ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

যে লেখায় বন্ধুত্বের আকুতি…

স্বপনীল আকাশ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২১, ১৪ জানুয়ারি ২০২১  
যে লেখায় বন্ধুত্বের আকুতি…

পৃথিবীটা দিন দিন আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিভোর হচ্ছে, আর সঙ্গে বিলুপ্ত হচ্ছে বন্ধুত্বের আবেগভরা অনুভূতি ও আন্তরিকতা। কেন বলছি শোনবেন? কারণ, ডিজিটাল যুগে বন্ধুত্ব হয় ভালো ছাত্রের সঙ্গে ভালো ছাত্রের।

ছোটবেলায় যখন স্কুলে পড়তাম, এক বন্ধু আরেক বন্ধুর জন্য পাগল ছিলাম। মনে হতো বন্ধুই সব। দিন দিন যত বড় হতে চলছি, হারাতে চলেছি আমাদের ভালো বন্ধুদের। ইউনিভার্সিটিতে যেদিন প্রথম ভর্তি হয়েছিলাম, ভেবেছিলাম হয়তো স্কুল কলেজের মতো আন্তরিকতাপূর্ণ বন্ধুত্ব থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ আলাদা। একটা ক্লাসে অনেক ধরনের ছাত্রছাত্রী থাকেন, অনেক সময় দেখে থাকি একজন সিজিপিএ-৪ পাওয়া বন্ধু তুলনামূলক খারাপ রেজাল্ট করা বন্ধুটিকে অপমান করি, যা মোটেও ঠিক নয়।

ইউনিভার্সিটিতে তিন বছর শেষ করলাম, আর মাত্র একবছর বাকি। এমন একটি আর্টিকেল লিখতে হবে কখনো ভাবিনি। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে সবচেয়ে কঠিন ও খারাপ সময় গেছে কোনটা? আমি নির্দ্বিধায় বলবো ইউনিভার্সিটি লাইফ। কারণ, একমাত্র ইউনিভার্সিটি লাইফেই সিজিপিএ/রেজাল্টের ভিত্তিতে বন্ধুদের মধ্যে বিভিন্ন গ্রুপ হয়ে থাকে, এক বন্ধু আরেক বন্ধুর সফলতা নিয়ে হিংসে করে, এমনকি একজন বন্ধু একটা ভালো কাজ করলো, সেটা নিয়েও হিংসে করে। 

এমন অনেকেই আছেন, হয়তো তারা অনেক ভালো শিক্ষার্থী। প্রতি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। জিপিএ-৫ পেলেই কি একজন মানুষ সফল, সিজিপিএ-২ পেয়ে আরেকজন ছাত্র ব্যর্থ? এটা না পেলে জীবনই বিফলে যাবে? 

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সবাই মনে করেন জিপিএ-৫ পেতেই হবে, অন্যথায় সে দেশ ও দশের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। সফলতা অর্জনের জন্য আসলে কি জিপিএ-৫ পাওয়া খুবই প্রয়োজন? পাঠকের কাছে প্রশ্ন। 

ইতিহাসে দেখা যাবে, অধিকাংশ সফল মানুষ জিপিএ-৫ না পেয়েও সফল হয়েছেন। একজন ছাত্রের রেজাল্ট খারাপ/সিজিপিএ কম, এতে সেই ছাত্র ব্যর্থ কিংবা আরেকজনের সিজিপিএ-৫ সে সফল, কখনো বলা সম্ভব নয়। কারণ, জীবনে এখনো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। সবেমাত্র জীবন শুরু।

একটি ক্লাসে অনেক ধরনের শিক্ষার্থী থাকে, কেউ বা পড়াশোনায় ভালো, আবার কেউ বা খেলাধুলা অথবা আরেকজন লেখালেখিতে ভালো। একেকজনের প্রতিভা একেকরকম। সেজন্য আমরা কাউকে ছোট করে দেখতে পারি না কিংবা বলতে পারি না যে, সে তার ক্রিয়েটিভিটি শো-অফ করেন। আপনার যা আছে, তা নিয়ে আপনি শো-অফ করুন। কে কী বললো, কিংবা কে কী ভাবলো, ডোন্ট কেয়ার। পরিশ্রম করে যান সফল হবেন।

যখন লিখছিলাম, তখন কয়েকজন বিখ্যাত সফল ব্যক্তিদের কথা মনে পড়লো, যারা ব্যর্থ হয়েও সফল।

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, যিনি বিদ্রোহী কবি নামে পরিচিত। অথচ তিনি নানা দুঃখ-কষ্ট পেরিয়ে বড় হয়েছেন। শৈশবকাল থেকেই তার দুঃখের শেষ ছিল না। পড়াশোনা তো দূরে থাক, জীবিকার তাগিদে তিনি চায়ের দোকানে এবং রুটির দোকানে কাজ করেছেন। কারণ তার তো পড়াশোনা করার টাকা পয়সা ছিল না। এতে কি সে ব্যর্থ? 

একটা কথা জেনে রাখতে হবে, পরিশ্রম করলে সেটা কখনো বৃথা যায় না, আজ নয় কাল পরিশ্রমের ফল ভোগ করতে পারবে। জিপিএ-৫ কিংবা ভালো রেজাল্ট একটা গ্রেড মাত্র। এটা কখনো সফলতার মাপকাঠি হতে পারে না।

সর্বশেষ বলবো, কে সফল হলো কিংবা কে ব্যর্থ হলো, তার দিকে না তাকিয়ে নিজের কাজ করে যান, সফলতা আপনাকে খুঁজবে। অন্যের সফলতা দেখে হিংসা করবেন না।

হিংসে থেকে দূরে থাকুন। অপরকে সফল হতে উৎসাহ দিন। বন্ধুদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন। বন্ধুত্বের বিশালতা অনেক। ইউনিভার্সিটি লাইফ শেষ হলে হয়তো মিস করবেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

ডিআইইউ/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়