ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নীলফামারীবাসীর ভাগ্যোন্নয়নে উত্তরা ইপিজেড

খুরশিদ জামান কাকন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ১৮ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১১:৪৮, ১৮ অক্টোবর ২০২০
নীলফামারীবাসীর ভাগ্যোন্নয়নে উত্তরা ইপিজেড

মঙ্গা কবলিত এলাকা হিসেবে উত্তরবঙ্গ পরিচিত। এরমধ্যে নীলফামারী জেলা অন্যতম। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ একসময় দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করতো। জীবন-জীবিকার তাগিদে এলাকার কর্মক্ষম মানুষের অনেকেই ঢাকামুখী হতো। নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে কেউ কেউ আবার বিদেশেও পাড়ি জমাতো। 

উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী এই জেলাটি দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলিত ছিল। যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। ফলে এই অঞ্চলের অধিবাসীরা এক সময় চরম কষ্টে দিন কাটাতো। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। নীলফামারীবাসীর সুদিন ফিরেছে। আর তা সম্ভব হয়েছে উত্তরা ইপিজেডের কল্যাণে। 

নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নে ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত উত্তরা ইপিজেড পাল্টে দিয়েছে জেলার মানুষের জীবিকার চিত্র। ইপিজেড উত্তরবঙ্গের মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণের কান্ডারী হিসেবে পরিণত হয়েছে। ২১৩ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত উত্তরা ইপিজেডে নীলফামারীর বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। 

ইপিজেডকে ঘিরে জেলা শহরের আশেপাশে গড়ে ওঠেছে দেশি-বিদেশি আরও ২০টি কারখানা। জেলার প্রায় ২৫ হাজার কর্মহীন মানুষের ভাগ্যের চাকা খুলেছে। এরমধ্যে ৬৫ শতাংশই নারী, যা নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে উৎপাদিত পণ্যের মান গুণগত হওয়ার কারণে চাহিদা ব্যাপক। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে উত্তরা ইপিজেডে তৈরিকৃত পণ্যসামগ্রীর বিশাল বাজার রয়েছে। এখানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পরচুলা, বাঁশ-বেত, সানগ্লাস, লেদার ব্যাগ, ওয়ালেট, প্যান্ট, শার্ট, হ্যাঙ্গার, সোয়েটার, কফিন ও খেলনাসহ নানা পণ্যসামগ্রী তৈরি করা হয়।

এই ইপিজেডের বাণিজ্যিক ১৮০টি প্লটের মধ্যে ১৩৮টি প্লট বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) তথ্যানুযায়ী, এই শিল্পাঞ্চলে বছরে ১ স্কয়ার মিটারের জন্য মাত্র ১ ডলার ভাড়া দিতে হয়, যা দেশের অন্যান্য ইপিজেডের তুলনায় অনেক কম।

দেশের একমাত্র কৃষিভিত্তিক উত্তরা ইপিজেড স্থাপনে ব্যয় হয়েছে আনুমানিক ৫৩ কোটি টাকা। এখানকার শ্রমিকদের প্রতি মাসে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা বেতন প্রদান করা হয়। এই ইপিজেড থেকে বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করা হয়। 

উত্তরা ইপিজেড নীলফামারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে। সেইসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অদূর ভবিষ্যতে গ্যাস সরবরাহ ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করা হলে দেশসেরা ইপিজেড হিসেবে উত্তরা ইপিজেড প্রতিষ্ঠিত হতে পারে বলে আশাবাদ নীলফামারীবাসীর। 

নীলফামারী সদরের সংগলশী ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমাদের এই এলাকার মানুষ কয়েক বছর আগেও ছিল মঙ্গায় জর্জরিত। ইপিজেড চালু হওয়ার পর প্রতিটি বাড়ি থেকে এক থেকে তিনজন নারী-পুরুষ এখানে কাজ করছে। যাদের ভাঙ্গাচোরা বাড়ি-ঘর ছিল, তারাই আজ পাকা বাড়ি বানিয়েছেন। এই এলাকায় এখন ক্ষেতে-খামারে কাজ করার মতো শ্রমিক পাওয়া খুব কঠিন।’

নারী শ্রমিক নাজমা বেগম বলেন, ‘আমরা এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ ইপিজেডে কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। এখন আমাদের অনেক উন্নয়ন ঘটেছে। দীর্ঘ দিন দুঃখ দুর্দশায় জর্জরিত থাকার পর এখন আমরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।’

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মারুফ জামান কোয়েল বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইপিজেডে বিনিয়োগ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উত্তরা ইপিজেড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশি-বিদেশি অনেক স্বনামধন্য বিনিয়োগকারী উত্তরা ইপিজেডে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করছেন। তাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে।’

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়