ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ওয়ার্ল্ড ফার্মাসিস্ট ডে: ওষুধে জীবন দেওয়া মানুষের গল্প

কাব্য সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৩, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০  
ওয়ার্ল্ড ফার্মাসিস্ট ডে: ওষুধে জীবন দেওয়া মানুষের গল্প

ফার্মাসিস্ট নিয়ে বলতে গিয়ে প্রথমেই বলতে হয় ফার্মাসিস্ট কী? আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের ধারণা ফার্মাসিস্ট মানেই একজন ওষুধ দোকানদার বা বিক্রেতা। ওষুধ বিক্রেতাও এক প্রকার ফার্মাসিস্ট, তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বলতে গেলে সেই চিত্রটা ভিন্ন।

একজন সাধারণ ছাত্র বা অন্য পেশায় কাজ করা মানুষ ৩-৪ মাসের ওষুধের দোকানে কাজ শিখে অর্থাৎ ওষুধ বিক্রির কাজ শিখে হয়ে যাচ্ছে ফার্মাসিস্ট। আবার কোনো কোনো ওষুধের দোকানে ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি চলে নানাবিধ চিকিৎসার কাজ। আবার কেউ কেউ নিজেই রোগের কথা শুনে ভালো/মন্দ বা স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় না রেখে দিচ্ছেন নানা রোগের ওষুধ, রোগীরাও সাদরে সেই সেবা গ্রহণ করে চলেছেন। তাহলে এর নামই কী ফার্মাসিস্ট? ফার্মাসিস্ট এতো সহজ সাবলীল পেশা? যার ৩-৪ মাসের ঔষধ বিক্রির প্রাকটিক্যাল ধারণা থেকে তার পরিচয়ে যুক্ত হয় ফার্মাসিস্ট তকমা!

আচ্ছা এইবার না হয় এক অন্যরকম ফার্মাসিস্টদের গল্প শোনা যাক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির সাবজেক্ট তথা ফার্মেসি বিভাগের অবস্থান বরাবরই অনন্য। যেখানে ভর্তি হয়ে একজন শিক্ষার্থী প্রথমেই শপথ করেন সৎ এবং আদর্শ মনন নিয়ে দেশ ও জাতির সেবা করার। কারণ, একজন ফার্মাসিস্টের পরিপূর্ণতার পর তার হাতেই গোটা জাতির জীবন-মরণ নির্ভর করে। এর ব্যাখ্যায় না গিয়ে একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, কথায় আছে 'একজন ডাক্তার ভুল করলে একজন রোগী মারা যাবে, কিন্তু একজন ফার্মাসিস্ট ভুল করলে জাতি বড় একটি সংখ্যা হারাবে।' একজন ফার্মাসিস্টের হাতেই পরোক্ষভাবে তৈরি হয় হাজারো মানুষের সুস্থতা এবং সুন্দর জীবনের গল্প।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একজন শিক্ষার্থীর অধিকাংশ সময় কেটে যায় তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের সীমাবদ্ধ কিছু কক্ষে। এর পরে শুরু হয় তার বাস্তবিক জীবনের প্রয়োগ। নিজেকে নিবেদিত করে তৈরি করতে হয় দেশের মানুষের মুক্ত হাসি। একজন ফার্মাসিস্টের গল্প আমরা ক'জন জানি? জানলেই বা সেইটা কতটুকু জানি?

একজন রেজিস্ট্রার ফার্মাসিস্ট সে দেশের জন্য কাজ করতে বদ্ধ পরিকর। সূর্য আকাশে ওঠার আগেই যেই মানুষটি নিজেকে অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করেন, তিনিই একজন ফার্মাসিস্ট। শীতের ভোর ৫/৬টায় অফিসের গাড়িতে করে অফিসে ঠিক সময়ে পৌঁছে যাওয়া, নিজেকে প্রটেক্ট করা থেকে শুরু হয়ে নির্দিষ্ট সময় কখনো সাড়ে ৭টা, আবার কখনো ৮টা থেকেই শুরু হয়ে যায় তার জীবনযুদ্ধ। দীর্ঘ সময় কাজ শেষ করে, ওভার টাইমের জন্য কখনো কখনো সুযোগ হয় না সূর্য দেখার, তবুও লক্ষ্য একটাই, দেশের মানুষের জন্য নিজের সবটুকু শ্রম দিয়ে অসুস্থ মানুষের নানা হাসির গল্প তৈরি করা। প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে একজন ফার্মাসিস্টের এমন জীবনের অসংখ্য বাস্তবতা। ওষুধে জীবন দেওয়া ফার্মাসিস্টরা শুধু তৈরি করেই বসে নেই, তারা দূর্গম থেকেও দূর্গম প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছেন ওষুধের সেবা। তবুও তাদের সন্মান পরিপূর্ণতা পায় না। পায় না একজন ফার্মাসিস্ট যথাযথ মূল্যায়ন। তবুও ফার্মাসিস্টরা কখনো থেমে থাকেন না, টানা ২৪-৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করে তারা মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকতে সদা প্রস্তুত।

আজ বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস। ২০১০ সালের এই দিন থেকে ফার্মাসিস্টদের পেশা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে এবং তাদের কাজে উৎসাহ দেওয়ার লক্ষ্যে পালন করা হয় 'ওয়ার্ল্ড ফার্মাসিস্ট ডে'। দেশে-বিদেশে যারা এই পেশায় নিয়োজিত আছেন, তাদের সবার অবদান তুলে ধরতে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি।

তাদের যথাযথ মূল্যায়ন না হলেও তারা সবার কাছেই দোয়া আশীর্বাদ প্রার্থী। জাতির মেরুদণ্ডধারী এই ফার্মাসিস্টদের জন্য নিরন্তর শুভকামনা।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়