতে ফোন দাওনি কেন?
-তুমিই না আম্মার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে!
-ও হ্যা, তবে খাওয়ার পর ফোন দিতে পারতে।
-তখন দেইনি কারণ রাগ করেছিলে। রাগের সময় তোমাকে ফোন দিলে হয়ত রাগটা আরো বেড়ে যেতো এমনকি আমিও রাগ করে ফেলতে পারতাম। সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ রাগ, তাই রাগের সময় ঝগড়া না মেটানোই ভালো। সময় নেওয়া উচিত।
-হইছে, হইছে। আর জ্ঞান দিতে হবে না। এখনো রেগে আছি, রাগ ভাঙ্গাও, নইলে নিষ্ঠুর শাস্তি দিবো।
-কী শাস্তি?
-আমি তোমার হাতের যে লোমগুলোতে আদর করি, চুমো দেই, সেগুলো একটা একটা করে ছিঁড়বো।
-তুমি কষ্ট পাবের না তো?
-দিলে তো রাগ কমিয়ে! আচ্ছা ঠিকা আছে, যাও শাস্তি মাফ করে দিলাম। এখন বলো কী প্রয়োজন? না, তার আগে বলো শরীর কেমন?
আমি বললাম, শরীর ভালো। আর প্রয়োজনটা কি সেটা বিস্তারিতভাবে বললাম। সে কিছুক্ষণ ভেবে জবাব দিলো,
আমার কাছে দুর্দান্ত একটা আইডিয়া আছে। সেটা বলবো এক শর্তে।
আমি আনন্দে উল্লসিত হয়ে বললাম, যেই শর্তই বল আমি রাজি। প্রিয়জনের শর্তের মজাই আলাদা। না জেনেই মঞ্জুর করা যায় কারণ সেখানে এই ভরসাটা থাকে যে সে ক্ষতিকর কোনো শর্ত দেবে না।
সে বলল, আমাকে পুরস্কার দিতে হবে।

আমার বুঝতে বাকি রইলো না, সে আসলে কেমন পুরস্কার চাচ্ছে। আমি বললাম, রাজি, তুমি বল। সে বললো, তুমি স্কুল, মসজিদ বা বাজারের কোনো একটি দেয়ালে কয়েকটি হ্যাঙ্গার লাগিয়ে দিবে। সেগুলোর উপরে বড় করে লেখা থাকবে, মানবতার দেয়াল, এই লেখার নিচে কিছুটা ছোট করে লেখা থাকবে, আপনার অপ্রয়োজনীয় কাপড় রেখে যান, প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে যান। দাও এখন পুরস্কার দাও।

ওর আইডিয়াটা শুনে মনে হল আমি যেন এমন কিছুই প্রত্যাশা করছিলাম। কাপড় দিয়ে গরীব মানুষের উপকারও হবে আবার গরীবের আত্মসম্মানও থাকবে কেননা গরীব লোকটি জানবেই না সে কার কাপড় পরিধান করছে। এই আইডিয়াটার জন্য ওকে পাঁচ ডাবল পুরস্কার দেওয়া আবশ্যক। কিন্তু বন্ধুরা একটু দূরেই বসে আছে, কিভাবে দেই পুরস্কার? ওরা দেখে ফেললে মজার কড়াইতে আমাকে বারবার ভেজে খাবে। তাই বললাম, কিন্তু বন্ধুরা যে বসে আছে কাছেই! ক্যাম্পাসে এসে সুদসহ দেবো।
-বেঈমান ছেলে। আর কথা বলবো না তোমার সাথে।
ফোন কেটে দিলো। সে বুঝিয়েছে রাগ করেছে কিন্তু আমি জানি সে আমাকে বুঝেছে। কিন্তু এমন রাগ না দেখালে যে মেয়ে জাতির সম্মান থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে দেখাতেই হয়, কী চমৎকার মানসিকতা দিয়ে প্রকৃতি তাদের সৃষ্টি করেছে।
নীলাদ্রির আইডিয়াটা বন্ধুদের কাছে বললাম। তারাও এই ধারণার তুমুল প্রশংসা করলো। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম আগামীকাল বিকালে গ্রামের মাতবর, মুরুব্বিদের নিয়ে এই ব্যাপারে অনুমতি ও সহযোগিতা চাইবো।
পরেরদিন বিকালে গ্রামের মাতবর, মুরুব্বিদের থেকে অনুমতি ও কিছু আর্থিক সহযোগিতা পেলাম। সবাই যে একমত ছিলো তা না। প্রতিটা ভালো কাজই সবচেয়ে বেশি বাঁধার সম্মুখীন হয় কিন্ত বড় বড় মন্দকাজগুলো প্রায় কোন রকম বাঁধা ছাড়াই মানুষ করতে পারে কারণ মন্দকাজগুলো ক্ষমতাধর ব্যক্তি দ্বারা সংঘটিত হয়। মানুষ ঈশ্বরের থেকেও ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের বেশি ভয় পায়। আমার কাজটি ভালো, ভালোর তুলনায় তেমন বাঁধা পাইনি, কয়েকজন উপহাস করেছে মাত্র। তবে কাজটি করতে পারছি এতেই আমি খুশি। নীলাদ্রি দূরে থেকেও এ কাজের জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কিভাবে কী করতে হবে এমনকি হ্যাঙ্গারের রং কেমন হবে সেটাও সে বলে দিয়েছে।

আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম চারগ্রামের মাঝখানে অবস্থিত প্রাইমারি স্কুলের একটি দেয়ালকেই আমরা মানবতার দেয়াল হিসেবে নির্বাচন করবো। এতে চারগ্রামের গরীব বস্ত্রহীন মানুষ উপকৃত হবে। তাছাড়া নিজ গ্রামের মানুষের কাপড় হয়তো চেনা যেতে পারে তাই নিজ গ্রামের মানুষের কাপড় না নিয়ে অন্যগ্রামের মানুষের কাপড় নিয়ে যেতে পারবে। এতে কোনো বস্ত্রহীন গরীব ব্যক্তি কাপড়ের জন্য কারো কাছে মাথা নীচু করতে হবে না।

পরেরদিন সকালে চারগ্রামের সবাইকে এই ব্যাপারে অবগত করতে মাইকিং এর ব্যবস্থা করা হলো। প্রতি গ্রামে প্রচার করা হল সেদিন বিকেলে এমন একটি মহান উদ্যোগের উদ্ভোদন করা হবে তাই সবাইকে আমন্ত্রণ এবং অপ্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে আসার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করা হয়। সেদিন বিকেলে স্কুল প্রাঙ্গণে ছোটখাটো একটি মেলা হয়ে গেলো।  স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে মানবতার দেয়ালের শুভ সূচনা হয়। দেখা গেলো চারগ্রামের অনেক মানুষই আমাদের এই মানবতার দেয়াল দেখতে এসেছেন, অনেক মানুষ কাপড় নিয়ে এসেছে। মানুষের এমন সহযোগিতা দেখে খুব আনন্দিত ও গর্বিত অনুভব করি। প্রধান শিক্ষকসহ অনেকেই আমাদের এই উদ্যোগের উচ্চপ্রশংসা করে। সেখানে আমার বাবাও এসেছিলেন। হঠাৎ বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছেন। আমি তাকিয়েছি দেখে স্বার্থপর হাসি দিলেন। আমি বুঝতে পারলাম কেউ হয়তো আমার নামে প্রশংসা করেছে কিংবা আমার নিরক্ষর বাবাই নিজে নিজে বুঝেছেন তার ছেলে একটি উত্তম কাজ করেছে৷ নিরক্ষর ব্যক্তিদের ভালো-মন্দ নির্ণয়ের শক্তি প্রবল থাকে। আমার বাবারও আছে।

উদ্ভোদনের কাজ যখন শেষ হয়েছে তখন গোধূলি। যাদুকরী মুহূর্ত। এমন মুহূর্তে  আমার যাদুকরকে ফোন দিলাম। এমন একটি মহৎ কাজের জন্য আমি যে পুরস্কারটি সেদিন রাতে দিতে পারিনি সে সেটি দিলো। এমন পুরস্কার দেওয়ার মতো কেউ যদি প্রতিটি বাঙালি যুবকের থাকে তবে সে কখনো বিপথে যাবে না, প্রতিটি যুবকই অগণিত ভালো কাজ চরম উৎসাহে করবে। ও বললো, তুমি কি কোনো কাপড় দিয়েছো?
আমি বললাম, আমি এখনো কিছু দেইনি, তবে সন্ধ্যার পর একা একা দিয়ে আসবো।
নীলাদ্রি বললো, ঠিক আছে তাহলে। পরে কথা বলি।
আমি বললাম, আচ্ছা।
ও বললো, তাহলে রাখো।
আমি বললাম, তুমি রাখতে পারো না?
সে আবার বললো, না পারিনা, তুমি রাখো।
আমরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, আমরা যে ম্যাচিউর তা ভুলেই গেছি কারণ আমরা প্রেম করছি। যদি কোন প্রেমে এমন পাগলামি, এমন বাচ্চামি না থাকে তবে সেই প্রেম রসহীন৷ রসহীন প্রেম রসহীন আখের মতোই। সেই আখ জ্বালানি ছাড়া কোন কাজে আসেনা।
ওর পাগলামির কাছে হার মেনে আমাকেই ফোন রাখতে হল।
সন্ধ্যা নামার পরপরই আমার একটা শার্ট ও একটা প্যান্ট শপিং ব্যাগে নিয়ে বের হয়ে গেলাম। প্যান্টটা মোটামুটি পুরাতন আর শার্টটা প্রায় নতুন। সম্ভবত দেড়মাস আগে নিউমার্কেট থেকে কিনেছিলাম। ক্যাম্পাসেই কয়েকদিন পরেছি। যেহেতু এই কাজটি আমার উদ্যোগে হয়েছে তাই ভাবলাম আমার উচিত একটি ভালো শার্ট দেওয়া। রাতের অন্ধকারে কাপড় দু’টি হ্যাঙ্গারে টাঙ্গিয়ে ঘরে ফিরি।
পরেরদিন সকালে খেতে বসেছি, মা'কে জিজ্ঞাস করলাম, আম্মা, আব্বা কোথায়?
মা বললো, তোর বাপ তো শহরে গেসে।
-শহরে কেন গেছে?
-ঘরের দুইডা টিন নষ্ট হইয়া গেসে, বৃষ্টি হইলেই ঘর ভিজ্জা সাগর হইয়া যায়। ঈদের আগে ঠিক করা দরকার তাই গেসে।
-কখন ফিরবে?
-কোন সময় আবার, সইন্ধ্যার আগেই ফিইরা আইবো।

সারাটা দিন গেলো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে, নীলাদ্রির সাথে ফোনে কথা বলে। তবে আমার সবচেয়ে বেশি সময় কাটে ওকে ভেবে। প্রতিটা দিন, প্রতিটা  মুহূর্তে ও জড়িয়ে থাকে। একটা প্রজাপতি দেখলাম। তখন মনে হল এই প্রজাপতিটা যদি ওর পাশে বসে দেখতে পারতাম। আমি ওকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করি জ্যোৎস্না রাতে, মনে হয় একটি সুন্দর রাত আমার বৃথা গেলো, কারণ ও পাশে নেই। আমি ঘুমোতে যাবো তার আগে যাকে ভাববো সে নীলাদ্রি, ঘুমে স্বপ্ন দেখলে সেখানেও নীলাদ্রি, ঘুম থেকে উঠে যাকে আমি প্রথম স্মরণ করি সে নীলাদ্রি। আমি ওকে এতটাই ভালোবাসি যে ওর দেওয়া দুঃখগুলোও আমার কাছে মনে হয় সুখের। ওর কথা যখন সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে তখন ইচ্ছে হয় কোনো খোলা প্রান্তরে গিয়ে চিৎকার করে পুরো পৃথিবীটাকে বলি, নীলাদ্রি, আমি তোমাকে ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি। ও আমার জীবনে এসেছে রংধনুর হয়ে। ও আমার জীবনকে রংধনুর বৃত্তে আবদ্ধ করে রেখেছে। পার্থক্য শুধু রংধনু কিছুক্ষণের মধ্যেই অদৃশ্য যায় কিন্তু আমার নীলাদ্রি অদৃশ্য হয়ে যায় না, আমাকে ছেড়ে যায় না। ও আমার কাছে দেবীর মতোই। আমি সেই দেবীকে আমৃত্যু পূজা করে যাবো।

সন্ধ্যায় বাবা ঘরে ফেরেন। আমার ঘর থেকে বাবার কথা শুনছি। বাবা বলছেন, পোলাডা রসমালাই পছন্দ করে তাই নিয়া আইলাম।

মা বলল, তাইলে আমি প্লেটে দিতাছি তুমি দিয়া আসো।
বাবা রসমালাইয়ের প্লেট নিয়ে আমার ঘরে ঢুকলেন, তার চোখে মুখে প্রশান্তি চকচক করছে। মনে হচ্ছে তিনি কোনো স্বর্গীয় সুখে মত্ত। কিন্তু আমার পৃথিবীতে তখন মহাপ্রলয় হচ্ছে, মহাজগতের মহাবিস্ফোরণের মতো মস্তিষ্কে বিস্ফোরণ হচ্ছে। পুরো পৃথিবী কেমন অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। সেই অন্ধকারে নীলাদ্রীও হারিয়ে যায়। সেই প্রথম যখন  নীলাদ্রি আমার স্মরণে ছিলো। আমি বস্ত্রহীন মানুষের সাহায্যের জন্য যে মানবতার দেয়াল তৈরি করেছি তা আমার আর বাবার মধ্যে থাকা দেয়ালকে ভেঙ্গে ধূলোর মতো উড়িয়ে দিয়েছে। সেই দেয়াল এমনই শক্তিশালী যার একপাশে ছেলে রাজপুত্রের মতো জীবনযাপন করে আর অন্যপাশে বস্ত্রহীন প্রজার মতো বসবাস করে স্বপ্নবিলাসী এক বাবা। আমি যখন যত টাকা চাচ্ছি বাবা দিচ্ছে কিন্তু আমার বাবা কি খাচ্ছে, কী পরছে এমন প্রশ্ন সেই দেয়ালের কারণে আমার মনে কখনো উদয় হয়নি। আমি কেঁদে কেঁদে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। বাবা রসমালাইয়ের প্লেট নিয়ে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

ব্যথাই নদীর পাড়ে হিজল গাছের নিচে বসে কাঁদছি। পৃথিবীটাকে তখন বিশাল মনে হচ্ছে আর সেই বিশাল পৃথিবীতে আমিই একা জীবিত আছি। আর পুরো পৃথিবীর দুঃখ ও বেদনা আমি একা বহন করছি। যখন খুব নিঃসঙ্গতা অনুভব করছি তখনই নীলাদ্রি ফোন করেছে। আমি দেখেছি যখনই নিজেকে খুব অসহায় লাগে, যখন আমার অসময় ঠিক তখনই ও আমাকে ফোন করে। যদি খুব ঝগড়া থাকে তখনও ও নিজ থেকে ফোন দিয়ে জানতে চায়, সব ঠিক আছে কিনা। এই কারণে আমার টেলিপ্যাথির উপর বিশ্বাস জন্মে। সবসময় যে কাজ করে তা না তবে যতটুক করে তার পেছনে যতটুক ভালোবাসা কাজ করে সেটুকুই আমাদের সুখে থাকার জন্য যথেষ্ট।

-কী করছো? সব কিছু ঠিক আছে তো?
আমি কোনো জবাব দিতে পারলাম না। আমি যে কাঁদছি সেটা ও বুঝে আবার প্রশ্ন করলো?
-কী ব্যাপার কাঁদছো কেন? বাচ্চাদের মতো এমন করছো কেন? আমাকে বল প্লিজ...
আমি ফোনটা কেটে দিলাম। চিৎকার করে কান্না করছি। কান্না করার সময় কেউ সহমর্মিতা বা ভালোবাসা দেখালে কান্না আরো বৃদ্ধি পায়। এর কারণ আমি জানি না। নীলাদ্রি আবার ফোন করেছে, আমি কেটে দিয়েছি। কেটে দেওয়ার পর আবার ফোন করেছে, আমি আবার কেটে দিয়েছি। ও ফোন দিয়েই যাচ্ছে আর আমি কেটেই যাচ্ছি...।

ফোন ধরলেই জানতে চাইবে, কেন কাঁদছি, কী হয়েছে? এর উত্তর আমি তাকে কীভাবে দেবো? আমি তাকে কিভাবে বলব বস্ত্রহীন মানুষের জন্য আমি যে মানবতার দেয়াল তৈরি করেছি তা আমার বাবার উপকারেও আসছে। তাকে কিভাবে বোঝাবো যে শার্টটি আমি বস্ত্রহীনদের জন্য সেই দেয়ালের হ্যাঙ্গারে টাঙ্গিয়ে এসেছিলাম তা আবার আমার ঘরে ফিরে এসেছে। আমি তাকে এসব কিভাবে বোঝাবো? ও আমার পৃথিবীর পুরোটা জুড়ে থাকলেও সেদিন আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমার আরো একটা পৃথিবী আছে যার সুখগুলো নীলাদ্রির সাথে ভাগাভাগি করতে পারলেও, সেই পৃথিবীর দুঃখ, লজ্জাগুলো ভাগাভাগি করা সম্ভব নয়।

আকাশে চাঁদ নেই, তারা নেই। মনে হচ্ছে অমাবস্যার অন্ধকার। আমি হিজল গাছের গুঁড়িতে বসে আছি। কাঁদার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছি। আর কান্না আসছে না। গালে চোখের পানি শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেছে। দূরে কে যেন টর্চ হাতে এগিয়ে আসছেন। আমি নিশ্চিত বাবা আসছেন। এই অন্ধকারে বাবা ছাড়া আর কে আসবে!

 

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাবি/মাহফুজ/মাহি 

রাইজিংবিডি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়