ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

খুঁজি তোমায় শরতের নীলিমায়

ধীরা ঢালী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫১, ২৭ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ০৯:৪৩, ৩০ আগস্ট ২০২০
খুঁজি তোমায় শরতের নীলিমায়

আজি এ শরতের সকালে 
নয়ন শোভিত দৃশ্যের উল্লাসে 
হৃদয়ের শাণিত বল,
শিঞ্জিত হবে হরষে বরষে।

স্নিগ্ধ শান্ত সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সুফিয়া কামাল যেমন ঋতুর রঙ্গমঞ্চে শরতকে দাঁড় করিয়েছেন, তেমনি শরৎও গ্রীষ্মের অগ্নিখরা আতঙ্ক, বর্ষার বিষণ্ন বিধুর নিঃসঙ্গতাকে দূরে ফেলে হাজারো শুভ্রতা দিয়ে প্রকৃতিকে করেছে ফুরফুরে। আর প্রকৃতি তার কোমলতা দিয়ে আমাদের বিষণ্ন মনকে করেছে টইটম্বুর।  

শরতের প্রকৃতি এক মৌন-বিমূর্ত রহস্যময়তায় ঢেকে রাখে নিজেকে। ঘাসের বুকে জমা অজস্র শিশির বিন্দু আর কুয়াশার বুক ভেদ করে ফুটে ওঠা আলোর ঝলকানি এ যেন সকালের সোনা রোদ আর হীরক জ্যোতির কানামাছি খেলা।

একটু মেঘ, এক পশলা বৃষ্টি, আর এক ঝলক সোনালী রৌদ্দুরই যেন শরতের নীল আকাশের চিরন্তন রূপ। নীল আকাশে সাদা মেঘের লুকোচুরি খেলার নজরকাড়া সৌন্দর্যে সত্যিই মনকে আপ্লুত করে তোলে। সেই সাথে বিক্ষিপ্ত মেঘের রাশি আকাশের ঐ নীলিমাকে আরও স্পষ্টতর করে তোলে। আর কবিকণ্ঠে আমিও বলে উঠি—

নীল আকাশে কে ভাসালো 
সাদা মেঘের ভেলা;
ও ভাই লুকোচুরি খেলা। 

ফুলকুড়োনী মেয়ে আর রঙিন প্রজাপতির আগমনী বার্তা নিয়ে আসে শরৎ। সেইসঙ্গে কাশফুলও যেন শরৎ প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। হিমেল হাওয়ায় মৃদু হেসে কাশবনের সাথে যেমন দুলে ওঠে প্রকৃতি, তেমনি আমার মনেও দোলা দেয় শ্রাবণের সেই অপরিচিতার হৃদয়ঘনিষ্ঠ প্রেম।

যা আজ শুধুই সাদা কাশের মতোই লেপটে নিশ্চুপ হয়ে পড়ে আছে আমার ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ের মাঝে। হাওয়ায় দোলানো সাদা কাশ শরতের প্রকৃতিতে যেমন শুভ্র-সুষমা এঁকে দিয়েছে, তেমনি তুমিও কী পারো না তোমার হৃদয়ের ঐ সমস্ত শুভ্রতা দিয়ে আমাকে আঁকতে! 

আষাঢ়ের সবিরল বৃষ্টিধারায় মন খারাপের রাজ্যকে পাড়ি দিয়ে হঠাৎ এক ঝলক আলোর ঝলকানি উঁকি দিয়ে যেমন আসে শরৎ। তুমিও তেমনি আমার হৃদয়ের সব বন্ধ দুয়ার ছিন্ন করে শ্রাবণের মহিমায় মহিমান্বিত করেছিলে আমাকে।

শরৎ সকালে সুনীল আকাশের ছায়া পড়ে যেমন নদীর বুক শান্ত হয়, তেমনি আমার আষাঢ়ে মোড়ানো ব্যাকুল মনকে সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় স্বপ্নবিভোর করে শান্ত করেছিলে তুমি। তুমি কি জানো! তুমিই আমার ঐ মানুষটি, যার আগমনীতে হাজারো কদমফুল ডালা সেজে আমাকে শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেয়!

শরৎ সকালের কোমল বাতাস যেমন ঢেউ তোলে ফসলের মাঠে, তেমনি তোমার অল্প সময়ের সীমাহীন নিবেদনে আন্দোলিত হয়েছিল আমার আকুল হৃদয়। 

তোমার কি সত্যিই মনে পড়ে না! সাদা কাশকে সঙ্গী করে তোমার স্পর্শে নিবিষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল আমার শরীরের প্রতিটি লোমকূপ। আর আজ সেই তুমিই আমার শরতের কাশফুলজুড়ে নেই। 

মেঘ আর মিষ্টি রোদের লুকোচুরির এক অনবদ্য সম্পর্ক যেমন শরতের আকাশজুড়ে, আমিও তেমনি স্বপ্ন বুনেছি তোমার হাতটি ধরে শরতের মুগ্ধতা ছিটানো নদীর তীরে পাখিদের উড়াউড়ির শামিল হবো। ঘাসফড়িং আর প্রজাপতির মতো অনাড়ম্বর দুষ্টুমিতে মেতে উঠবো।

আমার বিরহে তুমি কি পারো না কাশফুলে আবৃত শরতের আগমনী বার্তা নিয়ে হাজির হতে! তোমার কী আজও মনে পড়ে! আমি বলতাম, শরতে খোঁপায় কাশফুল গুজে চপলা কিশোরীর মতো তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো আর তুমি আমার উপচে পড়া রূপের মোহনীয়তায় মুগ্ধ হয়ে তোমার শরীরের সমস্ত যৌবনমিশ্রিত স্পর্শে আমাকে আঁকড়ে ধরবে।  

অথচ আজ দেখ পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের মতোই আমার শরৎও বিরহের সুতোয় বাঁধা পড়ে আছে। আমরা দুজনেই যেন বিরহে ব্যাকুল। তাই বিরহরূপ অবলোকন করে বারবার বলে উঠি—

গণিতে গণিতে শ্রাবণ কাটিল
আসিল ভাদ্রমাস
বিরহী নারীর নয়নের জল 
ভিজিল বুকের বাস। 

শরতে শিউলি ফুলের সৌরভ যেমন আমার প্রাণে স্নিগ্ধ পরশ বুলিয়ে দেয়, তুমিও কি পারো না তোমার স্পর্শের পরিপূর্ণতা দিয়ে আমাকে পূর্ণ করতে! তুমি কি সত্যিই পারো না তোমার সব অভিমান, অভিযোগ বিসর্জন দিয়ে  তোমার ভালোবাসার আবহে আমাকে ভরিয়ে তুলতে! 

কাজী নজরুল ইসলাম যেমন পথিককে শরতের শিউলি বিছানো পথে হাঁটতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, আমিও চাই তুমিও তেমনি এই শরতে আমার শিউলি বিছানো হৃদয়ের পথ ধরে চলে এসো। তুমি কি জানো!  আজও আমার ব্যাকুল মন তোমায় খুঁজে চলেছে শরতের ঐ নীলিমায়। তাইতো নজরুলকে সঙ্গী করে বলতে চাই— 

এসো শরত প্রাতের পথিক 
এসো শিউলি বিছানো পথে 
এসো বুইয়া চরণ শিশিরে 
এসো অরুণ কিরণ রথে 
দলি শাপলা শালুক শতদলে 
এসো রাঙায়ে তোমার পদতলে।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়। 

গবি/মাহি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়